অনুকৃতির কৃতিত্বে স্তম্ভিত দাঁইহাট

অনুকৃতির কৃতিত্বে স্তম্ভিত দাঁইহাট

Thursday May 12, 2016,

2 min Read

দিনে চারবার ইনসুলিনের ছুঁচ ফোটান মেয়েটা। চোখের পাতা বুজে আসে। হাই ব্লাড সুগার। ছোটোবেলা থেকেই। নানান সমস্যা। টাইপ এ জুভেনাইল ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়াই করেই মাধ্যমিকে স্টার পেয়েছেন অনুকৃতি। বর্ধমানের দাঁইহাটের অনুকৃতি দাস। ৬৪১। না! নম্বর দিয়ে তাঁর লড়াইয়ের মার্কস দেওয়া যাবে না। লড়াই আর প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে জীবনের বড় পরীক্ষায় সাফল্য পেয়ে অনুকৃতি কৃতিত্বের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছে।

image


মা বাবাকে নিয়ে ছোট্ট পরিবার। বাবা সৌমেন্দ্র দাসের একটি মুদি দোকান আছে। অনুকৃতির বয়স যখন ২ বছর তখনই প্রথম ধরা পরে শারীরিক অসুবিধে। মেয়ের হাত, পা, মুখ ফুলে যাচ্ছিল দেখে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান সৌমেন্দ্র, মা মৌসুমি। পরীক্ষায় ধরা পড়ে একরত্তি মেয়েটার রক্তে শর্করার পরিমাণ ৪৫০ এর বেশি। প্রথমে কাটোয়া হাসপাতালে, পরে কলকাতার পিজিতে চিকিৎসা হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর ফের দাঁইহাটে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। অনুকৃতির টাইপ এ ডায়াবেটিস। হাইপার গ্লাইসেমিক। কিন্তু অনেক সময় রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়। তখন হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। জ্ঞানও হারিয়ে ফেলেন মাঝে মাঝেই। মেয়েকে চোখে চোখে রাখতে প্রথমে স্কুলে গিয়ে বসে থাকতে হত। এখন অনেকটা স্বাবলম্বী। দাঁইহাটের গার্লস স্কুলের উজ্বল এই নক্ষত্র মেয়েটি। ছোট থেকেই ক্লাসে প্রথম। তাই স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশী, পরিবারের সকলের কাছেই প্রত্যাশা ছিল এবারে ভালো ফল করবেন। সফল হয়ে সকলের আশা পূর্ণ করেছে সে। তার লক্ষ্য ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা।

শরীরের দুর্বলতা হার মেনেছে মনের জোরের কাছে। দৃষ্টিশক্তিও কমে আসছে। দিনের বেশির ভাগ সময় ক্লান্তির কারণে পড়াশোনার সে রকম সময়ও দিতে পারেননি। এই সব প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে মনের জোরে সাফল্য পেয়েছেন। চেন্নাইয়ে ডায়াবেটিস রিসার্চ সেন্টারে চিকিৎসা চলছে। আর্থিক প্রতিবন্ধকতা তছিল পরিবারের। ছোট থেকেই অভাব অনটনের মধ্যে দিন কেটেছে। চিকিৎসার জন্য মাসে খরচই দশ হাজার টাকা। তা জোগাড় করতে হিমসিম খেতে হয়েছে বাবাকে। চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে একসময় প্রচুর ধার হয়েছিল। বছর খানেক হল অনুকৃতির মা একটি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পাওয়ায় কিছুটা হলেও প্রতিবন্ধকতা কেটেছে। তবে তার বেতনের টাকাতেই ধার শোধ করে ওষুধ কেনায় ব্যয় হয়ে যায়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আরও এগিয়ে যাওয়াই তার জীবনের সব চেয়ে বড় লক্ষ্য। লক্ষ্য ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে অনুকৃতি।