তিন বইপোকার স্টার্টআপ, আঞ্চলিক ভাষার পুস্তকাগার

তিন বইপোকার স্টার্টআপ, আঞ্চলিক ভাষার পুস্তকাগার

Wednesday December 02, 2015,

2 min Read

বই নিয়ে অনেক রকম ব্যবসা হয়। কিন্তু লাইব্রেরি তৈরি করে লাভ করার কথা কেউ কস্মীনকালেও শুনেছেন! এই কাহিনির মূল চরিত্র তিন বই পড়ুয়া। কিন্ডেলে চোখ রেখে নয়। দুমলাটে বাঁধাই করা বই পড়তেই ওঁরা ভালোবাসতেন সেখান থেকেই এই গল্পের শুরু।

নিবেতা পদ্মনাভন

নিবেতা পদ্মনাভন


নিবেতা পদ্মনাভন, রাজেশ দেবদাস এবং প্রসন্ন দেবদাস। তিন বন্ধু। তিনজনই প্রবল পড়ুয়া। তামিল ভাষার বই-ই তাঁদের বেশি পছন্দের। কয়েক বছর আগে কাজের সূত্রে বেঙ্গালুরুতে থাকতে হয়। বইয়ে বাক্স ফাঁকা করে ফেলেছেন কয়েক সপ্তাহেই। তামিল বই খুঁজতে এ লাইব্রেরি সে লাইব্রেরি অনেক ঘুরেছেন কিন্তু আঞ্চলিক ভাষার বইয়ের লাইব্রেরি নেই বললেই চলে। তার ওপর যদিবা পাওয়া যায় সেখানে গ্রাহক হওয়ার খরচ সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে, তাছাড়া বইয়ের ভাণ্ডারও তেমন আহামরি কিছু নয়।

এই সময়ই তাঁদের মাথায় আসে কেবলমাত্র তামিল ভাষায় লেখা বইপত্র নিয়ে গ্রন্থাগার তৈরির ভাবনা। তিন জনেই ছোটোবেলা থেকে বইয়ের পোকা। তামিল পাঠক কোন ধরনের বইপত্র পছন্দ করেন, তা সহজেই অনুমান করতে পারেন তাঁরা। তিন বন্ধু একত্র হয়ে তৈরি করে ফেললেন একটি তালিকা। তিন জনেই তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চাকরিরত। ফলে গ্রন্থাগারের জন্য বই কিনতে তাঁদের বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। নিজেদের বাড়িতেই গড়ে তোলেন গ্রন্থাগার, নাম দেন পুস্তক।

শুধু আঞ্চলিক ভাষার বই নিয়েই একটি গোটা গ্রন্থাগার তৈরি করে ফেলেন ওই তিনজন। সদস্য সংখ্যা শতাধিক। সাফল্যের রেট হাই। ধীরে ধীরে বাড়ছে গ্রন্থাগারের বহড়ও। শুধু তাই নয়, এবার ডিজিটাল লাইব্রেরির কাজও শুরু করে দিয়েছেন নিবেতারা। তামিলের পাশাপাশি মালয়ালাম, কন্নড় এবং তেলুগু ভাষার বইয়ের সম্ভার নিয়ে হাজির পুস্তক। তাবলে দুমলাটে মোড়া, ছাপা বইয়ের গন্ধ যাতে মিস না করতে হয় তাই লাইব্রেরিও চলবে পুরোদমে।

নিবেতার যুক্তি, এক সময় অমর চিত্রকথা, চাঁদমামা, চম্পক কিংবা আম্বুলিমামা কিনতে ছোটোদের সঞ্চিত অর্থ ফুরিয়ে যেত। এখন এই বৈদুতিন-বইয়ের যুগে এবং সময়ের অভাবে বই পড়ার অভ্যেস নাকি হারিয়ে যাচ্ছে। এমনটাই মনে করেন অনেকে। কিন্তু বইমেলাগুলিতে বইয়ের বিক্রি কিন্তু অন্য কথা বলে।

আঞ্চলিক ভাষার বইয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ানোই এই ত্রয়ীর লক্ষ্য। রাজেশের বক্তব্য, এই সময়ে নিজের শহর, রাজ্য ছেড়ে অনেক মানুষকেই পেশার কারণে ভিনরাজ্যে, অচেনা শহরে গিয়ে থাকতে হয়। পরিবার, বন্ধু, চেনা খাবার, বাড়ির সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব বোধের পাশাপাশি মাতৃভাষায় লেখা বইয়ের অভাবও তাঁরা বোধ করেন।

প্রসন্ন জানান, বাড়ি ভাড়া নিয়ে লাইব্রেরি করার খরচ অনেক। সেই কারণেই নিজেদের বাড়িতেই গ্রন্থাগার তৈরি করেছেন ওঁরা। এর ফলে লাইব্রেরির সদস্য হওয়ার চাঁদাও থাকছে আয়ত্তের মধ্যে। ইতিমধ্যেই লাইব্রেরির সদস্য-সংখ্যা শতাধিক। লাইব্রেরির সংগ্রহে থাকা বইপত্রের তালিকা নিয়মিত পাওয়া যায় তাঁদের ওয়েবসাইটে।

(লেখা-জুবিন মেহতা, অনুবাদ- দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় )