শিশুরা ক্রুশবিদ্ধ! "Hello, Digital India শুনতে পাচ্ছ?"

ভারতে শিশু নিগ্রহের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন কাজ চালানোর জন্যে ২০১৪ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ভারতের নাগরিক কৈলাশ সত্যার্থী। মালালা ইউসুফজাঈয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ওঁকে নোবেল দেওয়া হয়। এর ভিতর একটা চিটচিটে অস্বস্তিও আছে বৈকি!

শিশুরা ক্রুশবিদ্ধ! "Hello, Digital India শুনতে পাচ্ছ?"

Tuesday November 15, 2016,

3 min Read

image


সারা ভারত জুড়ে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছেই। দেশের বহু শিশু জ্ঞান হওয়া ইস্তক টের পাচ্ছে কাকে বলে জীবন যন্ত্রণা। এ দেশের আরও বহু প্রান্তিক মানুষের মতো শিশুরাও এ দেশে জন্মগতভাবে শোষিত মানুষ। প্রতিদিন তাদের ওপর চলে নানান অত্যাচার। এই সত্য অস্বীকার করার তো কোনও উপায়ই নেই। যদিও দেশে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শিশুদের দাবি দাওয়া নিয়ে লড়াই করছে। এ দেশে শিশু অধিকার রক্ষায় নেতৃস্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চাইল্ড রিলিফ অ্যান্ড ইউ বা ক্রাইয়ের উদ্যোগের পাশে বাংলা ইয়োর স্টোরি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ প্রচার মাধ্যম হিসাবে শিশু অধিকার রক্ষার আন্দোলনে বরাবর সামিল।

১৪ নভেম্বর ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর জন্মদিন। এই দিনটি শিশু দিবস হিসাবে পালিত হয়। রাজা আসে-যায়, রাজা পাল্টায় কিন্তু দিন বদলায় না। এই স্লোগানটি অনেকেরই চেনা স্লোগান। এ দেশের বহু শিশু প্রতিদিন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে এর মর্ম!

১৫ অগাস্ট দিনটি ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে ঘোষিত। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীনের পর থেকে আজকের এই দিনটি পর্যন্ত কয়েক প্রজন্মব্যাপী যুগে যুগের শিশুরা ধারাবাহিক পীড়নের শিকার। শিশুদের রাজত্বে এখন সত্যিকারের রাক্ষস-খোক্ষস, দৈত্যদানো ইত্যাদি ভয় ঢুকে পড়েছে। সত্যিকারের ড্রাকুলারা শিশুদের বুক চিঁড়েই রক্তপান করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অচ্ছে দিন এখনও এ দেশের শিশুদের জীবনে বহুত দূর।

তবে সময়টা থেমে নেই। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির মাধ্যমে কোথাও কোথাও শিশুরা প্রতিরোধ করছে। কখনও তারা সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চেয়ে আকুল আবেদন জানাচ্ছে। নোবেল জয়ী মালালা যেমন তালিবানি উগ্রতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা নিয়েছিলেন। এ দেশের শিশু-কিশোর-কিশোরীরাও তেমন অবহেলার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করার মতো সাহস দেখাচ্ছে।

এ বছরের শিশু দিবসে ক্রাইয়ের তরফে এ দেশের সমস্ত সরকার ও সুস্থ নাগরিকদের কাছে শিশু অধিকার বাস্তবায়িত করতে আবেদন জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে ক্রাইয়ের তরফে তথ্য ও পরিসংখ্যান পেশ করে দেখানো হয়েছে, এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরের অধিবাসী শিশু, কিশোর-কিশোরীদের একটা বড় অংশ কী করুণভাবে অসহায় জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

বলাবাহুল্য, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গোটা শৈশব-কৈশোরকাল ভবিষ্যতের এই নাগরিকরা চরম অবহেলিত থাকায় পরবর্তীকালে যে সুস্থ নাগরিক হিসাবে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, এ আর বেশি কথা কী! ক্রাইয়ের তরফে অভিযোগ, শিশু অধিকার রক্ষা নিয়ে এ দেশে আইন-কানুন বা সরকারি নীতি-প্রকল্পের অভাব নেই। কিন্তু কাজের বেলায় সবটাই অষ্টরম্ভা।

দেখা যাক, এ দেশের ভবিষ্যতের নাগরিকদের শৈশব, কৈশোরকালের দুর্গতির টুকরো ছবি। এও দেখা যাক, ওঁরা নিজেরা কী চাইছে –

নিজের দেশে নিরাপত্তা চাই

এ দেশে গত ১০ বছরের কিছু বেশি সময়ে শিশুদের ওপর অপরাধ বেড়েছে ৫০০ শতাংশ। শিশুদের ওপর অপরাধের হার ১৫ ভাগ বেড়েছে। শিশুদের ওপর সব ধরনের অন্যায় অবিচার অবিলম্বে হওয়া উচিত। সমাজের উন্নত হওয়া দরকার।

নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবে বিয়ে করতে চাই

১৪ বছরের নীচের ২৯ লক্ষ ১৮ হাজার ৭৭৪জন কিশোরীর জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন অভিভাবকেরা। গত ১২ বছরে এই ধরনের ঘটনা ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। সাবালিকা হওয়ার আগে এদের ভিতর মা হয়ে পড়ছে অনেকেই। এ ছাড়া ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী প্রতি চার জনের মধ্যে একজন পেশায় শিশু শ্রমিক। বলাবাহুল্য, শিক্ষার অধিকার থেকেও ওরা পুরোপুরি বঞ্চিত।

খিদে পায় বলে ঘুমোতে পারি না

ভারতের বহু শিশু জন্মের পর থেকেই অপুষ্টির শিকার। ৫ বছরের নীচে বয়স - এমন ৭০ শতাংশ শিশু অ্যানিমিয়ায় ভুগছে। সারা দেশে ১৭টি রাজ্য ২০১৫-২০১৬ সালে অ্যানিমিয়ায় ভোগা শিশুর হার ৩৮ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ শতাংশে।

হ্যালো, ডিজিট্যাল ইন্ডিয়া তোমরা কি শুনতে পাচ্ছ?

এ দিকে ভারতের মোট জনসংখ্যার ভিতর ৪০ শতাংশই নাবালক-নাবালিকা। সারা দেশে ৪৭ কোটি ২০ লক্ষ শিশু ও কিশোর বসবাস করছে। যারা কিনা এদেশের ভবিষ্যতের নাগরিক। তাহলেই ভাবুন, জীবনের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে না পেরে যে বিপুল সংখ্যক অবহেলিত শিশু-কিশোর বেড়ে উঠছে, তাদের পক্ষে কি সুস্থ, সামাজিক নাগরিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করাটা বাহুল্য নয়?

এদিকে শিশু-কিশোর-কিশোরীরা বেশি কিছু চাইছেও না। ওরা চাইছে ভারতে জন্মগ্রহণকারী হিসাবে স্কুলবেলায় বইপত্তর, কঠিন অসুখের সময় ডাক্তারবাবু‌র ওষুধ - সব মিলিয়ে মানুষের সুস্থ জীবন।