চাকরি পাওয়ার যুদ্ধটা সোজা করে দিচ্ছে Beatest

চাকরি পাওয়ার যুদ্ধটা সোজা করে দিচ্ছে Beatest

Wednesday December 06, 2017,

4 min Read

প্রতিযোগিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে সবাই তৎপর। উঠে পড়ে লেগেছেন পরীক্ষার্থীরা। নিজেই নিজের কষ্টিপাথরে নীরবে নিজেকে পরখ করে নেওয়ার সুযোগ খুঁজছেন। আর এই সুযোগ এনে দিয়েছে সায়ন্তন চ্যাটার্জির স্টার্টআপ বিটেস্ট। 
image


উত্তরপাড়ার ছেলে সায়ন্তন এই স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা। ওরাকলের দামী চাকরি ছেড়ে স্টার্টআপ খুলেছেন। প্রথম প্রজন্মের উদ্যোগপতি। বাঙালির ব্যবসা হয় না এমন সব ক্লিশে আইডিয়াকে মিথ্যে করে ছোটবেলা থেকেই উদ্যোগমুখী সায়ন্তন। বিজ্ঞানের ছাত্র। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন। পরে এমবিএ তে ভর্তি হন। সৃজনশীলতা বলতে যা বোঝায় তা ওঁর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিল। নতুন কিছু আবিষ্কারে আনন্দ পেতেন, ছোটবেলা থেকেই। উত্তরপাড়ার এই পড়ুয়া ছেলেটা এলাকায় এবং বন্ধু মহলে শান্ত, স্নিগ্ধ, সহযোগিতা পরায়ণ বলে পরিচিত। ও সব সময় চেষ্টা করেছেন অপরের সুবিধে দেখার। আর এসব করতে করতেই স্টার্টআপ আইডিয়া বাল্‌ব জ্বলে উঠেছে। 

কাজের সূত্রে কিছুদিন বেঙ্গালুরুতে কাটিয়েছেন। সেখানকার স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে লেগে আছেন নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসব ওকে অনুপ্রাণিত করে। উদ্যোগপতি হওয়ার সেই বিখ্যাত পোকাটা যখন কামড়ায় তখন ও এমবিএর জন্যে তৈরি হচ্ছেন। কমন অ্যাডমিশন টেস্টের প্রস্তুতি যারা নিয়েছেন তারা জানেন কতটা নির্ভুল হতে হয় এই পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্যে। ব়্যাঙ্কিং ভালো না থাকলে ভালো ইন্সটিটিউশনে ভর্তি হওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। আর তার পাশাপাশি প্রস্তুতির নিজস্ব স্ট্র্যাটেজিও তৈরি করতে হয়। কারণ সিলেবাস বলতে যা বোঝায় তা আসলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিশাল সমুদ্র। এখান থেকে প্রয়োজনীয় মণি মুক্ত আহরণ না করে আনতে পারলে পরীক্ষার তরী তীরে এসেও ডুবে যেতে পারে। এসব খুব কাছ থেকে অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছেন সায়ন্তন। এক দুই করে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করেছেন। এবং সেই সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে উঁকি দিয়েছে তার স্টার্টআপের আইডিয়া।

Beatest আসলে একটি অনলাইন এডটেক স্টার্টআপ। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক এবং চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করে beatest.in। ওরা নানান বিষয়ে পরীক্ষার মডিউল পরীক্ষার্থীদের দিয়ে থাকে। এবং লাগাতার মক টেস্টের বন্দোবস্ত করে। সবটাই অনলাইনে। কোথাও গিয়ে এই সব পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন পরে না। হাতে নাতে ফল। আপনি নিজেই দেখে নিতে পারেন আপনার কোন বিষয়ে কতটা দক্ষতা রয়েছে। কোথায় পিছিয়ে আছেন। এবং কীভাবে এগোবেন। Beatest -এ আইআইটি এবং এনআইটির কৃতীছাত্ররা পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়ার স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে দিয়েছেন। এই এডটেক সলিউশনের মারফত কলেজের ভিতরের প্রতিযোগিতাতেও আপনি ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন সেটা দেখে নেওয়ার সুযোগ থাকছে ফলে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামর্থ্য সম্পর্কেও একটা ধারণা তৈরি করতে পারবেন আপনি। পরীক্ষার্থীদের জন্যে প্রস্তুতির এক্সক্লুসিভ প্যাকেজ তৈরি করেন সায়ন্তন। সম্পূর্ণটাই ইন্টাব়্যাক্টিভ মডিউল। যার যা দরকার তেমনটাই তাঁর ক্লায়েন্টরা পেতে পারেন।

প্রথম দিকে সঙ্গে পেয়েছিলেন তিন বন্ধুকে। কিন্তু যত দিন গড়ায় দেখা গেল বিজনেস প্ল্যানটা বাস্তবিক ক্ষেত্রে সেভাবে ক্লিক করছে না। প্রতিযোগীও আছে বেশ কয়েকটা। ছোট পুকুরে হাতড়ে বিশেষ লাভ নেই টের পাচ্ছিলেন সায়ন্তন। যে সব বন্ধুরা এগিয়ে এসেছিলেন তাদের উৎসাহেও ভাঁটা পড়ল। একা হয়ে গেলেন উত্তর পাড়ার তুখোড় এই উদ্যোগপতি। 

সমস্যাকে সুযোগে বদলে দিতে পারার ক্ষমতা সচরাচর থাকে উদ্যোগপতিদের। সেভাবেই নিজের প্ল্যানকে নিজেই ভাঙলেন। যোগ করলেন নতুন নতুন পরিষেবা। পিছনে ফিরে এলেন না। ততদিনে আই আই এম কজিকোড়ের পড়া ছেড়ে দিয়েছেন। পুরো সময় নিয়োগ করেছেন তাঁর স্টার্টআপ Beatest-এ। 

দেখেছেন চাকরি পাওয়ার পরীক্ষা গুলির ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীরা মন দিয়ে প্রস্তুতি নেন ঠিকই কিন্তু সাফল্যের হার কম। সেই ক্ষেত্রে ওদের স্ট্র্যাটেজি মডিউল সাহায্য করতে পারে। সেই থেকে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়ায় ওর বি প্ল্যান। শুরু হয় প্লেসমেন্ট অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট-এর নানান প্যাকেজ। সায়ন্তন বলছিলেন, তিনি চান কলেজ থেকে বের হওয়া সব ছাত্রই যেন কীভাবে কোম্পানিগুলির কাছে অ্যাপ্রোচ করতে হয় তা জেনে যায়। সকলেই যেন চাকরি নিশ্চিত করতে পারে। কলেজের দায় শিক্ষিত করে তোলায় শেষ হয়ে গেলেও সায়ন্তন সেই সব ছাত্রদের চাকুরীযোগ্য করে তোলার কাজটা করেন। ফলে কলেজের পঠন পাঠনের সমান্তরালে চলে সায়ন্তনের বিটেস্ট মারফত প্রস্তুতি পর্ব। তিনি যে নিরঙ্কুশ নন সেটা খুব ভালো করেই জানেন এই উদ্যোগপতি। কিন্তু প্রতিযোগী হিসেবে যে সব অনলাইন পরিষেবা সংস্থাগুলি আছে তাদের দৌড়ও তার জানা আছে। ওই সব সংস্থার কাছ থেকে প্রস্তুতির পরিষেবা যারা নিয়ে থাকেন তারা আদৌ ভালো চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ড পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন না। এখানেই এগিয়ে থাকছেন সায়ন্তন এবং তাঁর স্টার্টআপ বিটেস্ট। আর তাই মাত্র দু মাসেই এনআইটি, আইআইটি এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডি ইউ কলেজ গুলিতে রমরম করে চলছে বিটেস্ট

অল্পদিনেই নজর কেড়েছে সায়ন্তনের স্টার্টআপ। ন্যাসকমের ইনকিউবেশন পাচ্ছে Beatest, পূর্বাঞ্চলের সেরা তিরিশটি স্টার্টআপের অন্যতম হিসেবে থ্রাইভ থার্টি সম্মান পেয়েছে। সায়ন্তনও খুঁজে পেয়েছেন তাঁর জেদ আর অধ্যবসায়ের স্বীকৃতি। আইআইটি খড়গপুরে গ্লোবাল আন্ত্রেপ্রেনিওরশিপ সামিটে অতিথি বক্তা হিসেবে ডাক পেয়েছেন তরুণ এই উদ্যোগপতি। নিজের উদ্যোগের কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। সাড়াও পেয়েছেন অনেক। এখন সায়ন্তনের সামনে বিস্তৃত হওয়ার লড়াই। আরও কলেজে আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছনর লড়াই। সায়ন্তন যত এগোবেন ততই হারতে হারতে বাজি জিতে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস পাবে কলকাতার স্টার্টআপ সংস্থাগুলি।