মশা তাড়িয়ে মুক্তির স্বাদ পেতে চান এই মা-মেয়ে

মশা তাড়িয়ে মুক্তির স্বাদ পেতে চান এই মা-মেয়ে

Thursday March 09, 2017,

2 min Read

ট্রেনে ট্রেনে হকারদের কাছে শুনে থাকবেন মশা তাড়ানোর তেলের কথা। টিভির পর্দাতেও নামী দামী তারকারা মশা তাড়ানোর বিজ্ঞাপন দেন। কিন্তু মশা তাড়ানো কি সোজা কাজ। বিজ্ঞানীরা বলছেন শরীরের ক্ষতি করে এই মশা তাড়ানোর ধূপ, তেল। তবে উপায়? উপায়টা বাতলেছেন চুঁচুড়ার সুপর্ণা ঘোষাল।
image


বানিয়েছেন সম্পূর্ণ ভেষজ একটি ধূপ। যা মশা মারে না। মশা তাড়ায়। শরীরের কোনও ক্ষতি করে না। চোখ জ্বালা করে না। শ্বাস কষ্ট হয় না। হৃদরোগীদের আরও অসুস্থ করে দেয় না। এমন একটি ধূপ বানিয়েছেন চুঁচুড়ার সুপর্ণা। প্রধান প্রেরণা পেয়েছেন তাঁর বাবার কাছ থেকে।

গল্পটা বলছিলেন এই মহিলা উদ্যোগপতি। বলছিলেন ওর বাবার কথা। সবাই একসঙ্গে বসে থাকলেও ওর বাবাকে মশা বেশি কামড়াত। খুব বিরক্ত হতেন ভদ্রলোক। ধূপধুনো থেকে নানান ব্র্যান্ডের মশার ধূপ সব লাগিয়ে দেখেছেন কাজের কাজ কিচ্ছু হয় না বরং শরীরের ক্ষতি হয়। চোখ জ্বালা করে। দম নিতে কষ্ট হয়। তাই বাবার আবদার বুদ্ধিমতী মেয়ের কাছে, তুই এবার মশা তাড়ানোর কিছু একটা উপায় কর।

বাবার কথা শিরোধার্য। কিন্তু তিনি তো আর বিজ্ঞানের তুখোড় ছাত্রী নন। কিন্তু লেখাপড়ায় ভালো কলা বিভাগের স্নাতক। ভাবছিলেন সাথপাছ। একমাত্র গাছগাছালির সঙ্গেই যত বন্ধুত্ব। বাড়িতে অনেক রকম গাছ ছিল সুপর্ণাদের। সেই দিয়েই ভাবনা শুরু।

কোত্থেকে কোত্থেকে নিসিন্দা পাতা এনে সেই দিয়ে অন্য গাছের পাতা মিশিয়ে অনেক রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করছিলেন। এরই মধ্যে বাবার এক বন্ধু যিনি একসময় ড্রাগ কন্ট্রোলে উঁচু পদে ছিলেন সেই ডক্টর সি এন ঘোষ সব শুনে বলেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে। সেখানকার ল্যাবরেটরিতে এধরণের কাজের সুযোগ আছে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। চলে গেলেন সুপর্ণা সেখানে ডক্টর অসীম চ্যাটার্জির তত্ত্বাবধানে দিনের আলো দেখল সুপর্ণার স্বপ্ন। মশা তাড়াবার নিরাপদ ভেষজ উপায়।

সেটা ছিল ২০০৬ সাল। রাসায়নিক মুক্ত মশা তাড়ানোর ধূপ তৈরির জন্যে গবেষণা করছিলেন সুপর্ণা। চার বছর গবেষণা চালিয়ে সাফল্য পান। তাঁর তৈরি ধূপ অনুমোদন করেছে ভারত সরকার এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

সুপর্ণ জানালেন, তাঁর তৈরি ধূপ ১০০ শতাংশ পরিবেশ-বান্ধব। পেটেন্টের জন্যেও আবেদন করেছেন। ২০১৩ থেকে পেন্ডিং আছে পেটেন্টের আবেদন। তবে তাঁর স্থির বিশ্বাস পেটেন্ট পেয়ে যাবেন তিনি। দুষণহীনতার সার্টিফিকেট দিচ্ছে খোদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিমধ্যেই কিছু কিছু এলাকার বাজারে পাওয়াও যায় সুপর্ণার মুক্তি ধূপ।

চার পাঁচজনের একটি ছোট্ট দল আছে সুপর্ণার। সেই দলে আছেন তিনি এবং তাঁর মেয়ে মোহনা ঘোষালও। মোহনাই মাকে ধূপ বানাতে প্যাকেজিংয়ে সহায়তা করেন। শুধু তাই নয় বাজারে মার্কেটিংয়ের দিকটাও সামলান মোহনা। মা-মেয়ে মিলে অন্যরকম মুক্তির স্বাদ খুঁজছেন।

চাই বলতে ওদের দরকার মার্কেটিং এবং সেলসের একটি টিম। আরও বড় বাজার ধরতে পারলে দিনে তিনশ প্যাকেট উৎপাদন করার ক্ষমতা ওরা রাখেন। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ তিরিশ হাজার টাকার অনুদানও পেয়েছেন সুপর্ণা ঘোষাল। মশা না মেরে, মশা তাড়িয়েই কামাল করে দিতে চান এই মহিলা উদ্যোগপতি।