কেউ কথা রাখেনি সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল অনেকবার। ৪০ বছর ধরে শুধু প্রতিশ্রুতির ওপরই ভরসা করে থাকতে হয়েছে গরিব মানুষগুলিকে। কিন্তু আর কত দিন? দমে যাননি গ্রামের মানুষগুলি, নিজেদের উদ্যোগেই তৈরি করেছেন বিশাল সেতু। এতে কমে গিয়েছে ৪০ কিলোমিটার যাতায়াতের কষ্ট। সেতু তৈরি করে যদিও চুপ করে থাকেননি ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। ভিআইপি এবং সরকারি ব্যক্তিত্বদের যাতায়াতের জন্য বন্ধ এই সেতু।
আলেখা এবং পানিহারি হরিয়ানার সিরসা জেলার দুটি গ্রাম। সিরসা শহরে যেতে দুই গ্রামের লোকদের যাতায়াতে দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। রুজি রোজগার নিত্য কেনা-বেচার তাগিদে শহরে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ছিল এই পথ। বারবার সরকারের কাছে এর জন্য আবেদন জানিয়েছেন গ্রামের মাথারা। কাজ তো হয়ই নি, শুধুই জুটেছে প্রতিশ্রুতি। ৪০ বছর ধরে মসনদে আয়া-রাম আর গয়া-রামদের আসা যাওয়ার পালা দেখেছে এই দুটি গ্রাম। যারাই সরকার গড়েছে, তারাই এসে নানান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এনডিটিভি'র কাছে সেতু তৈরি কমিটির সেক্রেটারি মেজর সিং জানিয়েছেন, মসনদে বারবার সরকার বদল হয়েছে। বদলের সঙ্গে সঙ্গে কথা দেওয়া-নেওয়ার নাটকও হয়েছে অনেক। কিন্তু কোনও কাজের কাজ হয়নি, কোনও রকম সাহায্য করা হয়নি। কংগ্রেস, বিজেপি, আইএনএলডি'র মন্ত্রী, সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী, নেতা- কারও কাছে আবেদন করতে বাকি রাখেননি এই গ্রামবাসীরা।প্রতিশ্রুতি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাঁদের।
৪০ বছরের অপেক্ষার পর যে সেতুটি তৈরি হয়েছে, তা ১ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষের জীবনটাকে করে তুলেছে অনেক সহজ। বিশেষ করে চাষিদের জন্য। ঘাঘর নদীর ওপর তৈরি এই সেতু ২১৪ ফুট লম্বা, ১৬ ফুট চওড়া। ভারতের প্রথম সাধারণের দ্বারা তৈরি সেতু। এটি তৈরির জন্য ১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। পানিহারি গ্রামের হরদেভ সিং জানিয়েছেন, এই সেতু কোনও নেতা-নেত্রীকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। শুধু তাই নয়, সেতুটির উদ্বোধনে কোনও ভিআইপি'কে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। হরদেভের দাবী কোনও ভিআইপি'র থেকে যে শ্রমিক ৫০০ টাকা দিয়েছেন, কিংবা যে বিধবা ১০০০ টাকা দিয়েছেন, তাঁরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা সাধারণ মানুষের, মানুষের দ্বারা এবং মানুষের জন্য তৈরি সেতু।
(আর্টিকেলটি- থিংক চেঞ্জ ইণ্ডিয়া থেকে সংগৃহীত)
অনুলেখক-চন্দ্রশেখর চ্যাটার্জী