আজ যা অঙ্কুর, কাল তাই মহীরূহ। দরকার শুধু পরিচর্যা আর অনুকূল পরিস্থিতি। ২০০৮ সাল নাগাদ যখন স্টার্ট আপ ইকো সিস্টেম নিয়ে লিখতে শুরু করে ইওর স্টোরি, সেসময় মাঝেমধ্যেই উঠে আসত বেশ কয়েকটা সংস্থার নাম। তখন তারা নেহাতই চারাগাছ। কেইবা তাদের চিনত! কতই বা তাদের কাজের পরিধি! আজ কিন্ত তারাই বিশাল। বিপুল। দেশের গণ্ডী পেরিয়েও আন্তর্জাতিক মঞ্চেও উচ্চারিত হয় তাদের নাম।
বদলটা কিন্তু আচমকা আসেনি। তিলে তিলে, একটু একটু করে ভারতে গড়ে উঠেছে স্টার্ট আপের ইকো সিস্টেম। অর্থাৎ এমন এক পরিবেশ, যা কিনা সদ্য তৈরি হওয়া সংস্থার পক্ষে সহায়ক। স্টার্ট আপ ইকো সিস্টেমের নিরিখে ২০১২ সালে বেঙ্গালুরু ছিল বিশ্ব ক্রমপর্যায়ের ১৯ তম স্থান। ২০১৫ তে ১৫ নম্বরে উঠে এসেছে। যদি স্টার্ট আপের বিনিয়োগকে সূচক হিসাবে ধরে তালিকা তৈরি করা যায়, তাহলে বেঙ্গালুরুর জায়গা আরও উপরে। ষষ্ঠ।
একদিকে মহীরূহ বৃহৎ প্রতিষ্ঠান, আবার অন্যদিকে লড়াকু স্টার্টআপ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মানচিত্রে যদি ভারতকে আরও উজ্জ্বল জায়গা পেতে হয় তাহলে কার হাতে থাকবে ব্যাটন! বিশেষজ্ঞরা বলছেন মহীরূহকে দরকার। সঙ্গে এগিয়ে আসুক স্টার্ট আপও। ২০০৭ সালে যখন ফ্লিপকার্ট আত্মপ্রকাশ করে, তখন সেও ছিল ক্ষুদ্র। আজ কিন্তু সেই সংস্থাই ই-কমার্সে এনে দিয়েছে নবদিগন্ত। ফ্লিপকার্টের সচিন এবং বিন্নি বনশল উঠে এসেছেন ফোর্বসের প্রথম একশোজনের তালিকায়। অর্থাৎ লক্ষ্মণ শুভ। স্টার্ট আপ ইকো সিস্টেম গড়ে ওঠায় নিত্য নতুন বাণিজ্যের গোড়াপত্তনে এগিয়ে আসছেন অনেকেই। চোখে তাদের মহীরূহ হয়ে ওঠার স্বপ্ন। ইন্ডিয়া হান্ড্রেড র্যা ঙ্কিং নামের তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে ২০১৫ সালে নজর কেড়েছে শতাধিক সংস্থা। এছাড়াও ইউর স্টোরি চিহ্নিত করেছে প্রযুক্তির দুনিয়ায় তোলপাড় ফেলে দেওয়া তিরিশটি স্টার্ট আপকে। তালিকায় প্রথম নাম আরভ আনম্যানড সিস্টেম। তাদের তৈরি করা চালকহীন আকাশযান প্রতিরক্ষা এবং গবেষণার কাজে ব্যবহার শুরু হয়েছে। তালিকায় রয়েছে চিকিত্সা সরঞ্জাম প্রস্তুকারী সংস্থা কিংবা শস্যদানা সংরক্ষণে যু্ক্ত সেভ ইন্ডিয়ান গ্রেইন নামের উঠতি এক স্টার্ট আপের নাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগ আর বিশেষ কোনও ক্ষেত্রে আটকে নেই। তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে।
২০১৫-তে দেখা যাচ্ছে ভারতের বাণিজ্যের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে ই-কমার্স। নজরকাড়া ১০০ টি ই-স্টার্ট আপ সংস্থার মধ্যে প্রথম পাঁচে রয়েছে স্ন্যাপডিল, ওলা, ফ্লিপকার্ট, বিগ বাজেট এবং ডেলহিভারির মতো সংস্থার নাম।
প্রশ্ন উঠতে পারে এদের বাছা হল কোন নিরিখে। দেখা যাচ্ছে ১০০০ এর বেশি স্টার্ট আপের মধ্যে ঝাড়াই-বাছাই করা হয়েছে। দেখা হয়েছে আয়, উন্নয়নের হার, উদ্ভাবনী শক্তি এবং বিনিয়োগের পরিমাণ। হাজারের মধ্যে যারা প্রথম একশোয় উঠে আসে তাদের ভবিষ্য.. যে নেহাত উজ্জ্বল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কে বলতে পারে, পিছন থেকে এসেও কোনও সংস্থা হয়তো হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের নাম্বার ওয়ান। ইওর স্টোরি নতুন বছরেও তুলে ধরবে নিত্য-নতুন স্টার্ট আপের বৃত্তান্ত। ২০১৫ সালের প্রজাতন্ত্র দিবস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণে থিম হিসেবে উঠে এসেছিল স্টার্ট আপ। কারণটা খুবই সোজ। আজ যে চারাগাছ, কাল সে মহীরূহ।