অনন্যার অন্তরায় সে সোনার চামচ মুখে জন্মেছে
Friday November 25, 2016,
4 min Read
পদবী বিড়লা হলে তো বিড়ম্বনায় পড়তে হবেই। ভারতের প্রসিদ্ধ শিল্পপতি বিড়লা পরিবারের মেয়ে হওয়ার সুবাদে অনন্যা বিড়লাকেও পদে পদে ভুগতে হয়েছে। আসলে বিড়লা পদবীটাই স্বতন্ত্রভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই যেন বিরাট বাধার মতো। বাধাটা স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই যেন অন্তরায়!
অনন্যাকেও এই বাধা টপকাতে হয়েছে। বিদেশে পড়তে গিয়ে কিংবা স্বদেশেও এই দুস্তর বাধা টপকাতে অনন্যা যে শেষমেশ সফল হয়েছেন, সে জন্য তিনি তাঁর বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। অনন্যা বলেছেন, আমার বাবা-মা বরাবরই চেয়েছেন, আমি যেন নিজের মতো করে, নিজের ইচ্ছানুসারে বেড়ে উঠি। জীবনবিকাশের ক্ষেত্রে আমার পারিবারিক পরিচয় বা বৈভব যেন বাধা না হয়ে ওঠে।
কাছের অভিভাবকদের এইটুকু প্রেরণার বশে অনন্যাও সফল হচ্ছেন নিজের মতো করে দেখা স্বপ্নগুলিকে ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত করে তুলতে। এ মুহূর্তে ভারতের বিশিষ্ট মহিলা উদ্যোগপতি হিসাবে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। একজন মহিলা উদ্যোগপতি হিসাবে এ দেশের সাধারণ মানুষের সেবা করা নয়া জমানার একজন উদ্যোগী হিসাবে অনন্যার মূল লক্ষ্য।
বিড়়লা পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম হলেন অনন্যা। ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ার বাইরের আরও বিভিন্ন বিষয়েই তাঁর আগ্রহ। সেইসঙ্গে নানা কিছু শেখা, জানাবোঝার কৌতূহলটাও প্রবল। সে গানই হোক কিংবা ক্যালিগ্রাফি অথবা সন্তুর বা টেবিল টেনিস, সাঁতার, ফুটবল।
তবে প্রসিদ্ধ বিড়লা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে অনন্যা অত্যন্ত গর্বিত বোধ করেন। অনন্যা বললেন, আমার পরিবারের লোকজন তো আছেনই, তাছাড়া আমার বন্ধুরাও নিজের আইডিয়াগুলি নিয়ে মেতে উঠতে আমায় মদত জুগিয়েছেন। রূপোর চামচ মুখে দিয়ে জন্মালে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে যে সমস্যা দেখা যায়, বাবা-মা ছাড়াও নানান জনের প্রত্যক্ষ মদতে তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ইংল্যান্ডে লেখাপড়া করতে গিয়েও এটা খুব কাজে লেগেছে। নিজের লক্ষ্যের জন্যে লড়াই ও পরিশ্রমই আসলে মূলমন্ত্র।
নিজের আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করার খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই অনন্যা শুধু একজন সফল মহিলা উদ্যোগপতিতে হিসাবেই সাফল্য পাননি, পাল্টে দিয়েছেন এ দেশের বহু সাধারণ গ্রাম্য নারী-পুরুষের জীবন। সেই কাহিনিই সংগ্রামের ময়দানে সোনার ফসল ফলিয়েছে। অনন্যা নিজে একজন সঙ্গীতজ্ঞাও। সঙ্গীত নিয়ে ছেলেবেলা থেকেই তাঁর অসীম আগ্রহ। যখন নিজে কিছু করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছিলেন, সেই সময় স্টার্ট আপ সম্পর্কেও আগ্রহী হয়ে পড়েন। অনন্যার এই আন্তরিক আগ্রহের ফসল স্টার্ট আপ স্বতন্ত্র।
অনন্যার কথায়, মাইক্রো ফিনান্স নিয়ে যখন আমি কাজে নামব ভেবেছিলাম, সেই সময় দেখলাম এ ক্ষেত্রে কাজ করার মতো ফাঁকা জায়গা আছে। আসলে এই ক্ষেত্রটি প্রায় অসংরক্ষিত ক্ষেত্র। অনন্যা আরও বললেন, যদি দরকারের সময় কিছু টাকা হাতের কাছে পাওয়া যায়, তাহলে অনেক সময়ই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভীষণ উপকৃত হন। ওই টাকাটা ব্যবসার কাজে লাগিয়ে নিজের ছোট ব্যবসাটি আরও কিছুটা বাড়িয়ে ফেলতে পারেন। এই ভাবনা থেকে আমি মাইক্রো ফিনান্সকে কাজের ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নিয়েছিলাম। আর স্বতন্ত্রও আত্মপ্রকাশ করল।
অনন্যার এই ব্যাখ্যা যে তাঁর দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক ইতিমধ্যে তা প্রমাণিত। ২০১৩ সালে অনন্যার স্টার্ট আপ স্বতন্ত্র কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে স্বতন্ত্রর বার্ষিক বাড়বৃদ্ধির হার ৩৩০ শতাংশ। টাকার মূল্যে এর পরিমাণ এখন ১৭৬ কোটি।
এছাড়াও, আরও জানা গিয়েছে, স্বতন্ত্রর গ্রাহক সংখ্যা এখন ১ লক্ষ ৪০ হাজার। সারা দেশের ৫ হাজার ৩০০ গ্রামের ৫ লক্ষ মানুষ স্বতন্ত্রর মাধ্যমে আর্থিকভাবে উপকৃত হয়েছেন। অনন্যা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে স্বতন্ত্রর তরফে তাঁদের ৫০ শতাংশ গ্রাহকের নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭০ হাজার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। স্বতন্ত্র ন্যূনতম হারে সুদ নিয়ে থাকে। সম্প্রতি আর একটি নতুন উদ্যোগের সূচনা করেছেন। অনন্যার স্বপ্নের উদ্যোগ ‘CuroCarte’ বৃহত্তর ক্ষেত্রেও আশাজনকভাবে বাড়ছে।
অনন্যার নেশা বেড়ানো। তিনি বললেন, অনেক জায়গায় বেড়াতে গিয়েই দেখেছি, ইতিউতি অনাদৃত শিল্পীরা কী সুন্দর সব জিনিসপত্র বানিয়ে থাকেন। কোনও কোনওটির অবাক করার মতোই নকশা। আমি এই জিনিসগুলিকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে পরিচিত করাতে চাই। তুলে দিতে চাই মানুষের হাতে। এই উদ্দেশেই তৈরি করেছি ‘CuroCarte’। আমাদের যে কোনও প্রোডাক্ট একজন ক্রেতা হিসাবে আপনাকে অবাক করবেই। উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে অনন্যার হাতে গড়া এই নতুন উদ্যোগের পথচলা শুরু। ‘CuroCarte’ –এর ওয়েব সাইটে এখন ভারতের ২২টি রাজ্যের হস্তশিল্প শোভিত হচ্ছে। এ ছাড়াও রয়েছে পৃথিবীর ৯টি দেশের হস্তশিল্পীদের বিচিত্র শিল্প কাজ।
অনন্যা জানিয়েছেন, পণ্যের গুডউইল বজায় রাখতে আমরা সদাসতর্ক। প্রতিটি পণ্যের গুণগত মান ইন্টারন্যাশনাল ল্যাবে ভালভাবে পরীক্ষিত। এ ক্ষেত্রে ছয় দফা পরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। খুব শীঘ্রই ‘CuroCarte’ পৃথিবীর অন্য কয়েকটি দেশেও ব্যবসায় নামবে বলে জানালেন অনন্যা। সহজ-সরল এবং শৃঙ্খলায় মোড়া জীবন যাপন করেন বিলিয়ন ডলার বিড়লা পরিবারের মেয়ে অনন্যা। খুব ভালবাসেন নিজের পোষ্য সারমেয় স্কাইকে। দিনের কিছুটা সময় ওর সঙ্গে কাটে।
খুব ব্যস্ত জীবন কাটাতে হয় অনন্যাকে। সপ্তাহান্তেও মেলে না নিখাদ অবসর। কেননা সপ্তাহান্তের ফুরসত নিজের আর একটি ভাললাগা সঙ্গীতের জন্যে বরাদ্দ।