ভাওয়াইয়া গান বাঁচাতে বাংলা নাটকের উদ্যোগ

ভাওয়াইয়া গান বাঁচাতে বাংলা নাটকের উদ্যোগ

Monday April 17, 2017,

2 min Read

লোকগীতি নানান ধারায় বয়ে গেছে। নানান পরস্থিতিতে নিম্নবর্গের মানুষের আবেগ যখন সুরের ভেলায় চরে অবতীর্ণ হয়েছে তখন থেকেই ওইসব লোকগান একএকটি স্রোত তৈরি করেছে। নদীর মাঝি যখন গায় তখন তা ভাটিয়াল, গরুর গাড়ির গাড়োয়ান যখন গায় তখন সেটা ভাওয়াই। জীবনের মৌলিক আবেগ সুরের আর্তি নিয়ে এক একটি ধারায় প্রবাহিত হয়ে আসছে সেই প্রাচীন কাল থেকে। বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতির লৌকিক বিস্তারও ঘটেছে এই পথে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লৌকিক জীবন প্রবল বিক্রমে যখন বদলে গেছে, মুছে যেতে বসেছে তাঁর এতদিনের ঐতিহ্য। হারিয়ে যেতে বসেছে সেই সব লৌকিক শিল্প, সাহিত্য এবং সঙ্গীত। এরকমই এনডেঞ্জারড শিল্প শৈলী ভাওয়াইয়া গান। মূলত এপার ওপার দুই বাংলার উত্তরাঞ্চলের এই শিল্প কে বাঁচিয়ে তুলতে উদ্যোগ শুরু হয়েছে। তারই অঙ্গ হিসেবে এই প্রথমবার আলিপুরদুয়ারে আয়োজিত হল ভাওয়াইয়া মেলা।

image


লোকসঙ্গীত এবং লোকনৃত্যকে নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে মেলা। সেই তালিকায় রয়েছে- পটচিত্র, ছৌ, বাউল। বিভিন্ন আঞ্চলিক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের কোনও খামতি নেই। এবার নবতম সংযোজন ভাওয়াইয়া। হারাতে বসা এই লোকসঙ্গীতকে নিয়ে আলিপুরদুয়ারে ক্ষুদ্র, ছোট মাঝারি শিল্প ও বস্ত্র দপ্তর এবং ইউনেস্কোর সহায়তায় বাংলা নাটক ডট কম এর উদ্যোগে শুরু হয়েছে রাজ্যর প্রথম ভাওয়াইয়া মেলা। মেলা মানে সবাই এক জায়গায় জড়ো হওয়ার একটা উপলক্ষ্য। আমরা ভেবেছিলাম প্রায় হারিয়ে যেতে বসা ভাওইয়া সুরের মেলা বসলে মানুষ আসবে, জানার আগ্রহ হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিতি পাবে ভাওইয়া সুর, মেলার উদ্দেশ্য বলছিলেন বাংলা নাটক ডট কমের ফাউন্ডার ডিরেক্টর অমিতাভ ভট্টাচার্য।

ভালোবাসা, বিরহ আর আবেগঘন গান ভাওয়াইয়া। সেই সুরের টানে আজও জড়ো হন অগুণতি মানুষ। তাই মেলার প্রথম দিনেই হাজির হয়েছিলেন আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার প্রায় ১৪০০ ভাওয়াইয়া শিল্পী। তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়েচেন বলরাম হাজরা, সুনীল দাস, ধনঞ্জয় রায়ের মতো প্রবীণ শিল্পীরা। ‘নবীন শিল্পীরা পাশ্চত্য সঙ্গীতে আকর্ষিত হলেও, প্রকৃত সঙ্গীত শিক্ষা সম্ভব লোকসঙ্গীতের মাধ্যমেই। তাই ভাওয়াইয়া অনিবার্য। কারণ, এ যে ভালোলাগার গান’, বলেন শিল্পী নজরুল ইসলাম।

আর এই ভাওয়াইয়াকে বাঁচিয়ে রাখার, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে মশগুল শিল্পীরা। রাজ্যের উদ্যোগ এবং ইউনেস্কোর সহযোগিতায় প্রথমে ৩ হাজার হস্তশিল্পীকে নিয়ে রাজ্যে ১০টি গ্রামীণ হস্তশিল্প গড়ে তোলা হয়। পরবর্তিতে এই প্রকল্পের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় রাজ্যের উত্তরের দুই জেলার ১৪০০ ভাওয়াওইয়া শিল্পীকে। গড়ে তোলা হয় রুরাল ক্রাফট অ্যান্ড কালচারাল হাব। এরই মাধ্যেমে হারিয়ে যেতে বসা এই মাটির গানকে তুলে ধরা হবে বিশ্বের দরবারে।