মানসি জাভেরি প্রথম যখন বুঝতে পারলেন মা হবেন, তখন দু ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। প্রথম মাতৃত্বের সম্ভাবনায় ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা অনুভব করছিলেন। আবার মনে মনে ভয় হচ্ছিল, ছোট্ট শিশুকে কতটা সামলাতে পারবেন? অসুখ করলে বুঝতে পারবেন তো? যদি বেশি খাইয়ে ফেলেন অথবা না জেনে কম খাবার দেন? অফিস আর বাড়ি দুটো সামলাতে পারবেন তো? আরও নানা ভাবনার ভিড় ছিল মনে মনে। এমনকী মেয়ের জন্মের পরও সবসময় ভয়ে থাকতেন, ঠিক করছেন কিনা এই ভেবে। এতকিছু ভাবনার মধ্যেই এখন দু সন্তানের মা মানসি। বাচ্চা বড় করা মানসির কাছে এখন মনে হয় কোনও ব্যাপারই নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ, বাচ্চাদের সঙ্গে পার্কে খেলার সময় বের করা, অফিসের মিটিং- সব দেখার মতো ম্যানেজ করেন মানসি যা অন্য মায়েদের এমনকী হবু মায়েদের বিনিদ্র রজনীর অবসান ঘটাবে।
মানসি জানেন, সব মা-বাবাই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। ঠিক কী করা উচিত, এবার তার শিক্ষা দিতে চান মানসি। তখনই Kidsstoppress.com এর আইডিয়া আসে। ‘সদ্য বাবা-মায়েদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে এই ওয়াবসাইট’, বলেন মানসি। খাবার থেকে ঘোরাঘুরি, নানা রকম অ্যাকটিভিটি, ইভেন্ট, পরিষেবা, শপিং-একটা শিশুর জন্য যা যা দরকার তার প্রায়সব কিছুর উত্তর মিলবে Kidsstoppress.com এ। বাবা-মায়েদের অভিজ্ঞতার কথাও থাকে। ‘আমার নিজের ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য ভালো কিছু করতে গিয়ে মনে হয়েছে আরেকজন মা-ই ভালো পরামর্শ দিতে পারেন’,বলেন মানসি।
বাচ্চা বড় হওয়া এবং বড় হতে হতে আনন্দ দেওয়া-সব সুলুক মিলবে একটা জায়গা থেকে, এটাই চেয়েছিলেন মানসি। ‘অনলাইনে অনেক পরামর্শ পাওয়া যায়। কিন্তু কোনওটাই ভারতীয়দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আবার প্রত্যেকটা শহরের পরিস্থিতিও আলাদা আলদা। আমি ফুলটাইম চাকরিজীবী ছিলাম। তাই অন্য মায়েরা শিশুর জন্য কোনটা ভালো বা খারাপ কী বলছেন সেটা শোনার সুযোগ আমার খুব একটা ছিল না। আমার যেটা ছিল সেটা হল প্রযুক্তি। তখন থেকেই ভাবছিলাম কীভাবে দুটোকে এক করে দেওয়া যায়’, বলেন মানসি। ‘যদিও কোথায় কী রোস্তোরাঁ নতুন হল,কী সিনেমা নতুন এল, কোথায় কী কনসার্ট এই সব নিয়ে তথ্য দিতে মিডিয়া ছাড়াও কত রকম মাধ্যম রয়েছে। অথচ কোনও নতুন পার্ক হলে বা দিল্লির শিশু যাদুঘরে কোনও বিশেষ শো থাকলে অথবা রানিবাগ, বাইকুল্লা জু বা সঞ্জয় গান্ধি ন্যাশনাল পার্কে শিশুরা কী পেতে পারে- এই সব তথ্য কোথাও পাওয়া যায় না বললেই চলে’, মানসির অনুযোগ। ‘আর এইসব অজানা তথ্যই দেয় Kidsstoppress.com। যেহেতু শিশুদের নানা জিনিসপত্র বেশ খরচ সাপেক্ষ তাই অন্য মায়েদের ফিডব্যাক নিই সব সময়’, জানান মানসি।
প্রথম সন্তান জন্মানোর দু বছর পর ২০১১র জুনে একার চেষ্টায় মুম্বইয়ে Kidsstoppress.com শুরু করেন এই উদ্যোক্তা। তখন থেকেই তিনি এই ওয়েবসাইটের ব্লগার-ইন-চিফ। যদিও তার আগে আট বছর ধরে অ্যাডভারটাইজিং, ব্র্যান্ডিং, রিটেল, লাইফস্টাইল ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং শেষের দিকে ভারতে ফ্রেঞ্চ কানেকশন, ইউকে (FCUK)এর মার্কেটিং এবং কমিউনিকেশন হেড ছিলেন। বহুমুখী প্রতিভার মানসির জন্য ওয়েবসাইট গড়ে ফেলা ছিল একেবারে নতুন কিছু। এবং একই সঙ্গে বিরাট বড় চ্যালেঞ্জও। যে কোনও মায়েদের ব্লগ বা বেবি সেন্টারের থেকে অনেক ধাপ এগিয়ে Kidsstoppress। কারণ এই ওয়াবসাইটে শিশুদের লাইফস্টাইল নিয়ে কথা বলে যেখানে লেটেস্ট ব্র্যান্ড, নানা পরিষেবা, ইভেন্টের খবর দেয়। একই সঙ্গে অন্য উদ্যোক্তাদেরও টার্গেট অডিয়ান্সের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করে।
গত দুবছর ধরে Kidsstoppress এ ফুলটাইম এবং পার্টটাইমের বহুমুখী প্রতিভার একগুচ্ছ টেকসেভি তরুণ-তরুণীরা কাজ করছেন। ‘দিনে গড়ে শ খানের ভিজিটর দিয়ে শুরু হয়েছিল। এখন ৬০ হাজার ভিজিটর। মাসে এক লক্ষ কুড়ি হাজার পেজভিউ হয়, যাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ রিপিট ভিজিটর’, জানান মানসি। শিশুদের নিয়ে নানা ইভেন্ট করে বিভিন্ন শহরের এমন সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে নিয়েছে Kidsstoppress। এবার Kidsstoppress Consulting শুরু হয়েছে। ২০১২র দিওয়ালিতে ‘বাজার’ নামে অনলাইন কিডস এক্সিবিশনের আয়োজন করে মানসিরা। পরের বছর ২০১৩তেও হয় একই আয়োজন। মায়ের স্তন্য পান থেকে সামার ক্যাম্প, বাবা-মা এবং শিশুদের জন্য নানা পরামর্শ দেওয়া হয়। ‘মায়েরা আমার কাছে লিখে পাঠান। তাঁরা জানতে চান কীভাবে নানা সিদ্ধান্ত নিতে এবং তথ্য দিয়ে kidsstoppress.com সাহায্য করতে পারে। এটাই আমার কাজের সবচেয়ে বড় পুরস্কার’,বলেন তৃপ্ত মানসি।