ড্রোন নিয়ে স্বপ্ন দেখছে কলকাতার Rasscorb

ড্রোন নিয়ে স্বপ্ন দেখছে কলকাতার Rasscorb

Thursday March 01, 2018,

3 min Read

বিশ্বজিত দে আর রীতেশ কানুদের ড্রোন নিয়ে গবেষণা আর সাফল্যের কাহিনি তো আপনারা আগেই ইওরস্টোরির পাতায় পড়ে ফেলেছেন। পূর্বাঞ্চলের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে কান পাতলে ওদের সাফল্যের কাহিনি মুখে মুখে ফেরে। সকলেই এক বাক্যে চেনে ড্রোন গবেষক ব্র্যাভো ডেল্টাকে। ব্র্যাভো ডেল্টা এই নামেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই চেনেন বিশ্বজিতকে। কদিন আগে ভারতীয় সেনার জন্যে বানানো ড্রোন নিয়ে ওরা গিয়েছিলেন বরফের চাদরে ঢাকা কাশ্মীর। সীমান্তে বহিঃশত্রুর মোকাবিলায় ব্যবহৃত হবে ওদের প্রযুক্তি। ওদের ঘাম ঝরানো প্রয়াস। কলকাতার একটি স্টার্টআপ আহামরি ফান্ডিং ছাড়াই আজ প্রেরণা জাগানো কাজ করছে গোটা দেশ জুড়ে।

image


ওদের অনুপ্রেরণার অনেক ফসল চোখে পড়ছে আজ কাল। এই যেমন ধরুন কলকাতার Rasscorb এর প্রয়াস। Rasscorb-ও একটি ড্রোন প্রস্তুতকারী সংস্থা। ওদের বিজনেস মডেলে ড্রোন নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা চোখে পড়ার মতো।

ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিটেক রুদ্রনাথ ঘোষ আট বছর পাওয়ার কেবল নিয়ে কাজ করছেন, আর স্বপ্ন দেখেছেন উদ্যোগপতি হওয়ার। স্মার্ট সিটি সংক্রান্ত ওর ভাবনার জন্যে গত বছর পূর্বাঞ্চলের বিজেতা হিসেবে আল্ট্রাটেক ইন্ডিয়ার পুরস্কার পেয়েছেন রুদ্রনাথ। ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার রুদ্রনাথ নিজের কাজের পরিধির ভিতর থেকে সমস্যা আবিস্কার করেছেন। উঁচু পোস্টের কিংবা হাইটেনশন ইলেক্ট্রিকাল পোস্টে কেবলের সমস্যা আছে কিনা থাকলে কোথায় আছে সেটা খুঁজে পেতেই অনেকটা সময় চলে যায়। রুদ্র ভাবছেন ড্রোনকে দিয়ে হাইটেনশন তারের সমস্যা শুধরোবেন। আরও নানান অসাধ্য সাধন করাবেন হাতে তৈরি ড্রোন দিয়ে। পোস্টম্যানের কাজ করাবেন রীতিমত। ড্রোন দিয়ে চলন্ত ট্রেনেও পৌঁছে দেবেন পার্সেল। কৃষি ক্ষেত্রে কীটনাশক আর সার আকাশ থেকে ছিটনোর কাজ করবে ওর ড্রোন। পাশাপাশি বিনোদনের উপকরণ হিসেবেও দারুণ পারফর্ম করবে ওদের ছ পায়ের এই ভাসমান যন্ত্র।

একা এই স্বপ্ন দেখছেন না রুদ্র। ওর টিম আছে। সকলেই ইঞ্জিনিয়ার। সকলেই স্বপ্ন দেখেন আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ করে কীভাবে একটি উদ্ভাবন সম্ভব হতে পারে। সমাজের সমস্যাকে আবিষ্কার করে তার সমাধানের রাস্তাটাই খোঁজেন ওরা। যেমন অভিজিত দাস, ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পনের বছরের অভিজ্ঞতা। মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার। রাইজিং আন্ত্রেপ্রেনিওরশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এখন রাতদিন এক করে তৈরি করছেন রুদ্র নাথের ড্রোন। ওদের তৃতীয় সঙ্গী সৌরভ ঘোষ। সেও ইঞ্জিনিয়ার। রুদ্র অভিজিতের মত ওকেও উদ্যোগপতি হওয়ার ছোঁয়াচে স্বপ্নটা ছুঁয়ে দিয়েছে ওদের স্বপ্নের Scorb।

ছয় পায়ে হাঁটা মহাজাগতিক জীব হল Scorb অন্য গ্রহের কাল্পনিক একটি প্রাণী। তার একটি চোখ। দেখতে অনেকটা আরশোলা কিংবা মাকড়সার মত। ড্রোনও প্রায় ওরকমই দেখতে। চার চারটে ডানা। দুটো পা। আর RAS এসেছে রুদ্র, অভিজিত আর সৌরভের নামের আদ্যক্ষর থেকে। এভাবেই ওদের সংস্থা RASSCORB আকৃতি পেয়েছে।

রুদ্র আর অভিজিত আমাকে বোঝাচ্ছিলেন ওদের বিজনেস মডেল। ওরা চান স্কুল কলেজের বাচ্চারাও আরও বেশি বেশি করে ড্রোন বানানো শিখুক। আরও বেশি বেশি করে শিখুক ড্রোন ওড়ানো। তাতে জুড়ে দিক একটা বিকল্প ভাসমান চোখ। ওদের ক্যামেরায় ধরা পরুক আকাশ থেকে বিশ্বরূপ দর্শনের চিত্রটা। এর মজাই অন্য রকম।

ঘুড়ি ওড়ানোর চেয়ে সহস্র গুন মজা। স্কুল কলেজের তরুণদের এই মজাটা পেতে দিতে চান রুদ্র অভিজিত সৌরভ। তাই ওদের টার্গেট হল বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে এই ওয়ার্কশপ আয়োজন করা।

মনে পড়ে যাচ্ছিল বিশ্বজিত আর রীতেশদের শুরুর দিনগুলো। ব্র্যাভো ডেল্টাদের শুরুটাও ঠিক এরকমই ছিল। ওরাও ভেবেছিল কলকাতার স্কুল কলেজে ওয়ার্কশপ করে করেই ওরা এগোতে পারবে। কিন্তু কলকাতায় ব্যাপারটা জমেনি। কারণ ওরা সময়ের থেকে আগে শুরু করেছিলেন। কলকাতার স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট বাঁধাগতের আমলাতন্ত্র এই স্টার্টআপ উদ্যোগকে সাপোর্ট তো দূর-স্থান পা রাখার জায়গাও দেয়নি সেদিন। অন্য রাজ্যে গিয়ে নিজেদের প্রমাণ করতে হয়েছে। রুদ্ররা অবশ্য মনে করেন পরিস্থিতি বদলেছে। যত স্টার্টআপ নিয়ে প্রচার প্রসার হচ্ছে ততই একটু একটু করে লাল ফিতের ফাঁসটা খুলছে। আর তাতেই আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন রুদ্র-অভিজিত-সৌরভের ট্রায়ো।

আর মার্কেট রিপোর্ট বলছে বাজারটা অনেক বড়। ২০২৫ এর মধ্যে এই বাজারের আকৃতি দাঁড়াবে ৮৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হবে কনজিউমারের দৌলতে। ফলে সেদিকেই ওদের মৌলিক নজর। এক ধাপ এগিয়ে ড্রোন ওড়ানোর ইভেন্ট করেও টাকা তুলতে চায় RASSCORB। আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আছে উভচর ড্রোন তৈরি করার প্রতিশ্রুতি।