দশকর্মার বাজারটাও দরজায় দেওয়ার স্টার্টআপ

দশকর্মার বাজারটাও দরজায় দেওয়ার স্টার্টআপ

Sunday January 21, 2018,

4 min Read

পুজো মানে তো সকালে উঠে চান টান সেরে লাল পাড় সাদা শাড়ির বিলাসিতা। মনের অপবিত্রতা, পাপ আর যা যা ধূসর বস্তু আছে সব দূর করার দায় যেন একা পুণ্ডরীকাক্ষর। কিন্তু সে আপনি ধুতি পরিহিত হোন কিংবা শাড়ি পরিহিতা। আপনার পুজোয় এসব ছাড়াও লাগে পুজোর সামগ্রী। গোবর, গঙ্গাজল, ধূপ ধুনো, তির-কাঠি, পঞ্চরত্ন, পঞ্চশস্য, পঞ্চাঙ্গুরিয় তালিকাটা লম্বা, পুজো পদ্ধতি ভেদে তালিকাটা বড় হতে থাকে। আর মূল্য ধরে পুরোহিত মশাইকে দিয়ে দিলে খরচও বাড়তে থাকে। আপনি অবশ্য দশকর্মা ভাণ্ডারে নিশ্চয়ই যেতে পারেন। পেয়ে যাবেন অনেক কিছুই। কিন্তু ভাবুন আপনি ভিড় ঠেলে বাজারে যাবেন, দোকান ঘুরে ঘুরে দশকর্মার সামগ্রী কিনবেন আদাম কুদাম দিয়ে। নাকি ওই দশকর্মার বাজারটা করবেন অনলাইনে। ভরসা করবেন হোমডেলিভারির ওপর! এখন কিন্তু এটা ভাবার সময় এসেছে। কেননা কোনও টেনশন না নিয়েই আপনি আগে ভাগে অর্ডার দিয়ে দিতে পারেন। PujaSamagri.in এই ই-কমার্স সাইটে। যে পুজো করবেন তার গোটাটাই প্যাকেজ পেয়ে যাবেন। ধরুন সরস্বতী পুজো করতে চান। কিংবা কালীপুজো। গণেশ পুজো। সবার জন্যে আলাদা আলাদা প্যাকেজ। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তৈরি করা টোটাল দশকর্মা। যজ্ঞের কাঠ। গোচনা থেকে শুরু করে চন্দন, এমনকি পুজোর ঠাকুরটা পর্যন্ত পেয়ে যাবেন। বাজারের থেকে সস্তায়। আপনার পুজোর সামগ্রী আসবে আপনার দরজায়। পুরুত মশাইয়ের দেওয়ার আগেই ফর্দ রেডি। একটি ক্লিকে রাতারাতি এই সমাধান।

image


গল্পটা শুরু হয়েছিল বাস্তব সমস্যা থেকেই। বছর তিনেক আগে তখন দিল্লিতে ছিলেন সফটওয়্যার ডেভেলপার শৌর্য বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়িতে হোম যজ্ঞ হবে। হঠাৎ পুরুত মশাইয়ের দাবি বেল কাঠ লাগবে। বেলকাঠ। প্রবাসে, বিভূঁইয়ে টের পেয়েছিলেন বেলকাঠের কী মাহাত্ম। খুঁজতে গিয়ে নাকানি চোবানি অভিজ্ঞতা হয়েছিল শৌর্য আর তাঁর স্ত্রী গার্গীর। ভাষার সমস্যা তো ছিলই, দোকানে গিয়ে কিছুতেই বুঝিয়ে উঠতে পারছিলেন না বেলকাঠ বস্তুটা ঠিক কী।

image


তখন থেকেই আইডিয়াটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। অনলাইনে দশকর্মা স্টোর খুললে কেমন হয়? আমাকে হঠাৎ বললেন গার্গী। ভার্চুয়াল স্টোর। খোঁজখবর নিতে শুরু করলেন ব্যস্ত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী শৌর্য। উইপ্রোর চাকরি ছেড়ে নিজের ব্যবসা করেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। ২০০৬ সালে। হাওড়ার ছেলে। লিলুয়া ডনবস্কোর ছাত্র। শ্রীরামপুরে খোলেন Tenet Systems নামের একটি বিপিও। তার উদ্বোধন করেন তদানীন্তন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী দেবেশ দাস। বছর দুয়েক পর নিজের ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৯ সালে খুলে ফেলেন BanTech Solutions নামের একটি সফ্টঅয়্যার ডেভেলপমেন্টের সংস্থা। পুরোদমে চলছে সেই কর্মকাণ্ড। পাশাপাশি বেড়াতেও ভালোবাসেন। তাই ২০১৬ সাল নাগাদ বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে বেড়াতে যেতে যারা ভালোবাসেন তাদের কাজে লাগতে পারে এমন একটা স্টার্টআপও খোলেন। নাম অতি সরল। গ্রুপ আউটিং। এটা আসলে একধরণের মার্কেট প্লেস। ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সঙ্গে ট্র্যাভেল এজেন্টদের মেল বন্ধন ঘটানোর একটি প্লাটফর্ম। এরই মধ্যে মাথায় জ্বলে উঠেছে অনলাইন পুদর আইডিয়া বাল্‌ব। কতটা পুঁজি লাগবে, কত লোক লাগবে, খানিকটা রিসার্চ করে-টরে ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ভালো সময় দেখে শুরু করে দিলেন পূজা-সামগ্রীর অনলাইন বিপণী

অবশেষে ভার্চুয়াল দশকর্মা ভাণ্ডার এসেই পড়ল। সামনে সরস্বতী পুজো। সে কথা ভেবেই এই সময় শুরু করা pujasamagri.in বলছিলেন শৌর্য বন্দ্যোপাধ্যায়। 

কিন্তু মানুষের চাহিদার যা চাপ তাতে দুদিনেই দিশেহারা অবস্থা। রাতদিন এক করে অর্ডার সাপ্লাই চলছে, বলছিলেন শৌর্য। তিনি যদিও একা নন। কর্মচারী আছেন বেশ কয়েকজন। পাশাপাশি আছেন স্ত্রী গার্গীও। আর দুই বন্ধু সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় এবং সোমনাথ রায়। ডিস্ট্রিবিউশন এবং রিটেল অপারেশনটা ভালোই বোঝেন সোমনাথ। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে। তাই এই ভার্চুয়াল স্টোরের অপারেশনটা দেখবেন তিনিই। সুদীপ্ত দুঁদে ব্যবসায়ী। ফলে বাণিজ্য কী করে বাড়ানো যাবে যাকে বলে স্কেল আপ করা তা সুদীপ্তই মূলত দেখবেন। আর শৌর্য এবং গার্গী গোটাটার ওপর নজর রাখবেন, নীতি নির্ধারণ করবেন। ফলে এভাবেই নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে নিয়েছেন এরা। আপাতত কলকাতায় একদিনের মধ্যেই প্রোডাক্ট ডেলিভারি করা হচ্ছে। একটু একটু করে বিদেশের বাজারেও ঢুকে পড়তে চান বন্দ্যোপাধ্যায় দম্পতি। বিদেশ বিভূঁইয়ে এই ধরণের সামগ্রীর বাজার যে খুব ভালো সেকথা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে জানেন ওরা। ইতিমধ্যেই আমাজনের টাই আপ হওয়ায় পূজা সামগ্রীর অর্ডার আসতে শুরু করেছে অন্য রাজ্য থেকে। অন্য শহর থেকে।

কী থাকছে সরস্বতী পুজোর কিটে! প্রশ্ন করতেই গলগল করে বলে ফেললেন ৪৮ রকম সামগ্রীর নাম। গোচনা থেকে শুরু করে পঞ্চশস্য পর্যন্ত। মাত্র ৫৯৯ টাকায় পাওয়া যাবে এই প্যাকেজ। প্রতিমা বা ঘটের অবশ্য আলাদা দাম। কোশা-কুশি, তামার নারকেল, ধূপদানি এইসবও পাওয়া যাচ্ছে এই অনলাইন বাজারে। ৩০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজারে সবে তো তরী বাওয়া শুরু করলেন শৌর্য। মোহনায় পৌঁছতে এখনও অনেকটা বাকি। অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। সাফল্যের সঙ্গে সেই চ্যালেঞ্জ উতরে দিতেই চাইছেন এই উদ্যোগপতি।