শিক্ষার বৈষম্য দূর করতে ভারত জোড়া উদ্যোগ নিয়েছে I&We। সময়োপযোগী শিক্ষা না পেলে কোনও জাতিই যে তাঁর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না সে কথা টের পেয়েছিলেন ২৪ বছরের যুবক আকিব হোসেন। এইটুকু বয়সেই গোটা দেশকে এখন দিশা দেখাচ্ছেন কলকাতার এই উদ্যোগপতি। নিজে পড়াশুনোয় ছোটবেলা থেকেই অসাধারণ। বাবা বিহারের মানুষ মা মালদহের। ফলে ও বাংলার এবং বিহারের মানুষ।
প্রাণবন্ত যুবকটি বলছিলেন, ও আসলে এই ভারতের। যে দেশে শিক্ষা এখনও সমানাধিকারের বিষয় নয়। যে দেশে এখনও সময়োপযোগী নয় উচ্চশিক্ষাও, সেই দেশের মানুষ আকিব। তাই তার দায়বদ্ধতাও বেশি।
আকিব হেসেনের সংস্থা I&We এই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই এক হাতিয়ার হিসাবে কাজ করছে। এই সংস্থা শিক্ষাকে সময়োপযোগী করে তুলতে চাইছে। সত্যিকারের শিক্ষার মর্ম উপলব্ধি করে এগোতে চাইছেন আকিব।
আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের ভিতরের প্রতিভাকে বের করে আনতে চাইছেন ওঁরা। স্কুলের শিশুদের ভিতর বিষয় জিজ্ঞাসাকে উস্কে দিতে চাইছেন। কলেজ পড়ুয়াদের পেশা প্রবেশের জন্যে তৈরি করে তুলতে সহায়তা করছেন।
এক্ষেত্রে I&We-র অভিনব মডেলটি একটি ফিজিট্যাল মডেল। এই শব্দটি ওদের কয়েন করা। ফিজিট্যাল লার্নিং বলতে এককথায় বোঝায়, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে এক বিশেষ মডেল চালু করা। ওয়ার্ক শপের মারফত বাস্তবিক ভাবেই উপস্থিত থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। এবং প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাকে ডিজিটাল পদ্ধতি নির্ভর। তার মধ্যে থাকছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার। মেশিন লার্নিং ল্যাঙ্গুয়েজের প্রয়োগ। ইনফো-গ্রাফিক্সের প্রয়োগ। এবং ৩২টি দিনে গোটা প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করা। I&Weর দাবি, এই ৩২ দিনে কোনও একটি বিষয় সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান এবং কৌতূহল তৈরি করে দিতে সক্ষম তাদের মডেল।
ইতিমধ্যেই গ্রাম শহর মিলিয়ে ২৪১ টি স্কুল এদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। সেখানে ওয়ার্কশপ করেছেন ওরা। আইআইএম আইআইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মিলিয়ে ৯১ টি প্রতিষ্ঠান এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০ টি বিষয় নিয়ে ওয়ার্কশপ মডিউল তৈরি হয়েছে। এবং গ্রাম শহর নির্বিশেষে ওদের প্রকল্পের কাজ চলছে।
আকিব হুগলির একটি আল আমিন মিশন স্কুলের উদাহরণ দিচ্ছিলেন। সেখানে কদিন আগেই ওদের ওয়ার্কশপ হয়ে গিয়েছে। সেই ওয়ার্কশপের আদলে কলকাতার একটি নামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলেও হয়েছে ওয়ার্কশপ। দুটো স্কুলেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আচরণ গত প্রভেদ থাকতে পারে কিন্তু মৌলিক জিজ্ঞাসার প্রশ্নে এবং প্রশ্ন করার কৌতূহলে, বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন চয়নে অধিকাংশ মিল লক্ষণীয়।
বিভিন্ন স্কুল ও কলেজগুলিতে লাগাতার-ভাবে প্রশিক্ষণ কর্মশালাগুলির আয়োজন করে থাকে I&We।
সেক্ষেত্রে অনলাইন ও অফলাইন দুটি মাধ্যমেই কাজ হয়। স্কিল ডেভেলপমেন্ট, উদ্ভাবনী ক্ষমতার বিকাশে এর ফলে শিক্ষার্থীদের উপকারও হচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতেও পড়ুয়াদের ভিতর একইভাবে প্রশিক্ষণের ওই কোর্সগুলি চালানো হয়। প্রশিক্ষক হিসাবে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন একগুচ্ছ নবীন পেশাদার। ইতিমধ্যে আমাজন, আইবিএম, ইনফোসিস, টিসিএস-এর মতো সংস্থায় এজাতীয় প্রশিক্ষণশালা আয়োজিত হয়েছে।
২০১৬ সালের মে মাসে I&We-এর যাত্রা শুরু। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের ১২১টি স্কুল ও ৩৭টি কলেজে প্রশিক্ষণের কাজ চালিয়েছে এই সংস্থা। কাজ হয়েছে শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে। গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে I&We। স্কিল ইন্ডিয়ার স্লোগান সামনে রেখে কাজ হয়েছে মোট ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার। সংস্থা সূত্রেই এই পরিসংখ্যান জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্প বাস্তবায়িত করার কাজও চালানো হচ্ছে। শহর ও গ্রামাঞ্চলে চলছে স্কিল ইন্ডিয়া ও ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। স্বল্প খরচে অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগও তৈরি করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি ও ম্যানেজমেন্ট নিয়ে লেখাপড়া করছেন এমন শিক্ষার্থীদের পেশাগত দুনিয়ায় কাজ পেতে সহায়ক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে I&We-য়ের প্রশিক্ষণশালাগুলি। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের সার্বিক উদ্ভাবনী প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলি প্রয়োজনীয় ধরনের সহায়তা করছে বলে I&We জানিয়েছে।
সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসাবে I&We- সঙ্গে পেয়েছে ন্যাসকম টেন কে-এর মতো সংস্থাকে। এছাড়া ব্র্যান্ড সাপোর্ট পার্টনার হিসাবে রয়েছে বিসিসিএল গ্রুপ। আরও একটি কথা না বললেই নয়, আকিব কিন্তু একা নন। ওর এই সংস্থায় যুক্ত ওকে নিয়ে দশজন কোফাউন্ডার। এখনও পর্যন্ত লড়াই করে ব্যবসা দাঁড় করানোর পক্ষপাতী আকিব।
আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম এইরকম নাম কেন, আকিবের উত্তর স্পষ্ট, শিক্ষার এই সমুদ্রে 'আমি এবং আমরা' I&We যৌথভাবে ঝাঁপ দিতে পারাটাই তো আসলে শিক্ষা।