এখন নকশালবাড়ি ফুলে ফুলে রাঙা

এখন নকশালবাড়ি ফুলে ফুলে রাঙা

Wednesday January 06, 2016,

3 min Read

পাহাড়ের কাছে। তবু পাহাড়ের মতো আবহাওয়া নয়। প্রকৃতি মনমতো না হলেও তার মধ্যেই নকশালবাড়ি জুড়ে সবুজের অভিযান। এক সময় নকশালবাড়ি উগ্র হিংসাত্মক আন্দোলনের ধাত্রীভূমি ছিল। এখন সেখানে নানা রংয়ের ফুলে ফুলে ঢাকা। নিজের বাড়িতেই বাহারি পাতার গাছ আর ফুলচারা লাগিয়ে আত্মনির্ভরতার পথ পেয়েছেন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।

image


আদিবাসী, নেপালী, বাঙালি, বিহারী। নানা বর্ণ, ভাষা, জাতির সহাবস্থান তরাইয়ের নকশালবাড়ি জুড়ে। শিলিগুড়ি লাগোয়া এই ব্লকের বাসিন্দারা মূলত কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। ধান, গম, ভুট্টার মতো প্রথাগত শস্য ফলিয়ে এখন আর তেমন লাভ হয় না। নতুন পথ খুঁজতে কয়েক বছর আগে রাজ্য সরকারের ডিআরডিসির উদ্যোগে ওই এলাকায় ফুল, বাহারি গাছ ও অর্কিড চাষ শুরু হয়। এলাকার ৪১টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে এক ছাতায় ‌আনার পর সবুজের সমারোহ ক্রমশ বাড়তে থাকে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ এই কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন।

ঠিক হয় নিজের জমিতেই চাষ করতে পারবেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। আগে নিজেদের মনের খোরাক মেটাতে ফুলগাছ বা অর্কিড চাষ করলেও এখন এর বাণিজ্যিক চাহিদা বুঝতে পেরেছেন সুচিতা মিনজ, রূপবতী সিংহ, সরস্বতী ছেত্রীরা। সংসার সামলে জারবেরা, অ্যাভেলিয়া, ব্লমিনেট, সিডাম, গাঁদা সহ নানা রকম ক্যাকটাস, অর্কিড নিজেদের বাগানে তাঁরা তৈরি করেন। গোষ্ঠীর সদস্যরা চাষের ব্যাপারে জৈব সার ব্যবহার করেন। নতুন পথের সুবাদে সারা বছর কাজ পান গোষ্ঠীর সদস্যরা। গোটা কর্মকাণ্ড দেখভাল করেন কৃষ্ণ দাস নামে স্থানীয় এক যুবক।

নিজেদের বাগানের ফুল, গাছ বিক্রি নিয়ে চিন্তা করতে হয় না গোষ্ঠীর সদস্যদের। শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারে নকশালবাড়ির এসব জিনিসের ভাল চাহিদা। বিভিন্ন নার্সারি সরাসরি তাদের থেকে গাছ কিনে নেয়। ফুল ব্যবসায়ীরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাহাড়ের কালিম্পংয়ে ভাল অর্কিড হলেও তা বাইরে চলে যায়। তুলনায় নকশালবাড়ির অর্কিড অনেক কম দামে মেলে। তাই এর বিক্রি নিয়ে খুব একটা সমস্যা নেই। নকশালবাড়ির দেশবন্ধু পাড়া, লালফুল, হাতিগিসার মতো এলাকাগুলি এখন সারা বছর সবুজ। নকশালবাড়িতে আটকে না থেকে কলকাতা, পশ্চিম সিকিমের জোরথাং-এ বিভিন্ন প্রদর্শনীতে যায় এখানকার ফুল, চারাগাছ, অর্কিড। মেলা, প্রদর্শনীতে লাখ টাকার

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কোষাধ্যমক্ষ কৃষ্ণ দাস বলেন, “আমাদের ফুল, গাছের চাহিদা যথেষ্ট। মানুষের যাতে রোজগার আরও বাড়ে তার জন্য আমরা চাষের এলাকা বাড়াতে চাইছি। আরও আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের চিন্তাভাবনা হচ্ছে। যাতে সময়ের সাশ্রয় হয়, আবার আয়ের পরিমাণও অনেকটা বাড়বে।” রোজগারের নতুন পথ পেয়ে মন দিয়ে এখন বাড়িতেই বাগান করছেন সুচিতা, রূপবতীরা। টাটকা ফুল, গাছ ও অর্কিডের খোঁজে শিলিগুড়ি থেকে বহু ব্যেবসায়ী পৌঁছে যাচ্ছেন নকশালবাড়ির গ্রামগুলিতে। বিয়েবাড়ি থেকে পার্টি। সবরকম চাহিদা মেটায় এলাকার নার্সারিগুলি। হাতিগিসার বাসিন্দা রূপবতী সিংহ স্কুল ছাত্রী। পড়াশোনার ফাঁকে বাগানের নেশা তাঁর চেপে বসেছে। কিশোরীর কথায়, “আগে আমরা নিজেদের প্রয়োজনে বাড়িতে ফুল গাছ লাগাতাম। এখন আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করে বুঝতে পারছি সবদিক দিয়েই তফাত। গাছ, ফুল, অর্কিড বিক্রি করে মাসে অন্তত তিন হাজার টাকা আমাদের থাকে। সংসারে কিছুটা অবদান রাখতে পেরে ভাল লাগছে।” এই ভাললাগা, তৃপ্তির রেশ এখন গ্রামগুলিতে। গোষ্ঠীর সদস্যখরা মনে করেন এভাবে কিছুটা হল গাছ লাগানোর প্রবণতা বেড়েছে। যাদের বাড়িতে জমি নেই তারা বিক্রি ও বিপণনের কাজে থাকেন। সবুজের সুবাদে হাসি ফিরেছে নকশালবাড়ির মহল্লাগুলিতে।