স্বাস্থ্য সচেতনতার পাঠ দিচ্ছে এমধিল

শরীর সম্বন্ধে সচেতনতা আবশ্যিক বিষয় হলেও অনেকেই সে সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নন। জানারও যে তেমন ইচ্ছে সকলের থাকে তেমন নয়। চলছে, চলুক মানসিকতায় অনেক সময়েই মানুষ শরীরকে অবহেলা করে দিন কাটিয়ে দেন। কিন্তু একটা সময়ের পর সেই অবহেলাই ভয়ংকর ব্যাধি রূপে সামনে এসে দাঁড়ায়। মানুষকে তাঁর শরীর সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করা, তাঁদের সমস্যার সমাধান দেওয়াকে সামনে রেখেই ভারতে পথ চলা শুরু করে নান্দু মাধবের এমধিল।

স্বাস্থ্য সচেতনতার পাঠ দিচ্ছে এমধিল

Thursday September 03, 2015,

3 min Read

গোল্ডম্যান সাচসের একজন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসাবে কাজ করলেও সে কাজে কখনই মন বসেনি নান্দু মাধবের। তবে সিলিকন ভ্যালিতে বসে এই সংস্থায় কাজ করার সুবাদে নান্দুর ব্যবসায় উদ্যোগী বহু তরুণ-তরুণীর সঙ্গে আলাপ হয়। যা তাঁকে হঠাৎই অনুভব করায় চাকরি নয়, তার মন আসলে একটা ব্যবসা করতে চায়। নান্দু একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে এরপর যোগ দেন পিস কর্পস সংগঠনে। লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ঘুরে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে স্বাস্থ্য সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে গিয়ে এসময়ে নান্দুর মনে হয় একজন কোটিপতিকে আরও অর্থ রোজগারের কৌশলগত পরামর্শ দেওয়ার কাজ সে না করলে অন্য কেউ করবে। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে শরীর সম্বন্ধে সচেতন করে তোলা। কারণ এই তথ্য তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট চিকিৎসক পৃথিবীতে নেই। সেই ভাবনাকে সামনে রেখে হার্ভার্ড থেকে এমবিএ সম্পূর্ণ করে নান্দুর মনে হয় এবার তাঁর নতুন একটি সংস্থা খোলার সময় এসেছে।

image


জন্ম থেকে মার্কিন মুলুকের বাসিন্দা হিসাবে কাটানোর পর ২০০৮ সালে ভারতে ফিরে আসেন নান্দু মাধব। ২০০৯ সালে শুরু করেন নিজের সংস্থা এমধিল। নান্দু বুঝতে পারেন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা ভারতের সবস্তরের মানুষের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু শারীরিক সমস্যা নিয়ে তাঁদের যথেষ্ট জ্ঞানের অভাব আছে। অথচ ডায়াবেটিস, ধূমপান সংক্রান্ত সমস্যা দেশের সব কোণায় ছড়িয়ে আছে। যার থাবার বাইরে নন ধনী শ্রেণির মানুষজনও।


এসএমএস ভিত্তিক পরিষেবা প্রদান করেই পথ চলা শুরু করে এমধিল। মোবাইল সংযোগ প্রদানকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে এই পরিষেবা শুরু হয়। দেশের টিয়ার ওয়ান ও টিয়ার টু শহরগুলিতে মূলত ১৭ থেকে ২৫ বছরের তরুণ-তরুণীকে সামনে রেখেই এই মোবাইল পরিষেবার সূত্রপাত। কারণ এই বয়সের ছেলেমেয়েরাই ওয়েব প্রযুক্তিকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে। এছাড়া এই বয়সের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে যৌন সমস্যা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা যেমন প্রতিমুহুর্তে তৈরি হতে থাকে, তেমন এসব সমস্যা তাদের প্রায়শই সমস্যায় ফেলে। আবার এগুলো এমন বিষয় যা সর্বসমক্ষে আলোচনা করা যায় না। এক্ষেত্রে তাদের জন্য অনেকটাই সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয় এমধিল।

image


শেষ দুবছরে এসএমএস ছাড়াও মোবাইল ও ডেক্সটপের জন্য অ্যাপলিকেশন তৈরি করেছে এমধিল। যার মধ্যে ৬০ শতাংশ মানুষ মোবাইলে ও ৪০ শতাংশ মানুষ ডেক্সটপে তাদের পরিষেবা ব্যবহার করে থাকেন। এদিকে এমধিলের ৮৫ শতাংশ ব্যবহারকারী হলেন ভারতের বাসিন্দা। ১০ শতাংশ ব্যবহারকারী পাকিস্তান, সৌদি আরব, ফিলিপিন্স ও ইন্দোনেশিয়ার। বোঝার সুবিধার জন্য ইংরাজি ও হিন্দি দুই ভাষাতেই এসএমএস পাঠিয়ে থাকে এমধিল। ভাষাগত বাধা অতিক্রম করতে আরও বেশি করে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ভিডিও আপলোডের দিকে জোর দিচ্ছে সংস্থা। তবে এত কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য একটাই, আর বেশি করে মানুষের কাছে স্বাস্থ্য সচেতনতার পাঠ পৌঁছে দেওয়া।


বিভিন্ন ওষুধের সংস্থার সঙ্গে গাঁটচছড়া বেঁধেই পরিচালন ব্যয় তুলে থাকে এমধিল। ওষুধের সংস্থাগুলি নিজেদের ওষুধ ও তার ব্যবহারিক দিক নিয়ে বিভিন্ন লেখা এমধিলে দিয়ে থাকে। তার জন্য সংস্থাগুলির কাছ থেকে টাকা পায় এমধিল। মুলত ইউটিইব, ফেসবুক ও টুইটারকে কাজে লাগিয়ে ক্রমশ নিজেদের মেলে ধরছে এই সংস্থা। পৌঁছে যাচ্ছে নতুন নতুন মানুষের কাছে। আগামী পাঁচ বছরে ইউটিউবে এমধিলের দেওয়া স্বাস্থ্য সচেতনতা সংক্রান্ত ভিডিও প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ মানুষের কাছে পোঁছে যাবে বলে আশা করছেন নান্দু মাধব। যারমধ্যে অধিকাংশ মানুষই হবেন প্রত্যন্ত এলাকার। যেখানে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশ্ন আছে ঠিকই, কিন্তু সে প্রশ্নের উত্তর পেতে সহজে চিকিৎসকের পরামর্শ মেলার উপায় নেই।