দুঃখিত মহাত্মা... আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করুন

(কিছুদিন আগে বিতর্কিত একটি কলাম লিখেছিলেন আশুতোষ। গোটা দেশ তোলপাড় হয়েছিল সেই লেখার জেরে। এবার নিজের উত্তর দিলেন ইওর স্টোরির পাতায়।)

দুঃখিত মহাত্মা... আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করুন

Saturday September 17, 2016,

4 min Read

গত সপ্তাহে আমার একটি কলাম গোটা দেশে ঝড় তুলেছিল। ছোট থেকে বড়, দেশের সবাই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। কেউ বলেছেন আমি বেশ সাহসী আবার কারও মন্তব্য আমি নিছকই একজন বোকা মানুষ। একথাও শোনা গেল আমার রাজনৈতিক কর্মজীবন এবার শেষ। ধিক্কার জানিয়ে আমাকে অনেকে মেল পাঠিয়েছেন। আমার Whatsapp অ্যাকাউন্ট প্রশংসা আর নিন্দা মেশানো রিয়াকশানে ভরা। TV চ্যানেলগুলি অনন্ত তর্ক চালিয়ে গেছিল। নিউজ পেপারে সম্পাদকীয় কলাম লেখা হল। সিনিয়র সাংবাদিকরা লিড আরটিক্যাল লিখলেন। আমি নীরব ছিলাম।

image


আমার কলামটি জাতির জনক মোহনদাস গান্ধীর বিষয়ে ছিলই না। কিন্তু রেফারেন্স দিয়েছিলাম সেই মহান আত্মার কথা টেনে যিনি আমাদের খোলা বাতাসে শ্বাস নেবার শক্তি জুগিয়েছিলেন। তাঁকে সবাই মহাত্মা গান্ধী বলে চেনেন। কিছু সমালোচক মনে করেছিলেন আমি সোজাসাপটাভাবেই মানুষটিকে অপমান করতে চেয়েছি। ভারতের মানুষ গান্ধীজিকে জানবার, চিনবার কিংবা তাঁর সম্বন্ধে বুঝে উঠে তাঁকে নিয়ে দুটো কথা বলবার অনেক আগে দেশের আরেক মহান ছেলে তাঁর সম্বন্ধে বলেছিলেন: " It is one of the privileges of my life that I know Mr. Gandhi personally, and I can tell you that a purer, nobler, a braver and a more exalted spirit has never moved on this earth... He is a man among men, a hero among heroes, a patriot among patriots, and we may well say that in him Indian humanity at the present time has nearly reached its high watermark." মানুষটি আর কেউ নন, দেশের মহৎ সন্তান গোপাল কৃষ্ণ গোখেল।

কিছু মানুষের জন্য আমার কলামটি ধর্মহীন, নিন্দাপূর্ণ। সত্যিই কি তাই? যাক সেকথা নিয়ে না হয় অন্যদিন আলোচনা করব। তবে বলে রাখি জীবনে যদি সত্যিই কোনও মানুষকে কোনও দিন শ্রদ্ধা করে থাকি তিনি মহাত্মা গান্ধী। আমি পূজা অর্চনায় বিশ্বাসী নই। অন্ধ ভক্তও নই। কিন্তু আমি সততার সঙ্গে বিশ্বাস করি যদি কেউ পেরেছিলেন ব্রিটিশশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য গোটা দেশবাসীকে একত্রিত করতে তিনি বাপু। দেশের সংঘবদ্ধ চেতনার মূল ধরে নাড়িয়েছিলেন যিনি, তিনি মহাত্মা গান্ধী। এবং তিনি এই কাজটি অত্যন্ত কেতা বিরুদ্ধ উপায়েই করেছিলেন। যেসময় ইতিহাস আর সংস্কৃতি হিংসার পথ দেখাচ্ছিল বাপু উল্টো রাস্তাটাই বেছে নেন। নিজের জীবন দিয়ে তিনি অহিংসার নীতি প্রচার করে গেছেন। আজীবন অহিংস থেকেছেন।

আজকের প্রজন্ম হয়ত জানেও না একটা সময় গান্ধীজি হিংসার সমর্থক ছিলেন। তিনি নিজে স্বীকার করেছেন: " When I went to England, I was a votary of violence. I had faith in it and none in non-violence." মহান রাশিয়ান লেখক লিও টলস্টয় তাঁর ভাবনার রূপান্তর ঘটান। গান্ধীজি অহিংস হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৪২ সালে লিখেছিলেন- "A mission ... Came to me in 1906, namely, to spread truth and non-violence among mankind in the place of violence, and falsehood in all walks of life."

হিংসা খুব আকর্ষণীয়। হিংসা উত্তেজনাপূর্ণ। এটি মানুষকে সন্মোহিত করে। ইতিহাসের পাতা ভরে আছে নানান হিংসাত্মক বীরগাঁথায়। কিভাবে হিংসা মানবসভ্যতার ইতিহাস লিখেছে সেইসব গল্প সবাই জানেন। ১৯১৭ সালের রাশিয়ান বিপ্লব নবীনতম উদাহরণ। এটা এমন এক সময় যখন গোটা পৃথিবী কুর্ণিশ ঠুকত মার্ক্সসিজম কমিউনিজমকে। মার্ক্সসিজম জন্ম দিয়েছে অনেক অসাধারণ নেতার। সর্বহারাদের সমর্থনে একটি শ্রেণীহীন সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখাতেন মার্ক্সবাদী নেতারা। সমর্থন করতেন হিংসা আর রক্তপাতকেও। ক্যাপিটালিজমের দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে শ্রমিকগণ। লেনিনের নেতৃত্বে জারতন্ত্রের অবসান সেই হিংসার নজির। তবে এই সকল উদাহরণে টলবার মতো সাধারণ মানুষ গান্ধীজি নন।

তিনি আপ্রাণ বিশ্বাস করতেন অহিংসা এবং সত্যাগ্রহই হল সেই আশার আলো যার সাহায্যে ভারতবাসী গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে লড়তে পারবেন। যখন গোটা দেশ মদনলাল ধিংড়ার হাতে Sir Curzon Wyllie-র হত্যার সমর্থন করছিল গান্ধীজি কোমল হননি। তাঁর সাফ কথা: "India can gain nothing for the rule of murderers - no matter whether they are black or white. Under such a rule, India will be utterly ruined and laid waste." তাঁর নাতি রাজমোহন গান্ধী তাঁর বইতে লিখেছেন, "The hatred he (Savarkar) would later reveal for Gandhi was probably engineered in 1909 when Gandhi called those inviting Wyllie's murder guiltier than Dhingra." সাভারকরকে গান্ধীজিকে হত্যা করতে চাওয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অবশ্য উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

লিখেছেন AAP নেতা সাংবাদিক আশুতোষ-অনুবাদ Team YS Bangla

(Disclaimer: The views and opinions expressed in this article are those of the author and do not necessarily reflect the views of YourStory)