চিত্তবাবুর ট্যাংরা গ্রামে মৌমাছি বিপ্লব

চিত্তবাবুর ট্যাংরা গ্রামে মৌমাছি বিপ্লব

Wednesday February 24, 2016,

2 min Read

রাজমিস্ত্রীর জোগালির কাজ করতেন। দিন আনি দিন খাই। স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে কষ্টের সংসার ছিল। টাকার অভাবে সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর কথাও ভাবতে পারতেন না। সেই চিত্ত বাছার এখন বনগাঁর ট্যাংরা গ্রামের দিশা হয়ে উঠেছেন। মৌমাছি চাষ করে কীভাবে সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে হয় গোটা গ্রামকে দেখিয়েছেন বছর পঞ্চাশের চিত্তবাবু। তাঁর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ অনেকেই। এই পেশা বেছে নিয়ে স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে উঠে পড়ে লেগেছে গোটা গ্রাম।

পিচ রাস্তার এক পাশে বোরো ধানের বীজতলা। অন্য পাশে হলুদ সর্ষে খেতের হলুদ দিগন্তে মিশেছে। তার সামনেই একফালি জমিতে ঘন সবুজ লম্বু গাছের চারা বসানো। মাঝে মাঝে সারি দিয়ে ফিরোজা-নীল কাঠের বাক্স। ব্যস্তসমস্ত হয়ে সে সবের মাঝখান দিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন মাথায় টোকা ও মুখে নেট ঢাকা অবস্থায় দেখা গেল চিত্তবাবুকে। ১৯৮৪ সাল থেকে এই কাজ করছেন তিনি। প্রকৃতিনির্ভর পেশা। গ্রামে ফুলের অভাব নেই। সারা বছরই বিভিন্ন মরসুমে এই চাষ হয়। উৎপাদনের হার বেশ ভাল। ভাল মধুর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তাই সাফল্য নিশ্চিত’, অভয় চিত্তবাবুর।

image


রাজমিস্ত্রির জোগালি থেকে মৌমাছির চাষ কীভাবে শুরু করলেন? চিত্তবাবু জানান, ‘কোনও দিন কোনও সরকারি প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়নি। সেই সময়ে ধীমান মণ্ডল নামে এক জন গ্রামে মৌমাছির চাষ করতেন। তাঁর কাছ থেকেই শিখেছি। এই মরসুমে ২৩টি বাক্সে চাষ করেছি। প্রতিটি বাক্সেই রয়েছে ‘সুপার’ ও ‘ব্রুট’ নামে দু’টি করে কুঠুরি। প্রতি মাসে ৪ কুইন্টাল চিনি মৌমাছিদের খাওয়ান চিত্তবাবু। মরসুমের শুরুতে বাক্সপিছু ৪০০ টাকা করে খরচ হয়। প্রতিটি বাক্সে ৫টি করে চাক বসিয়ে মরসুমের গোড়ায় চাষ শুরু করতে হয়। বাজারে প্রতিটি চাকের দাম ১৫০-৩০০ টাকা করে’। চিত্তবাবু জানান, পুরোপুরি প্রকৃতি নির্ভর এই চাষ বলে ঝুঁকিও আছে বেশ। বললেন, ‘দিন দিন কৃষিজমি কমছে। গাছপালা ও ফুলও কমে যাচ্ছে। গরমের সময়ে অনেক মৌমাছি চাষিই বাধ্য হচ্ছেন বাক্স নিয়ে সুন্দরবনের দিকে পাড়ি জমাতে’।

চিত্ত বাছার বলেন, ‘গ্রামের মানুষ। চাষের কাজ করতাম। পরে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে সেন্টারিংয়ের কাজও করতাম। কিন্তু কিছুতেই ঠিকমতো সংসার চলত না। তাই এই পেশায় আসা। এখন সংসার তো বটেই, দুই ছেলের পড়াশোনার খরচও চালাতে পারছি’।

image


আর দিন দিন তাঁকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওই পঞ্চায়েত এলাকায় আরও অনেকেই শুরু করেছেন এই চাষ। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ও অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া এ গ্রামের অনেক বাসিন্দাই এভাবে লাভের মুখ দেখছেন। মিন্টু নাথ, সুজন বিশ্বাস, বিনয় দলুইরা জানালেন, ‘আগে জমিতে খেতমজুরের কাজ করতাম। বাচ্চাদের পড়ানো বা সংসার চালানো তাতে কঠিন হয়ে পড়ছিল। চিত্তদাকে দেখেই মৌমাছি চাষ শুরু করি। এখনও কোনও সমস্যায় পড়লে ওঁরই পরামর্শ নিই। আর এ ভাবেই আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল হয়েছি। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বা সংসার চালাতেও অসুবিধে হচ্ছে না। বেশ কিছু টাকাও জমাতে পারছি’।