কলকাতায় ইকোসিস্টেম আছে, বলছেন অভিষেক

কলকাতায় ইকোসিস্টেম আছে, বলছেন অভিষেক

Monday May 16, 2016,

4 min Read

অভিষেক রুংটা। দেশের হাতে গোণা অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের একজন। কলকাতার ছেলে। এই শহরের আনাচ কানাচ গলি ঘুপচি সব চেনেন। এই শহরও জানে ওর প্রথম সব কিছু। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের কমার্সের ছাত্র। ছাত্রাবস্থা থেকেই রোজগেরে। ক্লাস ইলেভেনে যখন পড়তেন শুরু করেছিলেন তখন থেকেই। প্রথমে চাকরি করতেন। হাত খরচের জন্যে। বাবা ব্যবসায়ী। স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে। তবু বাবার কাছে হাত পেতে টাকা চাওয়া তার আত্মসম্মানে লাগত। কলেজে পড়তে পড়তেই এটা সেটা করার নানা পরিকল্পনা ছকে ফেলেছিলেন অভিষেক। 

image


১৯৯৭ সাল। ইন্টারনেট নিয়ে সবে তখন কলকাতায় বাজার গরম হচ্ছে। রোজই মগজে আইডিয়া বাল্ব জ্বলত। অনেক অনেক আইডিয়া। তখন সবথেকে বেশি জ্বলজ্বল করছিল যে আইডিয়াটা সেটা ছিল একটা ইমেল সার্ভিস সেন্টার তৈরি করার প্ল্যান। বাজার ঘুরে যা ঠাহর করলেন খরচ পড়বে কম করে ৪৬ হাজার টাকা। পরিবারের লোকজনই সহযোগিতার হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পেয়ে গেলেন আইডিয়ায় জল দেওয়ার সিডফান্ড। নিজের কম্পিউটার ছিলই ফলে নতুন করে কম্পিউটার কেনার খরচ লাগল না। কিন্তু ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারই নিয়ে নিল ৩০ হাজার টাকা। কিছুদিন পর সেই টাকা নিয়ে চম্পটও দিল ওই দুর্বৃত্ত। ফলে সিড ফান্ড জলে গেল। প্রথম ধাক্কা খেলেন অভিষেক। কিন্তু এই ধাক্কাটাই অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছিল। বলছিলেন তাঁর পরের ভেঞ্চারের কাহিনি। কিভাবে মাত্র ৫০ টাকা ব্যয় করে শুরু করলেন তার পরের ব্যবসা। ব্যবসায়ীদের ওয়েবসাইট বানিয়ে দেওয়ার সার্ভিস। চটজলদি নামও দিয়ে দিলেন ইন্ডাস নেট টেকনোলজিস। তিনদিনের একটি এক্সপোয় প্রথম স্টল শেয়ার করে হ্যান্ডবিল বিলি করেন। সেখান থেকেই উঠে আসে ব্যবসা। দুটো ক্লায়েন্ট। কুড়ি হাজার টাকার কাজ। কম কি! তাও আবার ৫০ শতাংশ অগ্রিমও পেয়ে গেলেন। তিনদিনে কড়কড়ে দশহাজার টাকা। ফলে শুরু হয়ে গেল। আজ সেই সংস্থা মহীরূহ। ৫০ টাকায় শুরু করা সংস্থা আজ ৫০ কোটি ছুঁইছুঁই। স্বপ্ন দেখছেন অভিষেক ২০২০ সালের মধ্যে ১২০ কোটি ছুঁয়ে ফেলবে তার ইন্ডাস নেট টেকনোলজিস।

সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি পারি দেন আমেরিকায় স্নাতোকোত্তর স্তরে মাল্টিমিডিয়া নিয়ে পড়াশুনো করতে যান। আরও ভালো করে শেখেন ওয়েব ডিজাইনিং, ওখানে থেকেই ইংল্যান্ডের একটি সংস্থার হয়ে ওয়েব ডিজাইনিংয়ের কাজ করতেন। ২ হাজার জলারের চাকরি। আর ততদিন তাঁর সংস্থা সামলাতেন তাঁর বোন। ফিরে এসে দেখলেন বাজারে আরও অনেক সংস্থা গজিয়ে উঠেছে যারা ওয়েব হোস্টিংয়ের কাজ করে। তাই এবার মন দিলেন ডিজাইনিংয়ের দিকে। এইভাবে ধীরে ধীরে নিজেকে বদলে বদলে এগিয়েছেন অভিষেক। এগিয়েছে ইন্ডাস নেট টেকনোলজিস। একের পর এক পালক জুড়ে গেছে মুকুটে। ডালহৌসি স্কোয়ারের অফিস থেকে এসেছেন সল্টলেক সেক্টর ফাইভে। অফিস খুলেছেন চেন্নাইয়ে। ইউকে এবং ইউএসএ তেও খুলেছেন তাঁর সংস্থার দফতর। ওয়েব হোস্টিং থেকে ডিজাইনিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, সফ্টঅয়্যার ডেভেলপমেন্ট হয়ে এখন ইন্ডাস নেট মানে একটি বড় ব্র্যান্ড। সম্প্রতি TechShu নামে একটি Digital Marketing সংস্থা অধিগ্রহণ করল অভিষেকের ইন্ডাসনেট। দশ লক্ষ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এই অ্যাকুইজিশনের ফলে পূর্বভারতের সব থেকে বড় ডিজিটাল মার্কেটিং সংস্থা হয়ে গেল ইন্ডাসনেট টেকশু।

image


গত দশ বছরে অভিষেক বিনিয়োগ মানচিত্রের একটি উল্লেখ যোগ্য তারা হয়ে উঠেছেন। স্টার্টআপদের সিডফান্ড দিয়ে থাকেন। নিজের শুরুর দিনগুলো কখনও ভোলেন না অভিষেক। তাই কথা বলেন খোলাখুলি। একটি একান্ত আলাপচারিতায় বলছিলেন কলকাতার স্টার্টআপদের নিয়ে। স্টার্টআপদের জন্যে শনিবারটা ফাঁকা রাখারই চেষ্টা করেন। সারা সপ্তাহে অগুণতি মেসেজ পান, দেখা করতে চাই গোছের। কিন্তু পিচিং-এর সময় দেখা যায় অধিকাংশ স্টার্টআপই নিজেদের উদ্যোগের বিষয়টা নিয়ে পরিস্কার ধারণাই রাখেন না। অনেক সময় টার্গেট মার্কেট সম্বন্ধে স্বচ্ছতা থাকে না। গবেষণায় খামতি থেকে যায়। বড্ড উপরি উপরি ভাবনা নিয়ে আসেন নবীন উদ্যোগপতিরা। তার ওপর নিজের আইডিয়ার ব্যপারে উদ্যোগপতিরা অতি মাত্রায় স্পর্ষকাতর। কিছু বলার আগেই এনডিএ ধরিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থাকে। অভিষেকের মতে সন্দিগ্ধমনা কলকাতার এই আবেগপ্রবণতাই সব থেকে বড় সমস্যা। স্টার্টআপদের বিকশিত হওয়ার পিছনে সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজনয়ীতা যে রয়েছে সেকথা বারংবার স্বীকার করেন রুংটা। বলছিলেন যেটুকু পরিকাঠামো দরকার তার অনেকটাই কলকাতায় আছে। কিন্তু তার থেকেও অনেক বেশি করে প্রয়োজন ব্যবসা করার মানসিকতার। কলকাতায় ইকো সিস্টেম নেই যারা বলেন তাঁদের সঙ্গেও একমত নন এই উদ্যোগপতি। তার মতে ইকোসিস্টেম নেই যারা অভিযোগ করেন তারা অনেক সময়ই বলতে চান বিনিয়োগকারী নেই। কিন্তু কলকাতাতেই কয়েকশ মানুষ থাকেন যাঁরা বিভিন্ন স্টার্টআপ সংস্থায় বিনিয়োগ করেন। এবং এটাই তাঁদের ব্যবসা। ফলে সমস্যাটা ঠিক কোথায় সেটা অনুসন্ধান করাটাই আসল কাজের কাজ।