বিশেষ শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোই জ্যোতির লক্ষ্য

বিশেষ শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোই জ্যোতির লক্ষ্য

Monday November 16, 2015,

4 min Read

শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য ‌যদি আপনি ই-কমার্স সাইটে বই খুঁজতে ‌যান তবে কী ধরনের বই পান! শিশুদের কীভাবে দেখাশোনা করা ‌যায় কিংবা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কী করে তাদের চাহিদা পূরণ করা ‌যায় বেশিরভাগ সময় সেই বইগুলিই পাবেন আপনি। বড়জোর এই বিশেষ শিশুর জন্য লেখা গল্পের বইয়ের সন্ধান পেতে পারেন। কিন্তু কখনও কি চোখে পড়েছে জ্যোতি মাথুরের লেখা মাই কুকিং রেসিপি বুক ফর স্পেশাল চিলড্রেন ?

image


নাম থেকেই স্পষ্ট। এটা একটি এমন বই ‌যা বিশেষ শিশুদের জন্য লেখা। এর মধ্যে এমন সব খাবারের রেসিপি আছে ‌যা তৈরি করতে স্টোভ বা বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না। বরং কারও সাহায্য নিয়ে বা নিজেই কিছু উপকরণ দিয়ে শিশুরা এইসমস্ত রেসিপি তৈরি করতে পারে। আর পাশাপাশি বাড়ে আত্মবিশ্বাস।

জ্যোতি মাথুর একজন মা, লেখিকা, রেস্তরাঁর মালিক। তাঁর জীবন কাহিনীই তাঁর প্রাপ্তির কথা বলে।

কেন হঠাৎ বিশেষ শিশুদের কথা ভাবেন জ্যোতি ?

কারণ তিনিও একজন বিশেষ শিশুর মা। জ্যোতি একদিন অনুভব করলেন তাঁর মেয়ের রান্নায় খুব উৎসাহ। মেয়ের উপযোগী রান্নার বই খুঁজতে গিয়ে তিনি হতাশ হলেন। এমন একটিও বইয়ের সন্ধান পেলেন না। এরপরই বই লেখার ভাবনা আসে তাঁর মাথায়, শুধু নিজের মেয়ের জন্য নয়, তাঁর মেয়ের মতো বিশেষ শিশুদের জন্য, স্বতন্ত্র রা্ন্নাবান্নার বই। সেই শুরু। 

জ্যোতি বইটি অমর জ্যোতি, গ্রিন ফিল্ডস (বিশেষ বিভাগ)-র মতো বিশেষ স্কুলগুলিতে পাঠিয়েছিলেন। বইটিতে শিশু ও তাদের অভিভাবকরাও উৎসাহ দেখিয়েছিলেন।

মা হিসেবে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশেষ করে ‌যখন তাঁর মেয়ে ছোট ছিল। ধীরে ধীরে প্রতিকূলতা কেটে গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। জ্যোতি বলেন, "আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু মেয়ের মনোবল ভাঙতে দিইনি। আশ্চর্য রকম ভাবে আমার মনোবলও বেড়েছে।"

ফ্লিক এ ডিশ

জ্যোতির আরেকটি প্রজেক্ট হল ফ্লিক এ ডিশ, ক্যাফে এবং টেক অ্যাওয়ে রেস্তরাঁ ২০১৫ সালের মার্চে দিল্লির লাজপত নগরে তিনি শুরু করেন। সেখানে প্রিয় মেনুর অন্যতম হল নানি কে আলু, দাদি কি চা-এ।

মাথুরদের পারিবারিক রেসিপি ‌যা উত্তরাধিকার সূত্রে আমাদের হাতে এসেছে সেগুলিকে নিয়েই টেক অ্যাওয়ে জয়েন্ট তৈরির ভাবনা থেকে এর জন্ম।মাথুর পরিবারে জন্ম ও বিযের সূত্রে প্রথা মেনে এই রেসিপি আমার মেয়েদের কাছে পৌঁছে ‌যাবে।

ক্যাফের লাল উজ্জ্বল দেওয়ালগুলি একটা উষ্ণতার অনুভূতি দেয়। পারিবারিক ছবির সঙ্গে দেওয়ালে টাঙানো কিছু সাধারণ মানের সামগ্রী, কফি টেবল বই, পুরানো টেবিল কভার, আগের আমলের চায়ের কেটলি এর শোভা আরও বাড়িয়েছ।কিন্তু এই রেস্তরাঁর ইউএসপি হল শেফের হাতে তৈরি বিশেষ মশলা।

বাহান্ন বছরের জ্যোতির কথায়, আমার স্বামী এসব করতে আমায় উৎসাহিত করেছেন। আমার মেয়েরা বড় হয়ে গিয়েছিল, আমাকে তাদের পিছনেও বেশি সময় দিতে হত না তাই আমি এই কাজ শুরু করি। এই দীর্ঘ পথে আমি অনেক কিছু শিখেছি। ধীরে ধীরে গতি এসেছে আমার ব্যবসায়। কিন্তু গ্রাহকদের থেকে যে উৎসাহ পেয়েছি, সেটাই মূল উজ্জীবিত করেছে। প্রত্যেক দিনের নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন কিছু শেখা ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্কস্থাপনে সাহায্য করেছে।

জ্যোতি ও তাঁর পরিবার কঠোর পরিশ্রম করছে, তাঁর স্বামী আর মেয়েরাও সাহায্য করছেন।এটা খুব সহজ নয়, কিন্তু আমরা স্বপ্নপূরণে বিশ্বাসী, বললেন জ্যোতি।

বড় হয়ে ওঠা

দিল্লিতে জন্ম, বিদেশে বড় হওয়া, জ্যোতি জানালেন তাঁর ছোটবেলা ছিল খুব রোমাঞ্চকর। বাবা এয়ার ইন্ডিয়ায় কাজ করার সুবাদে প্রচুর ঘোরাঘুরি হত। তিনি বলেন, আমি রাজকুমারীর মতো বড় হয়েছি, বিভিন্ন দেশ ঘুরেছি, নতুন নতুন সংস্কৃতি ভাষা শিখেছি।

তাঁর বাবা ‌যখন ভারতে বদলি হয়ে আসেন তখন জ্যোতি সিদ্ধান্ত নেন কলা এবং ভাষার প্রতি তাঁর ভালবাসাকে অগ্রাধিকার দেবেন। ফ্রেঞ্চ শিখলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শীর্ষস্থান দখল করলেন।

এরপরই তাঁর বিয়ে হয় এবং ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। যখন তাঁর দ্বিতীয় সন্তান বিশেষ চাহিদা নিয়ে জন্মাল তখন পরিবারই তাঁর কাছে অগ্রাধিকার পেল এবং সংসারই তাঁর ধ্যানজ্ঞান হয়ে গেল।

প্রতিকূলতা এবং উপলব্ধি

জ্যোতির সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল একজন স্বাভাবিক গতির গতানুগতিক জীবন থেকে বাড়ি ও ক্যাফে দু জায়গার চাহিদাপূরণে উত্তরন। কিন্তু এই ভূমিকাটিও সহজেই রপ্ত করে নেন জ্যোতি।

জ্যোতি বলেন, জীবনে ‌‌যে যে সাফল্য বা স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন তার মধ্যে সবথেকে বড় শিক্ষা হল ক্রমাগত আত্মদর্শনের মাধ্যমে আরও ভাল মানুষ হয়ে ওঠা, এভাবে মানুষের সঙ্গে সং‌যোগ বাড়ানো যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যাফেতে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি শিশুদের রান্নাবান্নার প্রশিক্ষণ দিতে ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা করছেন তিনি যাতে সহজে রেসিপি তৈরির প্রশিক্ষণ পায় ওই প্রতিবন্ধী শিশুরা। নতুন এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আশাবাদী জ্যোতি বললেন, এরকমই একটা কিছু করার চিন্তাভাবনায় আছি, দেখা যাক তা কতটা সফল হয়।