ছাত্রদের লেখাপড়ার চার দেওয়ালের বাইরেও একটা জগত থাকে। নিজেদের জগত। স্বপ্নকে ডানা দেওয়ার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর একটা তাগিদ থাকে। সেই তাগিদ আসে অধিকাংশ সময়েই নিজেদের পছন্দের বিষয় থেকে। কেউ ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখেন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হবেন। কেউ ভাবেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে নিজের সৃজনশীল শখের উপরই নির্ভর করবেন। কিন্তু ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়গুলি স্কুল কলেজের নিয়মতান্ত্রিক বদ্ধ ক্লাসরুমে শেখানো হয় না। নিজের উদ্যোগেই অনেক সময় শিখে নিতে হয়। আর এখানেই উদ্যোগপতি অভিষেক দত্তর সংস্থা ভিভারন তরুণ তরুণীদের স্বপ্ন সফল করার রাস্তা দেখায়। প্রয়োজনীয় বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়। উপকৃতও হচ্ছে বহু ছাত্রছাত্রী। চেন্নাইয়ের সংস্থা সিএডিডির স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে ভিভারন। সিএডিডির উদ্যোগ ড্রিমজোন স্কুল অব ক্রিয়েটিভ স্টাডিজের অনুমোদিত কোর্স অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেন ওরা। মূলত বিভিন্ন ধরণের ডিজাইন শেখানো হয়।
এবার ভিভারন এবং ড্রিম জোন কলকাতায় আয়োজন করেছে "enTEENpreneurs Expo"। নামটায় লুকিয়ে আছে এই এক্সপোর মূল উদ্দেশ্য। ওদের লক্ষ্য তরুণ তরুণীদের মধ্যে থেকে উদ্যোগপতিদের আবিষ্কার করা। যাদের বয়স তের থেকে উনিশ তারা এই এক্সপোর মূল টার্গেট অডিয়েন্স। শিক্ষা নিয়ে বেশ কয়েকটি স্টার্টআপ কাজ করছে কলকাতায়। কিন্তু ভিভারণের কাজ মৌলিক ভাবে পৃথক। ওরা তরুণ তরুণীদের ভিতর থেকে সৃজনশীলতাকে নিংড়ে আনতে চান। তৈরি করতে চান এমন একটা প্রজন্ম যারা পড়াশুনোর চাপে পড়ে কিংবা উপার্জনের তাগাদায় সৃজনশীল সত্তাকে মরতে দেননি। বরং নিহিত সৃজনশীলতাকেই রুটি রুজির হাতিয়ার করার সাহস পাচ্ছেন। ফলে উদ্যোগপতি নির্মাণের কাজটাই করেন অভিষেক। নিজে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশুনো করেছেন। দামী চাকরি করেছেন দীর্ঘদিন। বিভিন্ন ব্যাঙ্কে কাজ করেছেন ভালো পদেই। কলকাতার বাইরে থাকতেন কাজের সুবাদে। কী মনে হল, ফিরে এলেন কলকাতায়। লেগে পড়লেন ভিভারন তৈরি করার কাজে। শূন্য থেকে শুরু করা। পরিবারে কেউ কখনও ব্যবসা করেননি। কিন্তু এমবিএ করা অভিষেকের অঙ্কটা খুব পরিষ্কার ছিল। ও জানত, মনের তাগিদ যদি না থাকে তবে কাজে উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই মনের কথা শোনাটা নিজে আগে প্র্যাক্টিস করেছেন অভিষেক। তার পর শুরু করেছেন অন্যরাও কীভাবে নিজেদের মনের ডাকে সাড়া দিতে পারেন তা নিশ্চিত করার স্টার্টআপ।
এবার আসি enTEENpreneurs Expo প্রসঙ্গে। এখানে স্কুল-কলেজ এবং বিভিন্ন ডিজাইন ইন্সটিটিউশনের ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের সৃজনশীল কাজ নিয়ে হাজির হওয়ার অবকাশ আছে এখানে। সে গয়না তৈরিই হোক, কিংবা ডিজাইন করা পোশাকই হোক। যারা এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করছেন তাদের কাজের বিচার করারও বন্দোবস্ত রেখেছেন অভিষেক। শুধু বিচার নয়, প্রয়োজনে পরামর্শও দেওয়া হবে। আর এই বিচারকদের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন শাখার দিকপালেরা। আছেন উদ্যোগপতিরাও। যেমন ধরুন সুগার অ্যান্ড স্পাইসের কর্ণধার সুপ্রিয়া রায়, বাংলাদেশের প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা, ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনার তেজস গান্ধীর মত মানুষ আছেন তেমনি আছে অভিনেতা কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজি, মার্সি হাসপাতালের সিইও সঞ্জয় প্রসাদ প্রমুখ। আইসিসিআর এর দুদিন আর হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালে একটি ফ্যাশন শোয়ের সন্ধ্যা, টান টান তিন দিনের দুর্দান্ত শিল্প প্রদর্শনী।