ডিজিটাল বিপ্লবের হাত ধরে গত দশকে ফোটোগ্রাফির দুনিয়ায় ঘটে গেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। একদিকে যেমন মানুষ তাঁর প্রতিটি মুহুর্তকে ফ্রেমবন্দি করে রাখতে চাইছেন, তেমনই বেড়েছে পেশাদার ফোটোগ্রাফারের সংখ্যা। আর রয়েছেন অসাধারণ কাজ করে যাওয়া অসংখ্য শখের ফোটোগ্রাফার। এর ভালো খারাপ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি রয়েছে অনেক তবে যে এর ফলে যে বিরাট একটি বাজার তৈরি হয়েছে সে বিষয় কোনো দ্বিমত নেই। গত আট বছর ধরে এই বাজারেই কাজ করছে Canvera। Canvera একটি অনলাইন ফটোগ্রাফি কোম্পানি, পেশাদার ফটোগ্রাফারদের ই-কমার্স সলিউশন। বর্তমানে সারা ভারতে কর্মী সংখ্যা ১,০০০ ছাড়িয়েছে। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা পীযুস রাই ও ধীরাজ ক্যাকার, কেউই ফোটোগ্রাফির দুনিয়ার লোক না হয়েও পৌঁছে গেছেন ১৫,০০০ এরও বেশি ফটোগ্রাফারের কাছে, কী ভাবে! বললেন পীযুস।
শুরুর দিনগুলি
২০০৭ এ শুরু করার সময় ধীরাজ আর আমি নিজে বেঙ্গালুরু, বরোদা, মুম্বই সহ বিভিন্ন জায়গায় ৫০ জনেরও বেশি ফটোগ্রাফার ও স্টুডিওতে দেখা করি। বাজারের অবস্থা, গ্রাহকদের সমস্যার জায়গা, এই ক্ষেত্রে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে নিজেদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিজেরা ফটোগ্রাফির দুনিয়ার না হওয়ায় প্রাথমিকভাবে অনেকরকমের দ্বিধা কাজ করছিল, তবে উদ্যোগটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। প্রথমেই যেটা আমরা বুঝতে পারি তা হল শুধুমাত্র অনলাইনে ক্রেতা পাওয়ার মডেল খুব কম সময়ের মধ্যে কাজ করবে না, এরজন্য আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে, সেই জন্য একটি সেলস টিম তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিই আমরা। আজ ভারতের ৪০০টিরও বেশি শহরে ৩০০ জনেরও বেশি সেলস কর্মী রয়েছেন আমাদের, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা ও ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটাই ছিল আমাদের মূল চাবিকাঠি।
মানুষকে আকর্ষণ ও নিযুক্ত করা
১৫,০০০ এরও বেশি ফটোগ্রাফার আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন, সংখ্যাটা প্রতি মাসেই বাড়ছে। গ্রাহকদের খুশি রাখার একটাই উপায়। আমাদের প্রডাক্ট ও পরিষেবা দিয়ে তাদের মুগ্ধ করা। আমরা গত বছরগুলিতে সেটই করেছি আর আশা করি আগামি বছরগুলিতেও তা করে যেতে পারব।
ফটোগ্রাফারদের আমরা নানাভাবে নিযুক্ত করি। সারা ভারতের বিভিন্ন শাখায় আমরা ফটোগ্রাফারদের আমন্ত্রণ জানাই, সেখানে কর্মশালা ও আলোচনা চক্র আয়োজন করা হয়। ফটোগ্রাফারদের থেকে নিয়মিত আমাদের প্রডাক্ট সম্পর্কে মতামত নেওয়া হয় ও সেই অনুযায়ী সেগুলিকে উন্নত করা হয়। আমাদের সেলস টিমও নিয়মিত ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, এর থেকে ফটোগ্রাফি ব্যবসা ও এর সমস্যাগুলি সম্পর্কে আমরা বিশদে জানতে পারি।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও ফটোগ্রাফার ও ক্রেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়। ফেসবুকে দেড় লক্ষেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে Canveraর। আমরা সেখানে প্রতিযোগিতার আয়োজন করি, খ্যতনামা ফটোগ্রাফারদের লেখা শেয়ার করি এবং ভারতের বিভিন্ন ফটোগ্রাফারদের অসাধারণ সব কাজও তুলে দিই।
গতিশীলতা
আমরা মনে করি উদ্ভাবনই যে কোনো ব্যবসার প্রাসঙ্গিক থাকার মূল চাবিকাঠি। আমরা আমাদের সংস্থার প্রতিটি স্তরে উদ্ভাবনকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি, তা ফটোবুক ডিজাইন হোক, পরিচালন হোক, ডিজাইন পরিষেবা হোক বা প্রযুক্তি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রকমের কভার ও কাগজের নতুন ধরণের ফটোবুক এনেছি আমরা। Vivyo লঞ্চ করেছি, এটি ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তাঁরা মিনিটের মধ্যে নিজের ওয়েবসাইট ও ই-স্টোর খুলে ফেলতে পারেন। অনলাইন পেমেন্ট ও স্মার্টফোনের মাধ্যমে পেমেন্টের ব্যবস্থাও করেছি আমরা। ফটোবুকের সঙ্গে তার একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট দিই আমরা, যা অনলাইনে পৃথিবীর যেঁদের।
প্রান্ত থেকে দেখা যাবে। পাশাপাশি রয়েছে ফটোগ্রাফার প্রোফাইল পেজ। এর মাধ্যমে ফটোগ্রাফাররা আমাদের অনলাইন ডিরেক্টরিতে নথিভুক্ত হতে পারেন, আমাদের এই ডিরেক্টরি, আমাদের ওয়েবসাইট থেকেও যেমন সার্চ করা যায় তেমনই গুগল বা বিঙের মতো সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমেও খুঁজে পাওয়া যায়। আমাদের সবরকমের উদ্ভাবনের একটাই লক্ষ্য, কী ভাবে আমাদের পণ্য ও পরিষেবাকে ফটোগ্রাফার ও ক্রেতাদের কাছে আরও মূল্যবান করে তোলা যায়।
এশিয়ান ফটোগ্রাফি ম্যাগাজিন Canveraর প্রতিষ্ঠাতা পীযুষ ও ধীরাজকে ভারতে ফটোগ্রাফিতে প্রথম ১০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে রেখেছে, গত বছর এইচ পি ডিজিটাল প্রিন্ট এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ডে প্রথম পুরস্কার জিতেছে কোম্পানিটি। এনেছে নতুন প্রযুক্তি যাতে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে Canveraর ফটো অ্যালবাম অফলাইনেও দেখা যায়। আগামী দিনে প্রযুক্তি, পরিষেবা ও ডিজাইনে আরও উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
অনুবাদ সানন্দা দাশগুপ্ত