সঞ্চয়ের ৬০,০০০ ত্রাণ তহবিলে দিলেন চেন্নাইয়ের সান্থিরা
Wednesday January 27, 2016,
2 min Read
৩০০ জনের মৃত্যু, ১১ লাখের বেশি উদ্বাস্তু, ১০ হাজার কোটির ক্ষয়ক্ষতি। ২০১৫-র নভেম্বরে শতাব্দীর সবথেকে বড় বিপর্যয় দেখেছিল চেন্নাই। সরকারি, বেসরকারি সংস্থা আর উদ্ধারকারী দল এককথায় নাস্তানাবুদ হয় উদ্ধারকাজ আর ত্রাণ সরবরাহ করতে।
তামিলনাড়ুর দিন্দিগুল জেলার পাজানি। চেন্নাই শহর থেকে ৪৫০ কিমি-এর বেশি দূরত্ব এই জেলার। জেলারই প্রত্যন্ত দুটি গ্রামের স্বনির্ভর মহিলাদের নাড়িয়ে দিয়েছিল রাজ্যের ভয়াবহ বিপর্যয়ের এই ছবিটা।
জীবনে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে করতে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন সান্থি, মারিয়াম্মলরা। তাই সর্বহারার কষ্ট তাঁরা বোঝেন। তাঁদের মতো সুদার এবং সিগারাম ফেডারেশনের আরও ছয়জন সদস্য সেদিন হাজির ছিলেন চেন্নাইয়ে। নিজেদের সংগঠনের তরফে বন্যা ত্রাণে ৬০ হাজার টাকা তুলে দেন তাঁরা। সাহায্য আর বিপর্যয়ের ব্যপ্তির নিরিখে অর্থের পরিমাণ হয়তো সামান্য। তা সত্ত্বেও মহিলাদের এই প্রয়াসকে কুর্নিশ করতেই হয়।
কয়েক বছর আগে দিন্দিগুল জেলার দুটি গ্রামের মহিলাদের নিয়ে ২০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্ম হয়। এই সবকটি গোষ্ঠীকে এক ছাতার তলায় এনে সুদার অ্যান্ড সিগারাম ফেডারেশন নামে দুটি সংগঠন তৈরি হয়। সম্পূর্ণ মহিলা চালিত এই দুই ফেডারেশনের প্রত্যেক গোষ্ঠীতে থাকেন এক থেকে ২ জন প্রতিনিধি। প্রত্যেক গোষ্ঠীর নিজস্ব সঞ্চয় স্কিম রয়েছে। মাসে একবার তাঁরা দেখা করেন এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজ, সমস্যা আর চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আজকের দিনে পিছন ফিরে তাকালে অবাক হন রথিনাম, কমলমরা। একসময় তাঁরা ছিলেন গৃহবধূ। কখনও সখনও ভাগচাষী হিসেবে কাজ করে সামান্য আয় করতেন। ওয়ার্ল্ড ভিশন নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ার উৎসাহ পান। একসময় বছরের বেশিরভাগটাই হাতে কাজ থাকত না। আর এখন কাজ সেরে ফুরসত পান না তাঁরা।
নয় নয় করে দুটি ফেডারেশনের সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে ঋণ নিয়ে কেউ মিল্ক ইউনিট তৈরি করেছেন, কেউ উৎসব অনুষ্ঠানে চেয়ার,টেবিল, শামিয়ানা সরবরাহ করার ব্যবসা করছেন আবার কেউ গোখাদ্য বিক্রি করছেন।
তাঁদের আয়ের একটা উৎস গোরুর দুধ। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দৌলতেই ১টি করে গরু পেয়েছিলেন। প্রতিদিন গ্রামের মহিলারা মোট ৫০০ লিটার দুধ বিক্রি করেন। সেই দুধ সংরক্ষণের জন্য এবার মিল্ক চিলিং ইউনিট গড়ার চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা।
নিজেদের ব্যবসার পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজেও ফেডারেশন আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে। ‘গ্রামের উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী দুস্থ পড়ুয়াদের আর্থিক সাহায্য করে থাকি আমরা,’ জানালেন মারিয়াম্মল।
‘আমরা আরও কিছু করতে চাই। এটা খুবই সামান্য। ’ বন্যাত্রাণে আর্থিক সাহায্য করার সময় বলছিলেন সুদার ফেডারেশনের সদস্য সান্থি। কিন্তু সান্থিরা হয়তো জানেন না, সামান্য হলেও তাঁদের সদিচ্ছার দাম অনেক। অর্থের এককে তার বিচার হয় না।
ওয়ার্ল্ড ভিশন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যারা ধর্ম, জাতপাত, নির্বিশেষে আর্তের সেবায় নিয়োজিত। দারিদ্র এবং অবহেলার শিকার শিশু, তাদের পরিবার ও গোটা সম্প্রদায়ের মানোন্নয়নের ব্রত নিয়েছে তারা।