"ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু..."

"ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু..."

Monday December 14, 2015,

3 min Read

বজরঙ্গী ভাইজান সলমনের দৌলতে BEING HUMAN - শব্দটা আকছার বলি আমরা। মানুষের হৃদয় যে এখনও নির্মল সেটাও টের পাই খবরের কাগজের নানান ভালো খবর পড়ে। কিন্তু কর্নাটকের বেলগাঁওয়ের নিরন্ন দরিদ্র কৃষক যে কাণ্ড করলেন তাতে মুগ্ধ হয়ে গেল গোটা দেশ। ধারে দেনায় ডুবুডুবু ৭৩ বছরের বৃদ্ধ লক্ষ্মণ রুক্‌মান্নে কাতাম্বলে চেন্নাইয়ের বন্যায় দুর্গতদের ত্রাণ তহবিলে দান করতে সটান চলে গেছেন স্থানীয় অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনারের দফতরে। দিয়ে এসেছেন ৫ হাজার টাকা। টাকার পরিমাণটা আপনার কাছে কম মনে হতে পারে। কিন্তু নিরন্ন কৃষকের কাছে এটা মূলধন। চাষের বীজ কেনার টাকা। তার ওপর যখন লক্ষ্মণের নিজের মাথাতেই ২৫ হাজার টাকার ঋণ ঝুলছে সেই সময় এই দানে চমকে গেছে তামিলনাড়ু। বেলগাঁওয়ের কদলি গ্রামের ৭৩ বছরের বৃদ্ধ লক্ষ্মণ মনে করেছেন চেন্নাইয়ের বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে এটাই ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো সঠিক মুহূর্ত।

image


কারও আপদে বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া লক্ষ্মণের দীর্ঘদিনের ব্যামো। ব্যামোই বলাই ভালো কেননা গ্রামে তিন একর চাষ জমি আর নিজের মাথা গোঁজার একটা সামান্য ভিটে ছাড়া কিছু নেই। দিন আনি দিন খাই অবস্থা। কিন্তু মনটা তাঁর চিরকালই কিংসাইজ। অন্যের দরকারে বারবার ঝাঁপিয়ে পড়াটাই তাঁর ইউএসপি। বছর পাঁচেক হল স্ত্রী গত হয়েছেন। তার পর থেকেই যেন আরও বেশি করে সমাজমুখো হয়ে পড়েছেন লক্ষ্মণ। নিঃসন্তান এই দম্পতির জীবনে প্রেমই ছিল একমাত্র আশ্রয়। সেই প্রেম কখনওই মানুষকে বাদ দিয়ে নয়। আশপাশের মানুষের প্রয়োজনে ঝড় জল দিন রাত না মেনে ঝাঁপিয়ে পড়াটাই ছিল তাঁদের স্বভাব। অভাব অনটন একদিকে আর একদিকে তাঁদের সেবক হৃদয়। স্ত্রীর মৃত্যুর পর এই কাজটা আরও বিস্তৃত ভাবে করছেন লক্ষ্মণ। বাড়িয়ে ফেলেছেন তাঁর সেবার পরিধি।

এবছর খরার কারণে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। মাঠেই ফসল ঝলসে গেছে। চাষ-আবাদ হয়নি বললেই চলে। ফলে ধারে টাকা শোধ দিতে পারেন নি। কিন্তু যিনি চাষ করেন তিনি জানেন বন্যা মানে কী ভীষণ ক্ষতি। কত কৃষকের সারা বছরের সম্বল জলে চলে যাওয়া। এই কথাগুলোই তাঁর প্রাণে বেজেছিল। তাই তাঁর নিজের সমস্যা দারিদ্র কোন বাঁধাই আটকে রাখতে পারেনি তাঁকে। তিনি পৌঁছে গেছেন ডেপুটি কমিশনারের অফিসে আর সবাইকে চমকে দিয়ে চেন্নাইয়ের বন্যা দুর্গতদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে এসেছেন।

ভেতর থেকে একটা যন্ত্রণা উপলব্ধি করেছেন লক্ষ্মণ। বলছিলেন যে ওই মানুষগুলো তো তার থেকেও খারাপ অবস্থার মধ্যে দিনযাপন করছেন, তবু তো তার মাথা গোঁজার ঠাঁইটা আছে, কিন্তু ওদের তো সেটাও নেই। তাই ওদের জন্য কিছু করতে চেয়েছেন। তাঁর এই আপাত নিরীহ দানে সমাজের সেই সব স্তরকেও নাড়িয়ে দিয়েছে যেখানে অর্থ বিত্ত বিলাসিতা ঘন হয়ে আছে। এই নিরক্ষর মানুষটাই ভারতের দিকে দিকে তাঁর একটা কাজ দিয়েই গোটা দেশের কাছে আরও মানবিক হওয়ার বার্তাটা পৌঁছে দিয়েছেন আর এখানেই তাঁর সার্থকতা। 

আমরা ইওর স্টোরির পক্ষ থেকে লক্ষ্মণকে জানাই অনেক অভিনন্দন।

অনুবাদ - নভজিত গাঙ্গুলী