কোটিপতি বানান দেওলিয়া বাবার ছেলে

কোটিপতি বানান দেওলিয়া বাবার ছেলে

Wednesday September 23, 2015,

3 min Read

সকলেই নিজে কোটিপতি হতে চান। আমরা পেয়েছি এমন একজনকে যিনি অপরকে কোটিপতি করতে মরিয়া। ঠাট্টা নয়। ভদ্রলোকের নাম প্রতীক প্যাটেল। এক জন দুজন নয় এখনও পর্যন্ত তিরিশ হাজার মানুষকে কোটিপতি বানানোর কাজে লেগে রয়েছেন প্রতীক।

২০১৩ সালে প্রতীক প্যাটল তৈরি করেন ‘নিফটি মিলিওনেয়ার’। আজ তাঁর সংস্থা শেয়ার বাজারে ২০০ কোটির পুঁজি সামলায়।

ভারতে শেয়ার বাজারের পরিসংখ্যানটা মাথায় ছিল প্রতীকের। সংখ্যাচিত্র বলছে দেশের মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ শেয়ার বাজারে টাকা খাটান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যাটা ৪০ শ‌তাংশ। বর্তমানে আমাদের দেশে ৪৫০০ কোটিরও বেশি টাকা শেয়ার বাজারে খাটছে। যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় দেড় কোটি লগ্নিকারী। আগামী ১০ বছরে এই সংখ্যাটা আরও দশ গুন বৃদ্ধি পাবে। আগামী দিনের এই লগ্নিকারীদেরই সঠিক বিনিয়োগের দিশা দেখাতে চান প্রতীক। ‘নিফটি মিলিওনেয়ার’ আপাতত সেই পথেই এগোচ্ছে।

বানিজ্যিক সহযোগী, সহকর্মী ও স্ত্রীর সঙ্গে প্রতীক (বাঁ দিকে)

বানিজ্যিক সহযোগী, সহকর্মী ও স্ত্রীর সঙ্গে প্রতীক (বাঁ দিকে)


মূলত প্রতিটি লগ্নিকারীকে অর্থিক লেনদেনের স্বাধীনতা দেওয়াই এই সংস্থার কাজ। সে কারণে গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন কোম্পানির কর্মীরা। অর্থ বৃদ্ধির উপায় ছাড়াও তাঁর গ্রাহককে বাজারের ঝুঁকি সামলানোর পথ বাত‌লে দেন। লগ্নিকারীরা যাতে প্রতারণার ফাঁদে না পড়েন সেদিকেও নজর রাখে তাঁর সংস্থা। আর তাই প্রতীকের সংস্থা গ্রাহকদের অসীম আস্থা কুড়িয়েছে। ‘নিফটি মিলিওনেয়ার’-এর মাধ্যমে লেনদেন করে লাভের মুখ দেখছেন তাঁরা। 

পরিসংখ্যান বলছে, তাঁর মুম্বইয়ের ফার্ম দেড় হাজার লগ্নিকারীকে পরিষেবা দেয়। সারা দেশে তাঁর কোম্পানির ৩০ হাজারেরও বেশি লগ্নিকারী রয়েছেন।
প্রতীকের টিম

প্রতীকের টিম


তবে এই সাফল্য একদিনে আসেনি। প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রতীককে। ১৮ বছর বয়সেই বাবাকে দেওলিয়া হতে দেখেছেন। এই ঘটনাই তাঁকে নাড়িয়ে দেয়। এমন একটা পরিস্থিতি আসে, যখন রোজ খাওয়ার পয়সা জোগাড় করাই তাঁর কাছে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই সময় থেকে প্রশ্নটা ঘুরপাক খেতে থাকে তাঁর মনে। বাবার ‘ব্রোকারেজ ফার্ম’-এর উঠে যাওয়ার উৎস খুঁজতে শুরু করেন তিনি। এক সময় সেই উৎস খুঁজতে গিয়ে নিজেই শেয়ারে লগ্নি করে বসেন। শুরুতেই ধাক্কা খান। শেয়ারে লগ্নির টাকা ঠিক কোথায় যায়? প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে আসে তাঁর মনে। সময় নষ্ট না করে শেয়ার বাজারে লাভের বেশ কয়েকটা বই পড়ে ফেলেন। প্রতীক কথা বলেন কয়েকজন ব্রোকারের সঙ্গেও। নিজের অভিজ্ঞতা জানান পরিচিত কয়েকজনকে। কাকতালীয়ভাবে প্রতীকের পরামর্শে লগ্নি করে লাভের মুখ দেখেন তাঁরা। এদেরই মধ্যে একজন তাঁকে পরামর্শ বাবদ কিছু টাকা দেন। সেই থেকে ইট গাথা শুরু ‘নিফটি মিলিওনেয়ার’-এর।

একটা ছোট্ট টেবিল, একজন কর্মী নিয়ে বাবার অফিসের একটা ছোট অংশে যাত্রা শুরু হয় ‘নিফটি মিলিওনেয়ার’-এর। পরবর্তীকালে যা ভারতের অন্যতম শেয়াররে পরামর্শদাতা ফার্ম হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। খুপড়ি থেকে মাত্র চার বছরের মধ্যেই সাড় আট হাজার বর্গফুটের বিশালাকার অফিস গড়ে ফেলেছেন প্রতীক।

লগ্নিকারীদের সংখ্যা বেড়েছে। কর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে তাল মিলিয়ে। এক থেকে ১০০ ছুঁয়েছে ‘নিফটি মিলিওনেয়ার’-এর কর্মী সংখ্যা। অতি সাফল্যেও মাথা ঘুরে যায়নি। কারণ মহাত্মা গান্ধীর কথাটা এখনও তাঁর কানে বাজে, ‘দ্য ওয়ার্ল্ড হ্যাজ এনাফ ফর এভরি ওয়ান্স নিড, বাট নট এনাফ ফর এভরিওয়ানস্ গ্রিড।’