দারিদ্রের অন্ধকারে বরিষার দীপকই আলো

দারিদ্রের অন্ধকারে বরিষার দীপকই আলো

Monday March 13, 2017,

2 min Read

শুরু ২০১৫ সালে। বড়িশা অ্যাথলেটিক ক্লাবে বাস্কেটবলের কোচ দেবাশিস সাহার নজরে আসে ৬ফুট ৩ ইঞ্চির দীপক। শুরু হয় অনুশীলন। দিনে প্রায় ৫ঘন্টা অনুশীলন করে দীপক। বৈদ্যপাড়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। এরই মধ্যে জাতীয় স্তরে খেলে ফেলেছে। সুনামও কুড়িয়েছে যথেষ্ট। এগিয়ে যাওয়ার পথেএকমাত্র বাধা চরম দারিদ্র। 

image


বাবা অসুস্থ, চোখে দেখতে পান না। রুজির টানে একবেলা রিকশা চালান। ওই দিয়ে ডাল ভাতও জোটে না সংসারে। ‘লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করি। সেখান থেকে সাহায্য পাই খানিকটা। ওই দিয়ে কোনওরকমে চলে। ছেলেটা বড় হয়ে যেন মুখ উজ্জ্বল করে। সব কষ্ট ঢেকে যাবে’,স্বপ্ন দেখেন মা মামনি ভাণ্ডারী।

হাতের জোরে বল ফেলতে হবে ঝুড়িতে। দারিদ্রের সঙ্গে নিত্য লড়াইয়ে এটাই একমাত্র শক্তি যোগায় বছর চোদ্দর দীপক ভাণ্ডারীকে। বাস্কেটবলের হাতছানি উপেক্ষা করতে না পেরে দীপক যুঝেই চলেছে দারিদ্রের বিরুদ্ধে। বাংলার প্রতিভাবান বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের তালিকার শীর্ষস্থানেই আছে ছেলেটির নাম। ইতিমধ্যেই জাতীয়স্তরে নিজের জাত চিনিয়ে ফেলেছে এই তরুণ খেলোয়াড়। 

অন্ধকার ঘর থেকেই তাঁর স্বপ্ন আকাশ ছুঁচ্ছে। দিন আনি দিন খাই পরিবার। কিন্তু সেই পরিবারে যে এমন এক সম্পদ আছে, তা জানতেই পারেননি বাবা, মা। ছেলের প্রতিভা ঠিক বুঝে নিয়েছিলেন কোচ দেবাশিস সাহা। তাঁরই হাত ধরে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল বেহালার দীপক ভাণ্ডারী। চোখে স্বপ্ন, বড় হয়ে এই ঘরের অন্ধকার দূর করা।

জাতীয় স্তরে ইতিমধ্যে তিনটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে দীপক। ২০১৫র নভেম্বরে পন্ডিচেরীতে অনূর্ধ্ব ১৩ সাব জুনিয়র প্রতিযোগিতা, ২০১৬র নভেম্বরে কর্ণাটকে অনূর্ধ্ব ১৫ ইয়ুথ ন্যাশনাল এবং ২০১৬র ডিসেম্বরে অনূর্ধ্ব ১৭ স্কুল ন্যাশানাল খেলতে ছত্তীশগড়ে যায়। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ময়দানে সিনিয়র স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে নেমেছে দীপক। 

সেই দীপকের রোজনামচা শুনবেন? ‘সকালে খুব ভোরে উঠে লোকের গাড়ি ধুতে যাই। ফিরে প্র্যাকটিস, তারপর স্কুল। বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে আবার প্র্যাকটিস। বাড়ি ফিরে পড়াশুনো।কোনও কোনও দিন বিয়েবাড়ি সাজানোর কাজ থাকে’, একটানে বলে চলে বছর পনেরোর দীপক।

দীপকের কঠিন জীবন সংগ্রামে পাশে রয়েছেন কোচ দেবাশিস সাহা। ‘সাগর ছেঁচে মুক্তো খুঁজে পেয়েছি। অত সহজে হারাতে দেব না। পাশে আছি,থাকব’, ধণু ভাঙা পণ করে বসেছেন কোচ। তবে পেটে খিদে নিয়ে তো আর খেলা যায় না। তাই ক্রীড়া অনুরাগী সবার কাছে দীপককে সাহায্য করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

এভাবেই নিজের পরিশ্রম আর সবার ভালোবাসা নিযে এগিয়ে চলেছে দশম শ্রেণির দীপকের বাস্কেটবল কেরিয়ার। বহু সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। আরও এগিয়ে যাক দীপক, আমাদের সকলের শুভেচ্ছা রইল তার জন্য।