ছবির মতো সুন্দর আর হেঁয়ালিতে ভরা প্রকৃতি। আর এইসব নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত প্রলুব্ধ করে ভ্রমণ পিপাসুদের। অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতির পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প ও পণ্য যেমন, মণিপুরী ফানেক, উপজাতিদের হাতে তৈরি শাল, বাঁশের ব্যাগ আর ভূত ঝলোকিয়া বলতেই মনে আসে উত্তর-পূর্ব ভারতে কথা। আর এই সবকিছু মিলিয়ে দেশের এই ছোট্ট অংশ। অপূর্ব সুন্দর রহস্যময় মণিপুর আজও অনেকের কাছে প্রহেলিকা, যাকে বোঝা, জানার অনেকটাই বাকি এখনও।
যারা ভারতের ওই অংশে এখনও যাননি বা ইচ্ছে থাকলেও যাওয়া হয়ে ওঠেনি, তাদের জন্য সুখবর। রহস্যময় উত্তর-পূর্বের সৌন্দর্য আর আমেজ আপনার ঘরের দরজায় নিয়ে আসছে গিসকা-শুধুমাত্র নর্থইস্টের পণ্যের অনলাইন মার্কেটপ্লেস। হাতের কাছে দেশের ওই অংশের ঐতিহ্যবাহী পণ্য সহজলভ্য করে দিতে এই উদ্যোগ মেঘনাথ সিংয়ের। ‘যদিও ২৩ বছর মণিপুরের বাইরে রয়েছি। তবুও নিজের রাজ্য এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য কিছু করার ইচ্ছে সবসময় ছিল আমার’, বলেন মেঘনাথ।
মেঘনাথ জানান, নিজের সংস্থা খোলার ইচ্ছে বহুদিনের। সেই ইচ্ছেকে বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে ২০১৪য় মোটা মাইনের তথ্যপ্রযুক্তির চাকরি ছেড়েছেন। সেই সময় অনেকে অনেক রকম ব্যবসার বুদ্ধি দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর মনে মনে ছিল অন্যরকম কিছু। ২০১৪র মাঝামাঝি সময়ে মেঘনাথের উপলব্ধি হয়, উত্তর-পূর্ব ভারতে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি একেবারে নেই বললেই চলে। ‘ছোট্ট বাজার, তবু এখানকার শিল্পী এবং কারিগরদের হাতের কাজ বাইরের জগতের কাছে তুলে ধরার মঞ্চ তৈরি করার একটা চেষ্টা করতে চেয়েছিলাম’, বলেন মেঘনাথ।
সেই সময় ইকো-ফ্রেন্ডলি প্রডাক্ট নিয়ে আওয়াজ উঠেছিল। মণিপুরও সেই সময় ভেষজের দিকে ঝুঁকেছিল। ফলে উন্নতমানের পরিবেশ বান্ধব পণ্যের জন্য মণিপুরের থেকে ভালো বাজার আর হতে পারে না, ভেবে নেন মেঘনাথ। আরও দুই পার্টনার সুরচান্দ এবং রথীশকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাটেনা টেকনোজলিস-এর ই-কমার্স ভেঞ্চার গিসকা খুলে ফেলেন মেঘনাথ। তিন পার্টনারের একসঙ্গে হওয়াটাও মজাদার এক গল্প। মেঘনাথ তাঁর ইচ্ছের কথা ফেসবুকে পোস্ট করছিলেন। সুরচান্দ ছিলেন দীর্ঘদিনের ফেসবুক বন্ধু। আইডিয়া শুনেই পছন্দ হয়ে যায়। নিজেই বাজার নিয়ে ছানবিন করে রিপোর্ট তৈরি করে ফেলেন। রথীশও সেই সময় চাকরি ছেড়ে অন্য রকম কিছু করার চেষ্টা করছিলেন। যোগ দেন মেঘনাথ আর সুরচান্দের সঙ্গে। তাদের যেহেতু কোনও অফিস ছিল না, তাই কফিশপেই যতো আলোচনা সেরে নিতে হত।
তিন উদ্যোক্তা প্রথম যে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলেন সেটা হল পার্টনারদের বোঝানো এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। ২০১৪য় অগস্ট এবং নভেম্বরে দুবার নর্থ-ইস্টে ঘুরেও আসেন তাঁরা। ৮টি রাজ্য ঘুরে দূরদূরান্তের গ্রামের হস্তশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে, তথ্য সংগ্রহ করে, তার মান, বাজারে গ্রহণযোগ্যতা এবং আনা নেওয়ার খরচ যাচাই করেন তাঁরা। কঠোর পরিশ্রমের পর টিম গিসকা অবশেষে ফান্ডিং জোগাড় করে।
মাঘনাথ জানান, মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতের বড় অংশের হস্তশিল্পীরাই গিসকার সাপ্লাই চেন। সাইটে ১৬০০ পণ্য রয়েছে যেগুলি ১০০ জনের ওপর কারিগর এবং সরবরাহকারীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।‘প্রতি সপ্তাহে আমরা স্টকে ৬০টি করে পণ্য যোগ করি। আগামী ৬ মাসে ৬০০০ পণ্য তালিকায় যোগ করার টার্গেট রয়েছে’, বলেন মেঘনাথ। তাঁর দাবি, উত্তর-পূর্বের ৭০ শতাংশেরও বেশি পণ্য শুধুমাত্র গিসকাতেই পাওয়া যাবে, আর কোথাও নয়। ‘গিসকা মূলত পণ্য তৈরির যা খরচ তার ওপর লভ্যাংশ রাখে’, যোগ করেন মেঘনাথ। বর্তমানে এই সাইট ৫০ হাজারের বেশি ইউজার দেখেছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২০০ ইউজার সাইটে ঢোকেন। মেঘনাথ জানান, সাইট ভিসিটরদের ৬৯ শতাংশই মহিলা।
যেভাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে বাড়িতে বসে কেনা-বেচা বা ই-কমার্স বাড়ছে, সবাই সেখানে জায়গা তৈরির চেষ্টা করছে। জয়পুর হোক বা কাশ্মীরি বাক্স, সবাই সবার রাজ্যের সোন্দর্য আর ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। গিসকা অ্যানরয়েড, অ্যপেল আর উইন্ডো ডিভাইসের জন্য মোবাইল অ্যপ নিয়ে আসতে চলেছে। নেটওয়ার্ক আরও বাড়িয়ে নর্থ-ইস্টে লিজিস্টিক আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্য রয়েছে। বেঙ্গালুরুতে একটা ওয়ারহাউসের পরিকল্পনাও মাথায় রয়েছে তিন উদ্যোক্তার।