অনলাইনে ক্যাব-অ্যাপ, ২০১৬-য় ওলা-উবারের রমরমা

অনলাইনে ক্যাব-অ্যাপ, ২০১৬-য় ওলা-উবারের রমরমা

Thursday December 31, 2015,

4 min Read

image


ওলা, উবার, ট্যাক্সি ফর শিওর--- আজকাল এই শব্দগুলো আর অচেনা নয় আমাদের কাছে। চটজলদি কোথাও পৌঁছতে গিয়ে ট্যাক্সি রিফিউজালের ঝক্কি পোহানো অতীত হতে বসেছে এদেরই সৌজন্যে। কিন্তু বছরের শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি ওদের। ২০১৪-র ডিসেম্বরে দিল্লিতে এক উবার চালকের হাতে এক যাত্রীর ধর্ষণের খবর প্রকাশ্যে আসতে‌ই রে রে রব ওঠে। ২০১২‍-র নির্ভয়াকাণ্ড তখনও সকলের স্মৃতিতে তাজা। এই অবস্থায় চলন্ত গাড়িতে বারবার মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিশেহারা হয়ে যায় সদ্য ক্ষমতায় আসা বিজেপি সরকারও। তড়িঘড়ি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিষেধাজ্ঞা জারি হয় রেডিওট্যাক্সিতে। মাস তিনেকের মধ্যে অবশ্য একটা সমঝোতায় পৌঁছতে সফল হয় অনলাইন ক্যাব পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ফুলেফঁপে ওঠে উবারের ব্যবসা। তাকে ঠেকাতে গ্র্যাবট্যাক্সি, লিফট, দিদি কুয়াইদির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে হাত মেলায় ওলা।

লক্ষ্মীলাভেই সিদ্ধিলাভ

তবে বিনিয়োগের নিরিখে ২০১৫ সালটা কিন্তু ছিল ওলার। সফটব্যাঙ্ক, সিকুইয়া ক্যাপিটাল, ম্যাট্রিক্স পার্টনার্স, অ্যাকসেল, স্ন্যাপডিলের মতো সংস্থা প্রায় ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এই সংস্থায়। পাশাপাশি উবারেও এদের অনেকেরই বিনিয়োগ রয়েছে বলে খবর। অন্যদিকে ম্যাট্রিক্স পার্টনার্স আবার একাধিক ই-কমার্স সংস্থা যেমন চুম্বক, লাইমরোড, হাউসজয়, প্ৰ্যাকটো, কুইকর, টাইনি আউলে অর্থলগ্নি করেছে। অটো এবং ক্যাব পরিষেবা প্রদানকারী জুগনু-তে লগ্নি করেছে পেটিএম।কিন্তু ব্যবসা না বাড়ালে এই বিনিয়োগ যে ধরে রাখা সম্ভব নয় তা বিজনেস-এর রুলবুক থেকেই স্পষ্ট। কিন্তু অতীত ঘটনা আর সরকারি টালবাহানায় সেই কাজ থমকে ছিল। শেষমেশ অক্টোবরে জাতীয় সড়ক ও সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক একগুচ্ছ নির্দেশ মেনে চলার শর্তে ছাড়পত্র দেয় রেডিওট্যাক্সি পরিষেবাকে। যদিও এখনও পুরোপুরি মসৃণ নয় তাদের পথ। নতুন সংস্থাকে বাজারে আসতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে আজও। তবে হাল ছাড়ছে না কেউই।

নতুন ব্যবসা, পুরানো সমস্যা

নতুন বছরে কিন্তু চমক দিয়েছিল ব্লা ব্লা কার। ফরাসি এই সংস্থার আমদানি করা কনসেপ্টটি হল, এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে মনপসন্দ সঙ্গী বেছে নেওয়া। বিষয়টা আর কিছুই নয়, যাওয়ার দিনক্ষণ, সময় দিয়ে ওই সংস্থায় নাম নথিভুক্ত করতে হবে। এরপর ব্লা ব্লা কার –এর নথিভুক্ত গাড়ির মালিকদের মধ্যে যাঁরা ওই শহরে সফর করতে ইচ্ছুক তাঁদের প্রোফাইল থেকে বেছে নিতে হবে সঙ্গীকে।খরচ ভাগ হবে গাড়ির চালক ও যাত্রীর মধ্যে। এই কনসেপ্ট নিয়ে বেঙ্গালুরু আর গুরগাঁওতে ব্যবসায় নামে এএইচএ ট্যাক্সিস ও বাইকট্যাক্সিস। যদিও এখনও তেমন দাগ কাটতে পারেনি তারা।

নিরাপত্তায় নজর

উবার কাণ্ডের পর যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে রেডিওট্যাক্সি। সফরকালে যাত্রীরা কোনওরকম সমস্যার সম্মুখীন হলে ইমার্জেন্সি নম্বরে জানাতে অ্যাপে এসওএস বাটন রেখেছে ওলা, উবার। আরও এক কদম এগিয়ে ক্যাবেই যাত্রীদের জন্য পেপার স্প্রে বা মরিচ স্প্রে-র ব্যবস্থা রেখেছে মেরু। কলকাতা ও পুনে পুলিশের সঙ্গে টাই-আপ করেছে উবার। চালক সঙ্গী হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মীকে নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে তারা। পাশাপাশি চালক নিয়োগের সময়ে থার্ড পার্টি ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক হয়েছে ওলা ও উবারে।

শুধুমাত্র মহিলাদের পরিষেবা দিতে মেরু এনেছে মেরু ইভ। অতিরিক্ত কড়ি গুনলে মেরু জিনি ও মেরু প্লাস-এর মতো সুরক্ষিত সফর আসবে আপনার হাতের মুঠোয়। চলতি মাসেই দিল্লিতে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য চালু হয় জিপগো বলে শাটল পরিষেবা, ‌যদিও সেটি এখনও তেমন ছাপ ফেলতে পারেনি। আশার খবর এটাই যে চলতি বছরে রেডিও ক্যাবে তেমন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা আর ঘটেনি।


image


অনুসারী ব্যবসারও পথ প্রশস্ত

রেডিওট্যাক্সিকে কেন্দ্র করে গজিয়ে উঠেছে আরও বেশ কয়েকটি অনলাইন পরিষেবা। ক্যাব বুকিংয়ের জন্য ইক্সিগো এমনই একটি অ্যাপ। এছাড়া নিকি, লোকো ক্যাবস অ্যাপস এক ছাতার তলায় নিয়ে এসেছে ওলা, উবার, ট্যাক্সি ফর শিওরকে। একইভাবে জনপ্রিয় হয়েছে ক্যাবসগুরু, মাইস্মার্টপ্রাইজের মতো অ্যাপলিকেশন। গত সেপ্টেম্বরে মুম্বইতে শাটল পরিষেবা চালু করেছে লিফটও অ্যাপ। এর মাধ্যমে ট্যাক্সি আর অটোরিক্সা অনায়াসে শেয়ার করে পয়সা বাচাচ্ছে আমচি মুম্বই।

শুধু ট্যাক্সি পরিষেবাই নয়, অনলাইন গ্রসারি সাইট যেভাবে চাল, ডাল, তেল, নুনকে গৃহস্থের দোরগোড়ায় এনে দিয়েছে তাতে মাউজের এক ক্লিকেই মাসকাবারি হয়ে ‌যাচ্ছে মধ্যবিত্তের। যেমন ওলা এনেছে ওলা কাফে, ওলা স্টোর। তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অন্ত্রেপ্রেনিওরশিপ প্রোগ্রাম স্পনসর করছে ওলা, উবার। মেরুর দেখাদেখি উবারও ক্যাশলেস পেমেন্ট বিকল্পের দিকে ঝুঁকেছে।

২০১৬-এ কী আছে কপালে

কেন্দ্র নিয়মাবলি জারি করে রাজ্যগুলিকে রেডিওট্যাক্সির ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণের স্বাধীনতা দিয়েছে। এর ফলে গোটা প্রক্রিয়ায় এসেছে স্বচ্ছতাও। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে ওলা, উবারের মতো সংস্থা। তবে এখনও বেশ কিছু সমস্যা নিত্যদিনের সঙ্গী তাদের। যেমন চালকদের বেতনবৃদ্ধির দাবি, ট্যাক্সি ইউনিয়নের গাজোয়ারি ইত্যাদি।

অনলাইন ক্যাব পরিষেবার ভবিষ্যত যে উজ্জ্বল তাতে কোনও ভুল নেই। ভারতের ১৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজার ‌যে অদূর ভবিষ্যতে আরও নতুন খেলোয়াড়দের বাজারে এনে বিনিয়োগ টানবে তার প্রমাণ ২০১৫-য় ওলার ব্যালান্স শিট। আমেরিকা আর ইউরোপীয় বাজারকে অনুসরণ করতে পারলে পুলকার আর শাটলের ব্যবসাও চলবে রমরমিয়ে। বার্ষিক বৃদ্ধির হার বা সিএজিআর-র নিরিখে ২০২০ সালের মধ্যে ১৭ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাবে ভারতের রেডিওট্যাক্সির বাজার। পাল্লা দিয়ে বাড়বে বাস শাটলের বাজারও। ২০২০ সালের মধ্যে সেটির সিএজিআর দাঁড়াবে ৯.৩৬ শতাংশ। দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়ছে এই অ্যাপ নির্ভর পরিষেবার। অচিরেই আরামদায়ক জনপরিবহণ ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে চলে আসবে বলে আশাবাদী যাত্রীরা।

লেখক অথিরা এ নায়ার

অনুবাদ শিল্পী চক্রবর্তী