ভাড়ার ই-ভাণ্ডার ভারতে প্রথম অভিজিত-কেতকীর

ভাড়ার ই-ভাণ্ডার ভারতে প্রথম অভিজিত-কেতকীর

Sunday September 27, 2015,

4 min Read

আত্মীয়ের বিয়ে। এবেলা কাঞ্জিভরম, ওবেলা বেনারসী। পরের দিন সালোয়ার কামিজ, লেহেঙ্গা চোলিতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় রূপ বদলে তাক লাগিয়ে দিতে চাইছেন? অসুবিধে নেই। ভাড়া করুন। খরচ কম। রহস্যটা জানবেন শুধু আপনি আর রেন্টশের। আমাদের দেশের প্রথম অনলাইন রেন্টিং সংস্থা।

image


অনলাইনে জিনিসপত্র ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা পশ্চিমের দেশ গুলোয় শুরু হয়েছে কম করে বছর দশ-বারো আগে। তুলনায় আমারা যেন খানিকটা পিছিয়েই আছি। রেন্টশের এর বৃত্তান্তে ঢোকার আগে জানিয়ে দিই, অনলাইনে ভাড়া দেওয়ার ব্যবসাকে অনেকে বলছেন, ‘শেয়ার ইকনমি’। অর্থাৎ, যে ব্যবস্থা চলে ভাগ বাঁটোয়ারা করে। আপনার বুক সেলফে যদি রবীন্দ্র রচনাবলী থাকে, তবে সেটা ভাড়া দিয়ে আপনি যেমন ‘দু পয়সা’ কামিয়ে নিতে পারেন। সেরকম বই কেনার বদলে যদি ভাড়ায় পড়ে নেওয়া যায়, তবে অর্থের সাশ্রয় হয়।

রেন্টিং অনলাইন সংস্থাগুলো হচ্ছে দু-পক্ষকে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ আর বোটসম্যানের মতে, এই ব্যবসার আনুমানিক মূল্য এখনই ২৬০০ কোটি ডলার।

ফিরে আসা যাক রেন্টশের-এর কথায়। সালটা ২০১৪। ক্রিসমাসের হিমেল হাওয়া পিঠে লাগিয়ে অভিজিৎ শাহ এবং কেতকী শাহ নামের বেঙ্গালুরু নিবাসী দম্পতি যখন ভারতে অনলাইন রেন্টিং ব্যবসার গোড়াপত্তন করতে মাঠে নামলেন, সে সময় হাততালির বদলে উড়ে এলে বিদ্রূপ। তেরছা হেসে অনেকেই বললেন ‘ভারতীয়রা ভাড়ায় গাড়ি নেবে, বাড়ি নেবে। কিন্তু জামাকাপড়, কিচেন অ্যাপলায়েন্স? কখনই নয়।’ এক বছর আগের সেই অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে আইটি ইঞ্জিনিয়ার অভিজিতের মুখে হাসি। ‘নিজেরাই গুটি কতক জিনিসপত্র কিনে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এক বছরের মধ্যে শ‌য়ে শয়ে মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাজার-হাজার জিনিস ভাড়ায় তুলেছেন।’

image


শূন্য থেকেই পূর্ণ। এখন রেন্টশের-এর অনলাইন পণ্যসম্ভার উপচে পড়ার অতিক্রম। বইয়ের বিপুল সম্ভার, জামা-কাপড়, কিচেন অ্যাপলায়েন্সেস, বেড়াতে যাওয়ার সরঞ্জাম, খেলনা, আসবাব - আরও কত কী। কেতকীর মতে, ‘কিনতে খরচ বেশি। ভাড়ায় খরচ এবং ঝক্কি অনেক কম। ফলে এ ব্যবসার সুযোগ এবং পরিধি বাড়ছে।’

অভিজিৎ

অভিজিৎ


যে কোনও সফল ব্যবসার পিছনে থাকে সুনির্দিষ্ট কৌশল, বাজার সমীক্ষা। রেন্টশের এর গল্পটা কিন্তু এক্কেবারে আলাদা। অভিজিৎ শাহ এবং কেতকীর পুত্রসন্তান তখন হামাগুড়ি দিয়ে ঘরের এক প্রান্ত থেক অন্য প্রান্তে তোলপাড় করছে। পুত্রের জন্য বেশ কিছু পরিবেশ-বান্ধব খেলনা কিনতে গিয়ে দম্পতির মনে হল, এগুলো ভাড়ায় পেলে বেশ হত। খরচ কমত। সঙ্গে মিলত বদলে নেওয়ার সুযোগ। ছোট্ট সেই ভাবনা ডাল-পালা মেলে পল্লবিত হতে থাকল ধীরে ধীরে। অভিজিতের কথায় ‘আমরা খেলনা ভাড়া করার কথা ভাবছিলাম। সে সময় হয়তো ঠিক একইভাবে কেউ চাইছিলেন ওয়াশিং মেশিন, কেউ বই, কেউ আবার জামাকাপড়।’ সেই থেকেই বেঙ্গালুরুতে জন্ম নিলো রেন্টসের। অভিজিৎ, কেতকী তো ছিলেন, সঙ্গে যোগ দিলেন আরও দু’জন। অনুভা এবং হর্ষ। চার মস্তিষ্ক আর মূলধন মেরেকেটে ২৪ লক্ষ টাকা। এরপর ইতিহাস।

অনুভা এবং কেতকী

অনুভা এবং কেতকী


কথায় বলে, জ্ঞান ভাগ করলে তা কমার বদলে বাড়ে। রেন্টশের বলে, ‘বাট লেঙ্গে হম, আধা আধা’ নীতিতে বিশ্বাস করলে সম্পদ বৃদ্ধি পেতে বাধ্য। সঙ্গে অনাবশ্যক আবর্জনার হাত থেকে রক্ষা পাবে পৃথিবী।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, এক কেজি উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে তৈরি হয় তিন হাজার সাতশো কেজি বর্জ্য। কোন বর্জ্য বছরের পর বছর পড়ে থাকলেও মাটিতে মেশে না। কোনওটা আবার এতই বিষাক্ত যে বিষিয়ে যাচ্ছে মাটি, জল, বাতাস। কেতকী বলেন, নিত্যনতুন জিনিসপত্র না কিনে যদি আমরা একে অন্যের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিই, তবে আবর্জনার ভার খানিকটা হলেও কমবে।

নতুন ব্যবসা। নতুন দর্শন। রেন্টশের যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে আদিম বিনিময় প্রথার আধুনিক সংস্করণ। পণ্যের নাম এবং বিবরণ দেওয়ার জন্য কোনও মূল্য নেয় না রেন্টশের। প্রতি লেনদেনের জন্য তারা নেয় কুড়ি শতাংশ। রেন্টশের কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন কম করে একশো জন ‘ভিজিট’ করেন। বেঙ্গালুরুতে সংস্থার দফতর হলেও, এবার ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা ভাবছেন অভিজিৎ। জানালেন, ‘অচিরেই রেন্টশের পা দিতে চলেছে পুনে, গুরাগাঁও এবং চণ্ডীগড়ে।’

কিন্তু অনলাইন রেন্টিং ব্যবসার ভবিষ্যৎ কতদূর? বেঙ্গালুরুতে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, বছর খানেকের মধ্যে বার্ষিক মুনাফার সম্ভাবনা প্রায় ১৫ কোটি। যদি ব্যবসা আরও দশটা মেট্রো শহরে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে মুনাফার পরিমাণ কুড়ি গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। অভিজিতের আশা, আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে মোটা উৎপাদিত পণ্যের একটা অংশ হয়তো ভাড়া দেবে সংস্থাগুলো। হয়তো অনলাইনে রেন্টিং-এর পরিধি বাড়বে আরও।

ভাবীকালের গর্ভে কী লেখা রয়েছে, তা জানা নেই। তবে ভারতে অনলাইন রেন্টিং ব্যবসার ইতিহাসে ইতিমধ্যেই লেখা হয়ে গিয়েছে রেন্টশের-এর নাম। ভারতে তারাই সর্বপ্রথম। অভিজিতরা দেখিয়ে দিয়েছেন, উদ্ভাবনী শক্তি থাকলে করা যায় অনেক কিছুই।