অন্যের উদ্ধারেই তাঁর উদ্ধার বলে মনে করেন নিতাই দাস
পার্কের মধ্যে ফুটবল খেলছিল বছর দশেকের দুটো ছেলে। হঠাৎই তাদের নজরে পড়ে এক গরিব শিশুর ওপর। পরনে টুকরো ন্যাকরা ছাড়া আর কিছুই ছিল না ছেলেটার। মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, পেট ভরে খাওয়া হয়নি বহুদিন। খেলা মাঝপথে ছেড়েই দ্রুত ছেলেটাকে পাশের চায়ের দোকানে নিয়ে যায় ওই দুই কিশোর। দু’জনে টাকা তুলে খাওয়ার ব্যবস্থা করে ওর। এই ছিল পথ চলার শুরু। পরবর্তী কালে ওই দুইয়ের মধ্যে একজন নেমে পড়েন সমাজের উদ্ধারকাজে। জন্ম নেয় HIVE (এইচআইভি+ইমারজেন্সি-র) মতো সংস্থা।
Tuesday September 08, 2015,
2 min Read
কী এই হাইভ? রাকেশ আগরওয়াল ও নিতাই দাস মু্খার্জির চিন্তাধারার ফসল এই হাইভ। হাইভ এমন একটা সংস্থা, যারা কলকতা শহরের প্রায় সব ধরনের উদ্ধারকাজের সঙ্গে যুক্ত। এক সময় একটা ছোট্ট পার্ক থেকে যে কর্মকাণ্ডের উদ্ভব ঘটেছিল, আজ তা বিশাল আকার ধারণ করেছে। বেসরকারি এই সংস্থার স্থায়ী সদস্য সংখ্যা এখন ১৫। কলকাতার ৭৯ টি থানার সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করে হাইভ। ২১৬ বর্গ কিলোমিটার চৌহদ্দির যাবতীয় উদ্ধার কাজে হাত লাগায় এই সংস্থা। যা করতে গিয়ে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দল, মহিলাদের অভিযোগ কেন্দ্র, শিশুকল্যাণ কমিটি, দমকল ও জরুরি বিভাগের সঙ্গে সংযোগ রাখে হাইভ।
রাকেশ আগরওয়ালের প্রয়াণের পর এখন সংস্থার যাবতীয় কর্মকাণ্ড সামলান নিতাইবাবু। প্রায় ২০ বছর আগের স্মৃতি হাতড়ে তিনি জানান, ‘‘ছোট থেকে অন্যকে সাহা্য্য করার একটা ঝোঁক আমার মধ্যে ছিল। তবে স্নাতক না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি এনজিও-র কাজে ঝুঁকতে পারেননি। নব্বইয়ের শুরুর দিকে একটা পুরনো অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে প্রথমে পাকাপাকিভাবে সমাজকল্যাণের কাজে নেমে পড়ি। মৃতপ্রায় ব্যক্তিদের রাস্তা থেকে উদ্ধার করাই ছিল আমার কাজ।’’ সে সময় সিনি (চাইল্ড ইন নিড)-এর প্রতিষ্ঠাতা সমীরা চৌধুরীর সঙ্গে নিতাই দাসের পরিচয় হয়। সমীরবাবুর উৎসাহেই ফুটপাথে চিকৎসালয় গড়েন তিনি। কিন্তু সিনি আর্থিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করতেই ফুটপাথের ডাক্তারখানা উঠে যায়।
এতে দমে যাননি নিতাইবাবু। প্রায় দেড় বছর ধরে সমাজকল্যাণে পুঁজির ব্যবস্থা করেন তিনি। শেষে ১৯৯৯ সালে আয়ারল্যান্ডেের ‘হোপ’ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাধেন। প্রতিষ্ঠা পায় ‘হাইভ’। মূলত, ২৪ ঘণ্টা উদ্ধারকাজের জন্যই পরিচিত পেয়েছে এই ‘এনজিও’। তাহলে কী পরিষেবা দিয়ে চলেছে হাইভ? সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা জানান, ‘‘রাতেবিরেতে রাস্তায় অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে পৌঁছে দেয় ‘হাইভ’। শিশু ও মহিলা পাচার রুখতে আমরা কড়া নজরদারি রাখি মধ্যরাতের রাস্তায়। এছাড়াও এরটি আপতকালীন পরিষেবাকেন্দ্র রয়েছে আমাদের। যেখানে ২৪ ঘণ্টা বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকেন কর্মীরা।’’
তবে শুরুর দিকে অনেকেই হাইভের কর্মকাণ্ডকে বিশ্বাস করতে পারেননি। নতুন এনজিও হওয়ায় পুলিশ ও হাসপাতালের সাহায্য পাননি হাইভের কর্মীরা। অনেক সময় অসুস্থ রোগীকে রাস্তা থেকে হাসপাতালে নিয়ে গেরলেও ভর্তি করা যায়নি। পুলিশের ক্ষেত্রে মিলেছে একই ধরনের অসহযোগিতা। সীমিত কর্মী থাকায় একার হাতেই অনেক কিছু সামলাতে হয়েছে নিতাইবাবুকে। প্রায় তিন বছর সরকারি বিভিন্ন বিভাগ ও হাসপাতালে যাতায়াতের পর হাইভের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলে পুসলিশ ও ডাক্তারদের। শেষে তাঁরা বিশ্বাস করেন, ইচ্ছা থাকলেই সীমিত পরিসরেই বৃহত্তর কর্মকাণ্ড ঘটানো যায়। অন্তত নিতাই দাস মু্খার্জি তার জলজ্যান্ত উদাহরণ।