ঘরের আনন্দ ফেরাতে হাউসজয়

ঘরের আনন্দ ফেরাতে হাউসজয়

Saturday November 07, 2015,

4 min Read

ঘরের ফ্রিজ খারাপ হয়ে গিয়েছে, মনিটর নষ্ট হয়ে গিয়েছে ল্যাপটপের, টিভির ছবি ঝাপসা হয়ে আসছে। ঘরে জিনিস থাকলে খারাপ হবেই। আর খারাপ হওয়া মানেই মিস্ত্রি ডেকে সারানো বা মেকানিকের কাছে যাওয়া। কিংবা ধরুন ঘরদোর পরিষ্কার। বহুদিন ভালো করে সাফাই হয়নি। কোথাও রঙ চটে গিয়েছে, কোথাও সিলিঙে ঝুলের আ43স্তরণ। পরিষ্কার করে নিলেই হয়। কিন্তু অফিস সামলে সময় কোথায়? আসলে অনেকেরই উৎসবের সময় এলে মনে হয় ঘরদোর পরিষ্কার করা দরকার। তখনই মাথায় হাত। সপ্তাহে একটা মাত্র ছুটির দিন। একটু আরাম না করলে চলে! এমনই সব পরিবারের মুশকিল আসান করতে তৈরি শুরুয়াতি সংস্থা 'হাউসজয়' (Housejoy)। ঘরদোর পরিষ্কার, ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেটস সারাই-সহ বিভিন্ন গ্রাহক পরিষেবা দিয়ে থাকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই সংস্থা। হাউসজয় গড়ে তোলার মূল উদ্যোগী দু'জন। সুনীল গোয়েল এবং অর্জুন কুমার।

দু'দশকেরও বেশি সময় TESCO-তে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেছেন সুনীল। এরপর সুনীল যোগ দিয়েছিলেন TutorVista সংস্থায়। সেখানে শুরুয়াতি সংস্থা কীভাবে কাজ করে তার অপারেশনস ও লার্নিং বিভাগটি সামলাতেন তিনি। টিউটরভিস্তার পরবর্তী পর্যায়ে সুনীল শুরু করেন VUFirst. যা একটি ভিডিও প্ল্যাটফর্ম। কোনও সংস্থায় কর্মী নিয়োগের আগে প্রার্থীদের বাছাই করার দিকটি দেখত ভিইউফার্স্ট।TutorVista-তে কাজ করার সময়েই অর্জুনের সঙ্গে পরিচয় হয় সুনীলের। একসময় Bookadda নামে একটি সংস্থা চালান অর্জুন। এমনকী ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার ফান্ডিংও তুলে ফেলেছিলেন। পরবর্তীসময়ে বুকআড্ডা অধিগ্রহণ করে Sapna Group. প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট থেকে পেমেন্ট সিস্টেম, বিভিন্ন কোম্পানির হয়ে ১০ বছরেরও বেশি কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে অর্জুনের। সেই দু'জনে মিলেই গড়ে তোলেন হাউসজয়।

ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেটস সারানো, ঘরের সৌন্দর্যায়ন ক্ষেত্রে যে ব্যবসার বহুল সম্ভাবনা রয়েছে তা বুঝে যান সুনীল-অর্জুন। ব্যাপারটা আরও ভালো করে বুঝতে বহু গৃহস্থ (এরাই মূলত গ্রাহক বা কাস্টমার) এবং পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা বা ভেন্ডরদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। গ্রাহক ঠিক কী চান, কেন চান, কোথায় তাদের সমস্যা ইত্যাদি বিষয় বুঝে নেন দু'জনে। কথা বলেন বহু ভেন্ডরের সঙ্গেও। তারাও কী চান, কেন চান, পেমেন্ট নিয়ে তাদের অভাব-অভিযোগ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়। গ্রাহক এবং সার্ভিস প্রোভাইডার-ভেন্ডরদের মূল সমস্যার জায়গা চিহ্নিত করে নেন সুনীল-অর্জুন। একপক্ষ পরিষেবা নেবে, একপক্ষ পরিষেবা দেবে। একপক্ষ চায় ভালো পরিষেবা, অন্যপক্ষ চায় কাজের উপযুক্ত পারিশ্রমিক। সুনীল বললেন,"পরিষেবা নিতে ইচ্ছুক কোনও গ্রাহক তার কনট্যাক্ট ডিটেলস তুলে দেন সার্ভিস প্রোভাইডারকে। সেই কাজের জন্য বিভিন্ন ভেন্ডর ফোন করেন গ্রাহকদের। প্রথমত দেখা যায় অসংখ্য ফোন সামলাতে হচ্ছে গ্রাহককে। তারপর একই কাজের জন্য ভেন্ডররা বিভিন্নরকম রেট বলছে। যা বেশ বিভ্রান্তিকর। ভেন্ডর কেমন পরিষেবা দেবে সেটাও পরিষ্কার নয়। সবমিলিয়ে গ্রাহক বুঝে উঠতে পারেন না কাকে কাজটা দেওয়া উচিত"।

সার্ভিস প্রোভাইডারদের ক্ষেত্রে কী অসুবিধা রয়েছে তাও বোঝার চেষ্টা করেন সুনীল-অর্জুন। সুনীলের কথায়, "সার্ভিস প্রোভাইডারদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম যে তাদেরও উদ্বেগের জায়গা রয়েছে। ভেন্ডরদের কাজের বরাত দিলেই টাকা মিটিয়ে দিতে হয়। পরবর্তী সময়ে সেই কাজ থেকে লাভ হবে কি না তা তখনও নিশ্চিত নয়। এর ওপর রয়েছে গ্রাহকের অবস্থান। বেঙ্গালুরু জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছেন এইসব গ্রাহক। সেইসব ঠিকানা খুঁজে বের করে পৌঁছতে অনেকটা সময় লেগে যায়। এমনও হয়, নির্দিষ্ট বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল, সমস্যা মিটে গিয়েছে"।

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে হাউসজয় শুরু করার পরে অবশ্য সুনীল-অর্জুনকে পিছন ফিরে দেখতে হয়নি। শুরুতে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০টি কাজের অর্ডার মিলত। এখন বেঙ্গালুরু-সহ ১০টি শহরজুড়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দৈনিক চার হাজারের বেশি। বেঙ্গালুরু দিয়ে শুরু হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই দিল্লি, আমেদাবাদ, পুনে, মুম্বই, হায়দরাবাদ, জয়পুর, সুরাত, চন্ডীগড় ও চেন্নাইয়ে ব্যবসা ছড়িয়ে ফেলেছে হাউসজয়। সম্প্রতি হাউসজয়ে CEO পদে যোগ দিয়েছেন Flipkart-এর ex VP- Products সারন চ্যাটার্জি। নিজের যোগদানের কথা জানাতে গিয়ে সারন বললেন,"মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহুদিন কাজ করার পরে দেশে ফিরতে চাইছিলাম। দেশেও ফিরলাম। মার্কিন মুলুকে যেভাবে কাজ হয় এখানেও তেমন কোনও সংস্থায় যোগ দিতে চাইছিলাম। সমাজজীবনের কোনও সমস্যার সমাধান করতে আমি আনন্দ পাই। সেই সংস্থা যদি ছোট হয় তাতেও আপত্তি নেই। আমি যেমনটা চেয়েছিলাম ঠিক সেটাই করে হাউসজয়"।


image


বর্তমানে ভারতের দশটি শহরজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে চলেছে হাউসজয়। এর মধ্যে রয়েছে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন সারানো, এয়ার কন্ডিশনারস, ইলেকট্রনিক্স প্লাম্বিং, কার্পেন্ট্রি ও লন্ড্রি। খুব শিগগরিই বাড়িতে গিয়ে দু'চাকা, চার চাকা সারানোর কাজও তালিকায় জুড়তে চলেছে। এইসব কাজের জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সংস্থা। কনে সাজানো, সৌন্দর্যায়নের (beauty and wellness) মতো পরিষেবাও দিয়ে থাকে হাউসজয়। এজন্য কিছু কর্মীও নিয়েছে সংস্থা। যারা পে রোলে রয়েছেন। এখন জিনিস সারাই বা পরিষ্কার করতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে। হয়তো দামি কোনও জিনিস ভেঙে গেল। সেক্ষেত্রে গ্রাহককে সর্বাধিক ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে হাউসজয়। ভুলটা যদিও সার্ভিস প্রোভাইডারের। ফলে দুই অর্থেই গ্রাহক খুশি হচ্ছেন। ভালো পরিষেবা, সঙ্গে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস। অন্যদিকে এর ফলেই সুনাম কুড়োচ্ছে হাউসজয়।

দশটি শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না হাউসজয়। আগামী ছ'মাসের মধ্যে আরও বেশি শহরে ছড়িয়ে পড়তে চায় সংস্থা। মূল লক্ষ্য রোজ এক লক্ষ অর্ডার। কাজের বরাত ঠিক এতটাই চান উদ্যোক্তারা। চলতি বছরেই

Matrix Partners থেকে চল্লিশ লক্ষ ডলারের Series A ফান্ডিং পেয়েছে সংস্থা। ব্যবসা ছড়িয়ে দিতে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অ্যাপ চালু করা হয়েছে। খুব শিগগিরই Apple ও Windows-এও অ্যাপ আনা হবে। আর যদি প্রতিযোগিতার কথা বলতেই হয়, হ্যাঁ, চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগতে হচ্ছে হাউসজয়কে। একই ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে বেশ কয়েকটি সংস্থা। এর মধ্যে প্রথমেই নাম করতে হয় Justdial-এর। রয়েছে HelpChat, Bro4U. তবে বাজার বিশাল। বলা যায়, ভারতীয়রা ধীরে-ধীরে এমন পরিষেবাই চাইছেন। তাই আরও স্টার্টআপের জন্য দরজা খোলাই রয়েছে।