বিএফএসআই শিল্পে ‘ভেরিনাইট’ যেন দ্রোণাচার্য

বিএফএসআই শিল্পে ‘ভেরিনাইট’ যেন দ্রোণাচার্য

Wednesday October 07, 2015,

4 min Read

হার-জিত রয়েছে বলেই তো প্রতিযোগিতা এত সুন্দর। চিত্তাকর্ষক। আজকে যিনি ট্র্যাকের রাজা উসেইন বোল্ট, কাল হয়তো তিনিই হেরে যান গ্যাটলিনের কাছে। কে বলতে পারে, অচিনপুরের কোনও এক গুরুগৃহে হয়তো বা লালিত হচ্ছে ভবিষ্যতের বোল্ট। অনেক পিছন থেকে ছুটে এসে যিনি হয়তো বিদ্যুতের গতিতে ফিনিশিং লাইনে পৌঁছে যাবেন সব্বার আগে।

সে খেলার মাঠ হোক বা পড়াশোনা। রাজনীতি কিংবা ব্যবসা। আজকে যে পিছিয়ে, তার মরচে পড়া অস্ত্রে শান দেওয়ার জন্য, ফাঁক ফোকর ভরাট করার জন্য, গুরু লাগবেই। অর্জুনের যেমন দ্রোণ। শচীন তেন্ডুলকরের যেমন রমাকান্ত আচরেকর। ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষেত্রে ঠিক একই ভূমিকায় পুণের সংস্থা ‘ভেরিনাইট’। ব্যবসায় যারা এক নম্বর, তাদের রাজত্ব রক্ষার জন্য নয়, বরং যারা পিছিয়ে, তাদের সামনের সারিতে তুলে আনাটাই ‘ভেরিনাইট’-এর চ্যালেঞ্জ। এজন্যই তারা বোধহয় আলাদা, ব্যতিক্রমী।

ছয় প্রযুক্তিবিদ ও ভেরিনাইট

বছর খানেক আগের কথা। ঘাড় থেকে মন্দার ভূত নামিয়ে বিএফএসআই শিল্প তখন একটু একটু করে চাঙ্গা হচ্ছে। ব্যাঙ্ক, বিমা কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বুঝতে পারল যে, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল বড় প্রতিষ্ঠানে যা সম্ভব, ছোট কিংবা মাঝারি প্রতিষ্ঠানে তা ততটা সহজ নয়। ফলে বিএফএসআই শিল্পের ট্র্যাকে একদল এগিয়ে গেল অনেকটা, অন্যরা যেন পরাজিত যোদ্ধা। আর এই সঙ্কটের সময়ে ‘ভেরিনাইট’-এর আর্বিভাব। সালটা ২০১১। তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আশিস কাতকার এবং অশ্বিন রামযশ যখন পুণে শহরে ‘ভেরিনাইট’ সংস্থার অফি‌স খুললেন তখন কেউ খুব একটা গুরুত্বই দেয়নি। এরকম কত অফিস খোলে, কত বন্ধ হয়ে যায়। কে তার হিসাব রাখে। কিন্তু ৬ প্রযুক্তিবিদ বুঝতে পারলেন, তারা যেটা করতে চাইছেন, তা করতে পারলে কাজের অভাব থাকবে না। আশিস কাতকারের কথায়, ‘‘তখন যে সংস্থাগুলি তথ্য-প্রযুক্তিকে ব্যবহার করত, তারা হাতে গোনা। আমরা নজর দিলাম ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলির দিকে। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে অনীহা থাকায় তারা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছিল। আমরা ওদের সাহায্য করতে থাকলাম।’’ ‘ভেরিনাইট’ এখন যেন গুরুর ভূমিকায়। সঠিক দিশার অভাবে যারা ধুঁকছিল, তাদের জন্য এই সংস্থার মূল্যবান পরামর্শ, প্রযুক্তিগত সাহায্য, গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা যেন সঞ্জিবনী মন্ত্রের মতো হয়ে উঠল।


image


অশ্বিন এবং আশিস তো ছিলেনই। সঙ্গে ছিলেন লোকেশ পারেখ, বিনয় বিশ্বনাথন, দেবাশিস মহান্তি এবং শঙ্খদ্বীপ চক্রবর্তী। পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে আশিস বলেন, ‘‘ভেরিনাইট হল ছয় প্রযুক্তিবিদের চিন্তার ফসল। লোকেশ, বিনয় এখন আলাদা ভাবে কাজ করছেন। না থাকলেও ওরা যেন ভেরিনাইটের সঙ্গেই রয়ে গেছেন।’’

শেষ থেকে শুরু

বড় সংস্থার সঙ্গে ব্যবসা মানেই বড় মুনাফা। লক্ষ্মীলাভের আশায় আট-দশটা পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা কাজ করে প্রথম সারির সংস্থাগুলোর সঙ্গে। তাদের কাজে যে সীমায় শেষ হয়, তার বাইরে যেন ভ্যাকুয়াম। এক অসীম শূন্যস্থান। ‘ভেরিনাইট’ শুরু করল সেই জায়গা থেকে।

তথ্য সুরক্ষা, কোর ব্যাঙ্কিং, ঋণ প্রদান সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয় ‘ভেরিনাইট’। তাদের ক্লায়েন্ট প্রধানত দু’ধরনের। আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পণ্য উৎপাদনকারী সংস্থা। আজকের প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় প্রযুক্তি ছাড়া যে কোনও প্রতিষ্ঠান অচল। কিন্তু ব্যবসায়িয়ক কাঠামোর সঙ্গে মানানসই কোন প্রযুক্তি দরকার, তার প্রয়োগই বা কী – এসব গূঢ় বিষয় ছোট এবং মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলোর কানে পৌঁছে দেয় ‘ভেরিনাইট’। ওয়েব এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনকে ব্যবহার করে ক্রেতার সঙ্গে সংস্থার যোগাযোগ গড়ে তোলে। এছাড়াও রয়েছে পরিষেবা প্রদান, অটোমেশন কিংবা হ্যাকারদের হাত থেকে সংস্থার তথ্যভাণ্ডার সুরক্ষিত রাখার কাজ। ২০১১ সালে যখন ‘ভেরিনাইট’ এর পথ চলা শুরু হয়, সে সময় অশ্বিন, আশিসদের কাজের সুযোগ দিয়েছিল মাত্র একটা সংস্থা। আর এখন ক্লায়েন্টের তালিকা যেন শেষই হতে চায় না।

স্যাম্পল টু অ্যাম্পল

সফল ব্যবসায়ীরা নাকি সাফল্যের রসায়নটি সব সময় গোপন রাখেন। কিন্তু আশিস কাতকার জানিয়ে দিলেন, তাঁর স্যাম্পল টু অ্যাম্পেল নীতি। ‘‘তোমার পরিষেবা নমুনা যদি গ্রহণযোগ্য হয় তবে তোমার কাজের অভাব থাকবে না।’’ কিন্তু সেই পরিষেবা কীরকম? আশিসের কথায়, ‘‘ক্লায়েন্ট যা চায়, তার চাইতে বেশি দাও। ধরা যাক, যে সংস্থার হয়ে তুমি কাজ করছ, তাদের কোনও সমস্যা যদি এতদিন নজরে না এসে থাকে, তবে তুমি তাতে নজর দাও। এতে সংস্থার যেমন মঙ্গল, সেরকম তোমার সঙ্গে সংস্থার গড়ে উঠবে বিশ্বাসের সম্পর্ক। মনে রাখতে হবে, যে সম্পর্কে বিশ্বাস থাকে, সেই সম্পর্ক কখনই ভাঙে না।’’

সামনের পথ

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিএফএসআই শিল্পের খরচ বাড়ছে। আগামী দু-বছরের মধ্যে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে। ‘ভেরিনাইট’ আশাবাদী। পুণের ছোট গণ্ডি থেকে শুরু করে তারা ছড়িয়ে পড়েছে পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, এমনকী ব্রিটেনেও। এবার হয়তো আরও নতুন কোনও দেশ, নতুন কোনও কাজ। পুরনো সীমা ডিঙিয়ে নতুন সীমা, নতুন লক্ষ্য। আশিস বলেন, ‘ভেরিনাইট’- এর কাছে প্রতিটা সকাল মানে নতুন অধ্যায়ের সূচনা।