পদ্মপুকুরে মনীশ দিচ্ছেন Saatvik আহারের ঠিকানা

পদ্মপুকুরে মনীশ দিচ্ছেন Saatvik আহারের ঠিকানা

Thursday June 08, 2017,

3 min Read

ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে নন মনীশ জালান। বাবা ইনকাম ট্যাক্স লইয়ার। নিজে সেন্টজেভিয়ার্সের ছাত্র। কলেজ থেকে বেরিয়েই প্রথম যে কথাটা মাথায় আসে সেটা ব্যবসাই। গত পনের বছর ধরে ট্রান্সপোর্টেশনের ব্যবসা করছেন। খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোনও দিনই বিশেষ উৎসাহ ছিল না। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই, তার বেশি নয়। খাদ্যরসিক বলতে যা বোঝায় তেমন একদমই নন মনীশ। অথচ তিনিই খুলে ফেললেন রেস্তোরাঁ। বছর ৪২ এর এই উদ্যোগপতির দাবি এমন সাত্ত্বিক নিরামিষ আহার তাঁর রেস্তোরাঁ ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যাবে না। রেস্তোরাঁর নামও তাই সাত্ত্বিক। মাস দুয়েক হয়েছে পদ্মপুকুরে রমরম করে চলছে সাত্ত্বিক আহারের এই ঠিকানা। কেন হঠাৎ এই রেস্তোরাঁ খুললেন, প্রশ্ন করায় মনীশের উত্তর স্পষ্ট। কলকাতায় তেমন একটা নিরামিষ এবং শুদ্ধ ভারতীয় খাবারের রেস্তোরাঁ নেই। এই ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়াটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তাই মনীশ পদ্মপুকুরে ৬০ আসনের এই রেস্তোরাঁ খুলেছেন। এলাকার নিরামিষাশীদের আনাগোনায় ইতিমধ্যে বেশ জমে উঠেছে। বাড়িতে রান্নার ইচ্ছে নেই, অথচ রেস্তোরাঁর সেই ট্রেডমার্ক তেল, ঝোল, মসলার বাড়াবাড়ি, তেমন খাবারও আর রুচছে না। সেক্ষেত্রে সাত্ত্বিক হতে পারে মুশকিল আসান, দাবি জালানের। বলে রাখা ভাল, মেনুর কোনও পদেই পেঁয়াজ, রসুনের ছোঁয়াও নেই। খাওয়ার পর আইঢাই হবে না। ‘খাবারে আমরা আজিনামোটো, খুব বেশি নুন এবং তেল ব্যবহার করি না। প্যাকেট নয়, শিল-নোড়ায় বাটা মসলা দিয়ে রান্না হয়। ঠাণ্ডা হয়ে গেলেও আমাদের নান চামড়ার মতো মনে হয় না, নরম থাকে। আর আমাদের ডাল মাখানির যা স্বাদ হলফ করে বলতে পারি আর কোথাও এই স্বাদ পাবেন না। মসলা কুলচা দিয়ে খেয়ে দেখুন, স্বাদ মুখে লেগে থাকবে’, গর্বের সঙ্গে বলছিলেন মনীশ।

image


পেটুক না হলে কী হবে, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কীভাবে তৈরি করা যায়, রীতিমতো রিসার্চ করেন তিনি। রেস্তোরাঁর মধ্যে অনেকগুলি ভাগ আছে। ফলে একা যান, দল বেঁধে যান, কোনও সমস্যা নেই, জায়গার অভাব হবে না। আর যারা মাংস আর মাছের পোকা তাদেরও স্বাগত জানাচ্ছে সাত্ত্বিক। একবার এই শুদ্ধ নিরামিষ খেলে নিরামিষ নিয়ে ধারণাই বদলে যাবে। চেখে দেখতে পারেন ম্যাক্সিকান রাইস। প্লেট প্রতি ১৪৫ টাকা। অলিভ আর বেল পিপারে একটু মশলাদার ম্যাক্সিকান রাইস নিলে সঙ্গে আর কিছু সাইড ডিশ লাগবেই না। স্বাদে গন্ধে আমিষ পদকেও হার মানাবে। ভেজ লট্টিকা, ১৬৫ টাকা প্লেট। নারকোলের গুঁড়ো মাখানো পনীর, তার মধ্যে ঠাসানো অলিভ আর ভাজা বিন। পেঁয়াজ-রসুন নেই। আর নারকোলের গুঁড়োতে মিষ্টি মিষ্টি স্বাদ খেতে ভালো লাগবেই। শাক অনেকেই পছন্দ করেন না। কিন্তু ক্র্যাকলিং স্পিনাচ চেখে দেখলে শাক খাবেন। একবার নয়, বারবার। ১৪৫ টাকা প্লেটে মুচমুচে ভাজা শাক সঙ্গে মিষ্টি চিলি সস। এই স্বাদ আর কোথাও পাবেন না। কেশরিয়া কুলফি, ১২৫ টাকা করে। নানা জায়গার কুলফির সুনাম আছে। সেসব জায়গার কুলফি তো চাখা হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে দিদা-ঠাকুমার হাতে তৈরি কুলফির স্বাদও মুখে লেগে আছে অনেকের। মনীশ বলছেন, ‘আমাদের কেশরিয়া কুলফি চেখে দেখুন। ক্রিম আর আইসক্রিম দিয়ে তৈরি কুলফি সঙ্গে গোলাপের সিরাপ, কুলফিতেও নতুন স্বাদ আনার চেষ্টা করেছি’। হেল্থ ড্রিঙ্কস রয়েছে মেনুতে। শসার রস, সোডা আর মধু দিয়ে তৈরি সরবত ওপরে ভাসা দইয়ের ছাঁচ, খাওয়া শুরুর আগে খিদে আরও বাড়িয়ে দেয়। নানা ফ্লেভারে পাওয়া যায় এই হেল্থ ড্রিঙ্কস। বেছে নিন নিজের পছন্দেরটা।

রেস্তোরাঁর পরিবেশও মনোরম। হালকা আলোর সঙ্গে লেবু লেবু গন্ধ, জল পড়ার আওয়াজ, মায়া মাখা পরিবেশটা শান্ত করে দেবে আপনাকে। মুখে মুখে নাম ছড়াচ্ছে। দুর্গা পুজো পর্যন্ত এভাবেই চলবে তারপর ব্যবসা বাড়ানোর কথা ভাবছেন প্রথম প্রজন্মের এই উদ্যোগপতি।