মায়ের ইচ্ছে, আবিস্কারের আনন্দে শিখুক শিশুরা

মায়ের ইচ্ছে, আবিস্কারের আনন্দে শিখুক শিশুরা

Monday September 07, 2015,

3 min Read

জ্ঞান বৃদ্ধির সবথেকে উপযুক্ত উপায় হল হাতেকলমে পরীক্ষা করে শেখা। সৃষ্টি রহস্যের বেড়াজাল বিজ্ঞানীরা টপকে গেছেন এভাবেই আবিস্কারের আনন্দেই। শিশুরা খুব দ্রুত পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলে এবং অনেক কিছু শিখতে পারে। তাই অগাধ বিশ্বাস ও প্রবল ইচ্ছে নিয়ে অঞ্জনা এবং তাঁর স্বামী ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে গুরগাঁওতে খুলে ফেলেন "স্টেলার চিলড্রেনস্ মিউজিয়াম"।

image


অঞ্জনা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। আমেরিকায় কাটিয়েছেন বেশ কয়েক বছর।আমেরিকায় তিনশটির ও বেশি যাদুঘর আছে। আমরা যে জগৎটায় আছি তাকে তো চিনতে হবে,তাই অঞ্জনা তাঁর বাচ্চাদের ছুটির দিনে মিউজিয়ামে ঘুরতে নিয়ে যেতেন। ভারতের পরিস্থিতি তাঁকে হতাশ করে। এখানে বাবা-মা আর বাচ্চাদের উইকএন্ড প্ল্যান মানেই হয় সিনেমা নয় গেম শো। আর দেরি না করে গুরগাঁও এর অ্যাম্বিয়েনস্ মলে ১১০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে তিনি বানান এই যাদুঘরটি। এখানে আছে ৭ টা গ্যালারি, একটি থিয়েটার এবং একটি ক্যাফেটেরিয়া। ২ থেকে ১০ বছরের শিশুরা এখানে মজা পায়। এখন বছরে প্রায় ৬৫০০ জন আসেন এখানে ঘুরতে।

অঞ্জনা মেনন

অঞ্জনা মেনন


অঞ্জনা মেনন একজন চিন্তাশীল মা,যিনি তাঁর স্বপ্নকে নিজের কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন । আমরা অঞ্জনার কাছে জানতে চাইলাম, 

চিলড্রেনস্ মিউজিয়াম শুরু করার পিছনে কি উদ্দেশ্য ছিল?

অঞ্জনা বললেন, আমেরিকায় থাকাকালিন দেখেছেন সেখানকার বাচ্চারা যাদুঘরে যায়, খেলার ছলে সহজেই শেখে রঙ রকমফের, নানান আকার, আকৃতি, আয়তন নিয়ে মজার খেলা। মাধ্যাকর্ষণ, চুম্বকত্ব নিয়ে খেলতে খেলতে ধারণা স্পষ্ট হয়। ভারতে অনেক কিছুরই অভাব। কিন্তু শিশুদের জন্য এরকম যাদুঘরের প্রয়োজনটা তাঁকে খোঁচা দিচ্ছিল সবথেকে বেশি। তাই অঞ্জনা শিক্ষামূলক যাদুঘর তৈরির কথা ভাবলেন। যেখানে শিশুরা খেলতে খেলতে চিনবে অচেনাকে, শিখবে বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি।

যাদুঘরটি কিভাবে বাচ্চাদের মজা ও শিক্ষা দুই ই দিচ্ছে?

অঞ্জনার যাদুঘরটিতে সাতটি গ্যালারি আছে। বিভিন্ন ভাগে ছড়িয়ে আছে বিজ্ঞান, ভূগোল,শিল্পকলা,সৃষ্টিরহস্য ও ইতিহাস। দুজন শিক্ষাবিদ রয়েছেন ,আর প্রতিটি গ্যালারিতে একজন সুপারভাইজার,যাঁরা শিশুদের রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করেন ।শিশুরা জানছে গোষ্ঠী কী, বা কেন মানুষ সমাজবদ্ধ ভাবে বাস করে, আরও কত কি।মজাটাই আসল বিষয়, আগ্রহী শিশুরা তাই শিখে নেয় ঝটপট।

কমিউনিটি গার্ডেন

কমিউনিটি গার্ডেন


যাদুঘরের প্ল্যানিং ও ডিজাইনিং কীভাবে করলেন ?

জাদুঘর ডিজাইন করেছেন শিকাগোর দক্ষ ডিজাইনার যাঁর অভিজ্ঞতা ২৫ বছরের ও বেশি। ৬ মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন শিক্ষাবিদের দল এবং ডিজাইনাররা।নজর দিয়েছেন মিউজিয়ামের প্রতিটি খুঁটিনাটি দিকে। বর্তমানে এই মিউজিয়ামে বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকেও ছাত্রদের নিয়ে আসা হয় শিক্ষামূলক ভ্রমণ এর উদ্দেশ্যে।

image


ভবিষ্যতের সম্প্রসারণ এবং তহবিল নিয়ে কি ভাবছেন আপনি?

অঞ্জনা আমাদের জানালেন, স্টেলার হল নয়ডার এক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি যাঁরা এই মিউজিয়ামের মেইন স্পনসর। ডেটল এঁদের কর্পোরেট পার্টনার। এছাড়াও হারপার কলিন্স, ট্র্যাভেলার কিডস্, ফ্র্যাঙ্ক টয়েস বই খেলনা এসব স্পন্সর করে।এখনো পর্যন্ত তাঁরা সরকারী সাহায্য নেননি। অঞ্জনা এই যাদুঘর অনেক জায়গায় খুলতে চান। বর্তমানে দিল্লীতে একটি যাদুঘর খোলার প্রচেষ্টা চলছে।

টিকিট কেটে কতক্ষণ থাকতে পারে শিশুরা?

সপ্তাহে সাতদিনই মিউজিয়াম খোলা। সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত ।প্রবেশমূল্য ২০০ টাকা ৩০ মিনিটের জন্য। এরপর যদি বেশি সময় লাগে তবে সেই অনুযায়ী টাকা চার্জ দিতে হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক ও ১বছরের কম শিশুদের বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার আছে। প্রতি বুধবার প্রবেশ মূল্য কম। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও জন্মদিনে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়।

কোন চালিকাশক্তি তাড়িয়ে বেড়ায় এই মা-কে?

একজন স্বনির্ভর ও প্রগতিশীল মা হিসেবে অঞ্জনা মনে করেন ভারতে এই ধরণের উদ্যোগের প্রয়োজন আছে। তিনি বলছেন, "আমি কখনই একে ব্যবসার দিক থেকে ভাবিনি, এ আমার স্বপ্ন যাকে আমি ভবিষ্যতে আরও বড় রূপ দিতে চাই।" তিনি রোজ নয়ডা থেকে গুঁরগাও যাতায়াত করেন। এটা বিশ্বাস করেন ভালোবেসে চাইলে সব পাওয়া যায়। স্বামী অক্ষয় ও অঞ্জনার শ্বশুড়বাড়ি এই বিষয়ে পুরোটাই তাঁর পাশে আছে। অঞ্জনার ভাষায়, স্বামী অক্ষয়কে পাশে পেয়ে তিনি গর্বিত। 

ভবিষ্যতের উদ্যোগপতিদের জন্যে অঞ্জনা একটি জ্যান্ত উদাহরণ। 

" লক্ষ্য বড়ো নাই বা হোক, প্রয়োজন ভালোবাসা। ব্যবসা তোমার সন্তানের মতো যতো ভালোবেসে কাছে টেনে নেবে ততই সে সুন্দর সুদৃঢ় মহীরুহ হয়ে উঠবে।"

তিনি মনে করেন এটাই প্রকৃত সময় নতুন কিছু করার। ভারতের মানসিকতা পাল্টাচ্ছে, সে নতুনকে সাদরে গ্রহন করতে শিখছে। ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া চাই তারপর আকাশের পাখিরাই জানে তোমার ঠিকানা।