মাঝবয়েসে এসে স্টার্টআপ! বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত কী?
Tuesday November 24, 2015,
4 min Read
জীবনের মধ্যভাগে এসে স্টার্টআপের অভিজ্ঞতা কেমন হতে পারে? রয়েছে মিশ্র অনুভূতি। একদিকে রয়েছে বয়স বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে জীবনে তেমনভাবে কিছু করা হল না গোছের আফশোস। পাশাপাশি ঝুলিতে জমা হয়েছে কিছু ছোট ছোট সাফল্যও। মধ্য জীবনে এসে তাই ঝুঁকি নেওয়াটা বেশ কঠিন।
স্টার্টআপের জগতটাকে বাইরে থেকে বেশ আকর্ষক মনে হয়, সাহসী, মুক্ত, ঝকঝকে একটা জীবন, এ যেন নির্বান লাভ।
পেশদার জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়ে আসার পর অনেকেই শুরুয়াতি ব্যবসার জগতে আসতে চান, তাঁর নানা ধরণের কারণ থাকতে পারে-
• আমার বন্ধু,আত্মীয় ও সহকর্মীদের মতে আমার পরিকল্পনাটি খুবই আকর্ষণীয়, এটা সফল হবেই, অনেক টাকা করব এখান থেকে।
• আমি অনেক বড় প্রজেক্ট সংস্থায় কাজ করেছি, স্টার্টআপে তো শুধু আমাকে আর আমার দলকে চালনা করতে হবে আমাকে, আমর জন্য এটা খুবই সহজ।
• আমার প্রচুর যোগাযোগ রয়েছে, সাফল্য আমি পাবই।
• আমার বন্ধুরা আমাকে সাহায্য করবে।
• আমি একবছর ধরে আমার টাকা পয়সা জমিয়েছি, পরিকল্পনাও করে ফেলব।
• কলেজ থেকে বেরিয়েই লোকে স্টার্টআপ খুলে ফেলছে, আমি কেন পারব না!
• লোকে আমার ব্যবসায় টাকা দিতে চাইছে।
• আমার নিজেকে উদ্যোগপতি ভাবতে ভাললাগছে।
• আমার স্ত্রী খুবই সমর্থন করে আমাকে।
• আমরা বন্ধুরা খুব ভাল কিছু একটা করতে চাইছি, আমাদের কাছে কিছু টাকাও আছে।
• আমার ছেলে মেয়ে এখনো ছোট, এটা আমার শেষ সুযোগ।
• আমি তাড়াতাড়ি আমার বাড়ি করার জন্য নেওয়া ঋণ শোধ করতে চাই।
ইচ্ছে ও সচেতন সিদ্ধান্তের মধ্যে তফাত্ রয়েছে. পরিবর্তন ভাল, কিন্তু সেটাকে সঠিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মধ্যেই রয়েছে সাফল্য।
অনেকের কাছেই মধ্য জীবনে স্টার্টআপ, স্বপ্ন সত্যি হওয়ার গল্প। বাস্তবে এর জন্য অনেক ধারণা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হয়, ভুলতে হয় শেখা জিনিস। অবশ্যই বয়সের সঙ্গে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয় তা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মানুষের মগজ যে কোনও জিনিসকে চেনা পরিস্থিতি থেকে চালনা করতে অভ্যস্ত, অচেনা পরিস্থিতিতে নয়।
স্টার্টআপ সেই অচেনা জায়গাটাতে পৌঁছনো, নিজের পরিকল্পনাগুলিকে বাস্তবায়িত করা যখন চারপাশের পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ কম। বিভিন্ন বাধার মধ্যে কাজ করাই স্টার্টআপের মূল কথা।
আরামের কর্পোরেট চাকরির একটা সুনির্দিষ্ট পরিকাঠামো রয়েছে, সেখানে একজনকে কী কী কাজ করতে হবে তা স্পষ্ট, সেখানে একটি সুপরিচালিত, সংগঠিত ইকোসিস্টেম রয়েছে যেখানে একজন নিজের সব থেকে ভালটা দিয়ে কাজ করতে পারে।
স্টার্টিংআপ নিজের সদ্যজাতকে মানুষ করার মতো। অনেকেই বলবে কী করা উচিৎ, কী করা উচিৎ নয়, কিন্তু দিনের শেষে আপনাকেই পুরোটা পরিচালনা করতে হবে। শেখার সঙ্গে সঙ্গেই উন্নতি হবে। তথ্য অনুযায়ী, মধ্য বয়স মানসিক স্বাস্থ্যের অস্থিরতার সময়, এই সময় বহু মানুষ তাঁর জীবনের পথ পরিবর্তন করেন।
মধ্য-বয়স কেরিয়্যারকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার সময়, স্টার্টআপের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে না দেখতে সেটা শুধুমাত্র কেরিয়্যারের পথে একটা বাধাই হবে।
কম বয়সে স্টার্টআপের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, কোনো পিছুটান থাকে না। মাঝ বয়সে এই ধরণের সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রেই মারাত্মক হতে পারে যদি না একজন সঠিক পথে এগোতে পারে।
অনেক সাহসী ব্যক্তি আছেন, যারা ঝুঁকিটা নিয়েছেন এবং এই ইকোসিস্টেমে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন. টিঁকে থাকা না নতুন উচ্চতায় পৌঁছনো কোনটি গুরুত্বপূর্ণ। টিঁকে থাকাটাই যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে স্টার্টআপের থেকে ভাল কর্পোরেট চাকরি, চাপহীন, মোটা বেতন।
স্টার্টআপের আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা ভাল
• আপনি যদি একটি সুপরিচালিত ইকো সিস্টেমের অংশীদার হন, তাহলে স্টার্টআপের কথা ভাবুন, তা যদি না হয় তাহলে সেরকম একটি ইকো সিস্টেম খুঁজে নিনি়, শিখুন, ভাবনার আদান প্রদান করুন, নিজের উদ্দেশ্যকে যাচাই করে নিন।
• পরিবার সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তারপর ইএমআই. নিশ্চিত হয়ে নিন একটা বড় সময় আপনাকে কোনো সাহায্য ছাড়াই এগোতে হবে।
• আর্থিক দায়বদ্ধতা লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে, তাই সেটা কম রাখাই ভাল।
• আপনার স্ত্রী যদি ভাল চাকরি করেন এবং ভাল টাকা বেতন পান, তাহলে খুব ভাল, আপনার উদ্যোগের জন্য শুভ কামনা।
• নিজের জোরের জায়গাগুলি জানুন. খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন না, শান্ত ভাবে নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে এগিয়ে যান।
• নিজের দুর্বতলার জায়গাগুলিতে নজর দিন, সেগুলিকে উন্নত করার উদ্দেশ্য কাজ করুন।
• আপনার ব্যবসাকে বাড়তে সাহায্য করবে এরকম যোগাযোগ খুঁজে বের করুন, সম্পর্ক তৈরি করুন।
• বন্ধুদের নিজের পার্টনার করবেন না, পার্টনারদের বন্ধু করুন।
• সঠিক পার্টনারকে বেছে নিন, এমন মানুষকে বাছুন যে কাজ করবে, শুধুই পরিকল্পনা নয়।
• মধ্যজীবনের সংকট যেন আপনার স্টার্টআপের কারণ না হয়।
• অন্যের পরামর্শ নিন, কিন্তু সেটাকে বেদবাক্য ধরার প্রয়োজন নেই, অন্যরা আপনার আসল পরিস্থিতি জানে না।
• সবকিছু জানতে হবে এমন নয়, কিন্তু যেটুকু জানেন সেটা সবথেকে ভাল করে করুন।
মধ্য বয়েসীরা ক্ষীণ নন, আমরা হাতির মতো. হাতির প্রচুর ক্ষিদে থাকে, হাতির মতো কাজ করুন।
বিজ্ঞানীরা ৩৮ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করে হাতিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করেছেন ও ২৬ ধরণের স্বভাব খুঁজে পেয়েছেন। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি তাদের অনাহার ও খরার মতো কঠিন পরিস্থিতিতে টিঁকে থাকতে সাহায্য করে।
• হাতিদের মধ্যে নেতৃত্বসুলভ গুণ রয়েছে
• অন্যকে প্রভাবিত করা ও সম্পর্ক স্থাপন করার ক্ষমতা রয়েছে তাদের.
• তাদের চলো করা যাক গর্জন দলকে অনুপ্রাণিত ও লক্ষ্যে স্থির থাকতে সাহায্য করে.
• তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ও সহিষ্ণুতা রয়েছে
• হাতিরা কৌতুহলী ও কর্মক্ষম
• তারা প্রাণোচ্ছল
• তারা ভরসাযোগ্য, অবিচলিত এবং ভাল সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম
• তারা উপকারী, যত্নবান ও শান্ত
• তারা ছোটোদের শেখায়.
বয়স্কদের স্টার্টআপের সাফল্যে মূল চাবিকাঠি হল দলকে সঠিক দিকে পরিচালনা করা ও তাদের প্রভাবিত করা.
আপনার পরিকল্পনাকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করুন, এই কাজের জন্য সঠিক লোক নির্বাচন করুন. লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য সময়, পরিশ্রম ও টাকা প্রয়োজন, কোনোকিছুই আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছনো থেকে আটকাতে পারবে না.
যদি আপনার লক্ষ্য পরিস্কার হয়, এবং আপনি মনে করেন আপনার পরিকল্পনার জন্য আপনি সব কিছু করতে পারেন, তাহলে এগিয়ে যান.
লেখা- গোপালকৃষ্ণ কান্নন
অনুবাদ- সানন্দা দাশগুপ্ত