তথ্য বিশ্লেষণে বিশেষ পরিষেবা দিচ্ছে কলকাতার Ideal Analytics

তথ্য বিশ্লেষণে বিশেষ পরিষেবা দিচ্ছে কলকাতার Ideal Analytics

Wednesday October 14, 2015,

3 min Read

দেশের আইটি হাব হিসেবে পরিচিত বেঙ্গালুরু। কলকাতায় নাকি প্রযুক্তি নিয়ে ভালো কেরিয়ার গড়া যায় না, একথা বলে অনেক বাঙালিই নাক সিঁটকোন। ইঞ্জিনিয়ারি, বিশেষত কম্পিউটার বা আইটি নিয়ে পড়ার পর হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু বা চেন্নাইতে পাড়ি দেওয়াই এখন এখানকার নবীন প্রজন্মের ট্রেন্ড। তবে ইচ্ছে থাকলেই যে উপায় হয় এবং স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষেই হয়, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ-আইডিয়াল অ্যানালিটিক সলিউশন্স। 

image


এটি কলকাতার একটি বিগ ডেটা এবং অ্যানালিটিক্স কোম্পানি। এই কোম্পানির মূল প্রোডাক্ট হল সেল্ফ সার্ভিস ডেটা ডিসকভারি প্ল্যাটফর্ম যার সাহায্যে ব্যবহারকারী ব্যক্তি বা সংস্থা যেকোনও সময় তাদের তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ করতে পারে এবং গোপন তথ্য ফাঁস না করেই নিজেদের প্রয়োজনীয় তথ্যের বিশ্লেষণ করতে পারে। মূলত বড় ব্যবসায়ী সংস্থার ক্ষেত্রেই এধরণের পরিষেবার প্রয়োজন হয়ে থাকে।

'আমরা ব্যবহরকারী সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষমতা তাঁদের হাতেই তুলে দিতে চাইছি। এর জন্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ন্যুনতম জ্ঞান থাকলেই যথেষ্ট,' বললেন সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা সঞ্জয় চট্টোপধ্যায়। প্রো-অ্যাকটিভ সলিউশনের বিশেষ সুবিধা তাঁদের প্রোডাক্টকে অন্য মাত্রা দিয়েছে বলেই মনে করেন আইডিয়াল অ্যানালিটিক সলিউশন্সের কর্মীরা। 'ব্যবহারকীরা যখন তাঁদের ডেটা ব্যবহার করেন না তখনও আমরা পুরো সিস্টেমকে মনিটর করি। আপনি যদি আপনার বিজনেস রুল আমাদের বলে দেন এবং তথ্য বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত মানদণ্ড আমাদের জানান, তাহলে আমাদের মনিটরিং সর্বদা চলতে থাকে। ন্যুনতম কোনও পরিবর্তন মনে হলেই, বা কোনওভাবে আপনার সিস্টেম ভুল পথে চলছে বুঝতে পারলেই আমাদের তরফ থেকে সরাসরি অ্যালার্ট বা সতর্কবার্তা পৌঁছে যাবে আপনার কাছে।' জানালেন সঞ্জয়

কীভাবে কাজ শুরু হল:

সংস্থার দুই প্রতিষ্ঠাতা সুকুমার চক্রবর্তী এবং সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় একই সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। দুজনই ডেটা মাইনিং-এর ক্ষেত্রে কাজ করতেন। সঞ্জয় বললেন,'আমরা লক্ষ্য করছিলাম, প্রায় প্রতিটি সংস্থাই কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ERP বা Enterprise Resource Planning সিস্টেম রাখলেও ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে কাজের কাজ হচ্ছিল না।' সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বিষদে বলা থাকলেও কাজের ক্ষেত্রে নানারকম ভুল ধারণা, অন্য ব্যবসার তরফে ডেটা নেভিগেশন এবং সঠিক মানদণ্ডের অভাবে কিছুতেই চাহিদামতো ফলাফল মিলছিল না। আজকালকার দিনে ডেটা সোর্সের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। সোশ্যাল মিডিয়া, বিজনেস নেটওয়ার্ক, অন্যান্য মার্কেট ডেটা, এতকিছু রয়েছে যে সঠিকভাবে হিসেব করতে পারাটাই আসল। 'এমন একটা টুল যা এন্ড টু এন্ড বিজনেস ইন্টেলিজেন্স স্পেক্ট্রামে কাজ করতে পারবে, ব্যবহারকারী এবং বিশ্লেষণকারীর কাছে অর্থপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দিতে পারবে, তার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম আমরা,' জানালেন সঞ্জয়। 'এই উপলব্ধি থেকেই জন্ম নেয় আমাদের টুল-সলিউশন Ideal Analytics।' প্রথম থেকেই সহজ কোনও নাম দেওয়ার ইচ্ছে ছিল সংস্থার নির্মাতাদের। 'প্রথমদিকে মার্কটিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা আমাদের কাছে ছিল না। আর আমাদের প্রথম কাস্টমার ছিল ইওরোপে। ফলে সব দেশে সহজে বোধগম্য হবে এমন একটা নাম দরকার ছিল।' সেই কারণেই এই নাম রাখার সিদ্ধান্ত হয়।'

কলকাতাকে বেছে নিলেন কেন?

সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় জানালেন, তাঁদের জন্য কলকাতার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ISI (Indian Statistical Institute)। তিনি আরও বলেন, 'আমরা বিশ্লেষণমূলক একটি প্রোডাক্ট প্রস্তুত করছিলাম। যার জন্য স্ট্যাটিস্টিশিয়ানদের সাহায্য প্রয়োজন ছিল। আমার ধারণা, সম্পূর্ণরূপে প্রযুক্তিনির্ভর প্রোডাক্ট তৈরী করতে হলে তা বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদেই করা উচিত। কিন্তু যেখানে প্রোডাক্ট ডেভেলপার এবং স্ট্যাটিস্টিশিয়ানদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে সেখানে কলকাতাই শ্রেষ্ঠ জায়গা। এখানে থাকা এবং আনুষঙ্গিক খরচ অনেক কম। ফলে কম খরচে খুব সহজেই উচ্চমানের জিনিস প্রস্তুত করা যায়। তবে এইসব ক্ষেত্রে সেল্‌স এবং মার্কেটিং টিম মুম্বই-বেস্‌ড হওয়াই শ্রেয়।'

টিম আইডিয়াল অ্যানালিটিক্স

টিম আইডিয়াল অ্যানালিটিক্স


সংস্থার সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য:

এখন আইডিয়াল অ্যানালিটিক সলিউশন্স-এর অন্তত ২০টি এন্টারপ্রাইজ কাস্টমার রয়েছে। যার মধ্যে Salesforce, Blackberry, VMware, Euler Hermes, Serco উল্লেখযোগ্য। সংস্থায় প্রায় ৩০০০ ক্লাউড কাস্টমারের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। যাঁদের মধ্যে ৩০০ থেকে ৪০০ জন পেড কাস্টমার। এবছর সংস্থার আয় ১ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। প্রোডাক্টের লাইসেন্স এবং পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে রেভিনিউ আসে সংস্থার। মূলত ইওরোপ এবং ভারতেই গ্রাহক রয়েছে এই কোম্পানির। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ডেটা মার্কেট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানকার ব্যবসায়ী সংস্থাগুলির কাছে পৌঁছতে পারাই আডিয়াল অ্যানালিটিক্সের লক্ষ্য। একবার সেখানে পাড়ি দিতে পারলে অর্থের জোগান প্রয়োজন তা জানেন সংস্থার কর্ণধারেরা। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারী খুঁজে পাওয়াই এখন এই সংস্থার মূল লক্ষ্য।