ক্রিপ্টো বাজারে দোলাচল, চিন্তায় লগ্নিকারীরা

ক্রিপ্টো বাজারে দোলাচল, চিন্তায় লগ্নিকারীরা

Friday February 16, 2018,

3 min Read

ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে গোটা বিশ্ব যেখানে দ্বিধাগ্রস্ত। ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রশ্নে সিউল থেকে বেইজিং থেকে দিল্লি সকলেরই চোখ লাল। বিভিন্ন রাষ্ট্র ক্রিপ্টোকারেন্সির বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। বিটকয়েনের দাম পড়ছে হুহু করে। নীতি-পুলিশরাও বলতে শুরু করেছে বিটকয়েন কেনা অপরাধের। এমন সময় জাপানের দুটি ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত দুটি গোষ্ঠী গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে। বিনিয়োগকারীদের আরও নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষে তারাই এবার থেকে শুরু করবে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণের কাজ। গত মাসেই ৫৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরির ঘটনা ঘটেছে খোদ জাপানে। টোকিওর ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ কয়েনচেক থেকে ওই পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করে হ্যাকাররা। এটাই সাম্প্রতিক কালে সব থেকে বড় চুরি বলে মনে করছে জাপান ক্রিপ্টোকারেন্সি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন। তারপরই নড়ে চড়ে বসেছে জাপানের এই দুই সংস্থা। জাপান ব্লকচেইন অ্যাসোসিয়েশন এবং জাপান ক্রিপ্টোকারেন্সি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন। এপ্রিল মাসের মধ্যে এই দুই সংস্থাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সংযুক্ত হয়ে যাবে বলে দুই সংস্থার সূত্রে জানানো হয়েছে। কয়েনচেকের তছরুপটা জাপানের ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে সবথেকে দুর্ভাগ্যজনক এবং চোখ খুলে দেওয়ার মত ঘটনা বলে মনে করে এই দুই সংস্থাই। এবং এর মধ্যে দিয়ে জাপানের ডিজিটাল মানি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থারও ফাঁক ফোকর বেরিয়ে এসেছে বলে এই দুই সংস্থার তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। এবার তাই আরও নিরাপদ একটি ব্যবস্থা উপহার দিতে চায় এই দুই সংস্থার কর্তারা। বলা হয়েছে দুই সংস্থার শীর্ষ-কর্তাদের নেতৃত্বে নতুন করে তৈরি হবে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রক সংগঠন। এই স্বতন্ত্র ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রক সংগঠনের মাধ্যমেই জাপানের ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে। তবে সমান্তরাল অর্থনীতি চালানোর প্রক্রিয়ায় বেজায় চটে আছে জাপান সরকার।

image


এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে সোশ্যাল মিডিয়া জায়েন্ট ফেসবুক ইতি মধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে, ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রশ্নে তাদের মনোভাব বেশ কড়া। কোনও ধরণের জুয়োর প্রচার প্রসার হতে দেওয়া যায় না বলে মনে করে ফেসবুক। তাই ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রোমোট করে এমন সব সংস্থার বিজ্ঞাপন তারা শিগগিরই বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজের ইউজারদের ‘আর্থিক লেনদেন বিপথে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে এই পদক্ষেপ’, বলছে ফেসবুক। ফেসবুকের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ডিরেক্টর রব লেথার্ন ব্লগে লিখেছেন, ‘আমরা চাই মানুষ ফেসবুকের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানবেন যেখানে প্রতারিত হওয়ার ভয় থাকবে না। অনেক সংস্থা আছে যারা ক্রিপ্টোকারেন্সির বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, যা বিশ্বাসযোগ্য নয়’।

যদিও ক্রিপ্টো সম্পর্কিত সব অ্যাড ফেসবুকের পক্ষে নাকচ করা যে সম্ভব নয় সেটাও ভালো মতই জানেন লেথার্ন। তাই এই দায়িত্ব ব্যবহারকারীদের ওপর দিচ্ছেন লেথার্ন। কোনও ইউজার ফেসবুকে তেমন কোনও অ্যাড দেখলেই রিপোর্ট করতে পারবেন। তার জন্য ওপরের ডানদিকে কোণে রিপোর্ট অপশনে ক্লিক করলেই হয়ে যাবে। ফেসবুকের শাখা সংস্থাগুলিও অ্যাড বিক্রির ক্ষেত্রে একই নিয়মে চলবে। ইন্সটাগ্রাম ও অডিয়ান্স নেটওয়ার্ক হল থার্ড পার্টি সিস্টেম যারা নানা অ্যাপসে অ্যাড প্লেস করে। যার মানে হল ‘ক্রিপ্টো জিনিয়াস’ জেমস আলচারের মতো অ্যাড আর নিউজফিডে দেখা যাবে না। ‘এই পলিসি আমরা চালিয়ে যাব’ লেথার্নের পোস্ট। সবচেয়ে বড় কথা সোশ্যাল মিডিয়া ইউজাররা ফেসবুকের এই মনিটরিংকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এমনকি যারা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে ফেলেছেন তাঁরাও বলছেন ফেসবুকের এই সিদ্ধান্তে তাঁদের সুবিধা হয়েছে। তাছাড়া, যারা ফেসবুককে ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং কিংবা ইনিশিয়াল কয়েন অফারিং এর জন্যে সঠিক মঞ্চ বলে মনে করছেন তারা আসলে ভুল করছেন। ফেসবুক ICO-র জন্যে সঠিক প্লাটফর্ম নয়।

ফেসবুকের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। টেক্সাসের Arisebank এর ICO হিসেবে ৬০০ মিলিয়ন ডলার তোলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই সোরগোল পড়ে গেছে। ইউএস সিকিউরিটি এবং এক্সচেঞ্জ কমিশন অ্যারাইজ ব্যাঙ্কের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। এবং আইসিও হিসেবে টাকা তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। Arisebank এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তো উঠেইছে পাশাপাশি অস্তিত্বহীন ব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধার মিথ্যে দাবিও ফাঁস হয়েছে সম্প্রতি। অনুমতি ছাড়াই সেলেব্রিটি এনডোরসমেন্ট ব্যবহার করা এবং FDIC এর অনুমোদন ছাড়াই নিজেদের ব্যাঙ্ক হিসেবে দাবি করার মত অভিযোগও উঠেছে জেয়ার্‌ড রাইসের অ্যারাইজ ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে।

ফলে যত সময় এগোচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাবল ফাটতে চলেছে খুব শিগগিরই। এমনটাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আর সত্যিই এরকম কিছু হলে ফের মন্দার শিকার হবে বিশ্বের অর্থনীতি। মুখ থুবড়ে পড়বে তাবড় সংস্থা। সব থেকে সমস্যায় পড়বে স্টার্টআপ সংস্থাগুলি।