আরফা পারেননি, সাক্ষী পেরে দেখিয়ে দিলেন

আরফা পারেননি, সাক্ষী পেরে দেখিয়ে দিলেন

Thursday August 18, 2016,

3 min Read

সুলতান ফিল্মের নায়িকা আরফা পারেননি। প্রেমের কাছে স্বাভাবিক নারীত্বের দাবির কাছে আরফা পিছিয়ে এসেছেন। সেও হরিয়ানার মেয়ে। সেও আশৈশব স্বপ্ন দেখত অলিম্পিকে মেডেল আনবেন। কুস্তিতে। ভারতীয় নারীত্বের সেই ফিল্মি অপারগতাকে বাস্তবে হারিয়ে দিলেন হরিয়ানারই আরেক মেয়ে সাক্ষী মালিক। দীর্ঘ বারো বছরের তপস্যার ফল পেল মেয়েটি। তিরঙ্গা জড়িয়ে গলায় সম্মানের পদক ঝুলিয়ে, আনন্দে কেঁদেই ফেললেন। গোটা পৃথিবী সাক্ষী থাকল ভরতীয় নারীদের তাকতের আর মনোবলের। প্রথম ধাপে ০-৫ এ পিছিয়ে পরেও, ঘুরে দাঁড়ালেন ফাইনালি। রিও অলিম্পিকে দীপা কর্মকারের দুর্ধর্ষ প্রদুনোভা ভল্টের ভেল্কিও দেশকে মেডেল জেতাতে পারেনি। দারুণ পারফর্ম করেছেন। তবু পয়েন্টের বিচারে একটুর জন্য পিছিয়ে গিয়েছিলেন দীপা। আমরা সবাই গর্বিতই ছিলাম দীপাকে নিয়ে। পাশাপাশি বেদনাও ছিল। সাক্ষীর সাফল্য সেই কাটা ঘায়ে মলম দিল। মহিলা কুস্তিতে দেশের হয়ে ব্রোঞ্জ পদক আনলেন কুস্তিগীর মেয়ে। 

ইতিহাস গড়লেন সাক্ষী। দেশের প্রথম মহিলা কুস্তিগীর যিনি অলিম্পিকে মেডেল পেলেন। শুধু তাই নয়। ভারতের তিনি চতুর্থ মহিলা খেলোয়াড় যিনি অলিম্পিকের পডিয়ামে পা রাখলেন। দুচোখ বেয়ে নেমে আসছিল জলের ধারা। " আমার বারো বছরের রাতদিনের তপস্যার ফল এই মেডেল ", বলেন তিনি। এর আগে লন্ডনে, তাঁর সিনিওর গীতা ফাইনালে কোয়ালিফাই করেছিলেন। সাক্ষী কোনওদিন ভাবতেই পারেননি দেশের প্রথম মহিলা কুস্তিগীর হিসেবে তাঁর ঝোলায় আসবে অলিম্পিক পদক। তিনি প্রার্থনা করেন দেশের বাকী খেলোয়াড়রাও যেন ভালো খেলতে পারেন।

হরিয়ানার তেইশ বছরের সাক্ষী মালিকের রক্তে মিশে আছে ভারতের মাটি। ২০১৪ তে Glasgow Commonwealth Games-এ রূপোর পদক এবং ওই বছরেই Incheon Asian Games -এ ব্রোঞ্জ পান তিনি।

রিওতে নাটকীয়ভাবে জিতেছেন। নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল সাক্ষীর। তিনি জানতেন জয় তাঁরই হবে। শেষ ডু অর ডাই রাউন্ডে ছয় মিনিট টিকে যেতে পারলেই বাজী পাল্টে দেবেন তিনি। হল ও তাই। খেলার শেষে জান লড়িয়ে দেন তিনি। ম্যাচের বেশিরভাগটাই যেখানে ছিল প্রতিদ্বন্দীর দখলে সেখানে ৮-৫-এ পিছিয়ে থেকেও শেষ ধাপে কিরজিস্তানের আইসুলু টাইনিবেকোভাকে হারান সাক্ষী। আনন্দে আপ্লুত WFI এর প্রেসিডেন্ট ব্রিজ ভূষণ সাক্ষীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন মহিলা বিভাগে এই প্রথম পদক পেল দেশ।

সাক্ষী কোয়াটার ফাইনালে খেলার পঞ্চম ধাপে ২-৯-এ হেরে যান রাশিয়ার ভ্যালেরিয়া কোবলোভার কাছে। দ্বিতীয় সুযোগ আসে তাঁর যখন কোবলোভা ফাইনালে পৌঁছান। দু-তিন ঘন্টার শ্বাসরোধ করা অপেক্ষার পর সাফল্য আসে, জানান সাক্ষী। দেশবাসীকে ধন্যবাদ দিয়ে দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন তিনি।

সাক্ষী ওইদিনের খেলায় প্রথমের তিন চারটে রফায় পিছিয়ে ছিলেন। পেছন থেকে এগিয়ে এসে সবচেয়ে কঠিন শেষ রফা জেতেন তিনি। টাইনিবেকোভা সাক্ষীর জয়সূচক মারপ্যাঁচ যা তাঁকে দুই পয়েন্টে জিতিয়েছিল সেটিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। রিভিউয়ের পর বিচারকরা আরও এক্সট্রা এক পয়েন্ট দেন সাক্ষীকে।

সাক্ষীর আগে ওয়েটলিফ্টার কারনাম মালয়েশ্বরী (২০০০, সিডনি ), বক্সার মেরি কম্ ( ২০১২, লন্ডন ) এবং সাটলার সায়না নেহাল ( ২০১২, লন্ডন ) অলিম্পিক পদক জিতেছেন। কুস্তিতে ভারতের এটি পঞ্চম পদক। এর আগে ২০১২-র লন্ডন অলিম্পিকে সুশীল কুমার রূপো জিতেছিলেন। সমাজের সব সমস্যা আর লিঙ্গ বৈশম্যের বাধা টপকে মাত্র নয় বছর থেকে কুস্তি লড়ছেন সাক্ষী। এবছর ইস্তামবুলের World Qualifying Tournament-এ অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পান সাক্ষী মালিক।