দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মন্দিরবাজার ব্লক। এলাকার গ্রামগুলির অনেক বাসিন্দাই শোলার কারিগর। এতদিন সামান্য কিছু আয় করতেন শোলার কাজ করে। লাভ প্রায় থাকত না বললেই চলে। এই শিল্পকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন কল্পনা পাইক। তাঁর মতো নয়জন মিলে ধান, সরষে, মুগকলাই চাষের দেশে জলা জমিতে শোলা চাষ ও শিল্পের প্রসারের উদ্যোগ নিলেন। চাষের অযোগ্য জমিতে শোলা ফলল। আর তাতেই আজ স্বনির্ভর ব্লকের তিনশর বেশি মহিলা। এই নয়জনের চেষ্টায় জন্ম নেয় সংগ্রামী গুচ্ছ সমিতি।
২০১১ সালের নভেম্বরে ব্লকের ধোপাহাট, আটাপাড়া, মাধবপুর-এর মতো পাঁচটি গ্রামের ২১০ জন কারিগরকে নিয়ে জন্ম নেয় সংগ্রামী গুচ্ছ সমিতি। সমস্ত সদস্যই মহিলা। কল্পনাদেবীর এই উদ্যোগের আগে তাঁরা প্রায় সকলেই ছিলেন গৃহবধূ। আর্থিক স্বাধীনতা কাকে বলে সে সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না। আজ মাস গেলে হাতে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পান। তার ওপর সমিতির তহবিলে মাসিক চাঁদাও দেন। তবে শুরুটা কিন্তু এত সহজও ছিল না। কল্পনাদেবী জানালেন, “কারিগরদের প্রায় কেউই স্কুলের গণ্ডী পেরোননি। ঘরের দৈনন্দিন কাজ, স্বামী সন্তানদের দেখভালই তাঁদের জীবন ছিল। আজ এঁরা প্রত্যেকেই স্বনির্ভর।”
রাজ্য সরকারের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রশিক্ষক ছিলেন কল্পনা। তখন থেকেই মহিলাদের স্বনির্ভর করার চেষ্টা করে গেছেন তিনি।২০০১ সালেই ১৩ জন কারিগরকে নিয়ে ছোট গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন। পরে স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা আসায় সংগ্রামী গুচ্ছ সমিতি গড়ার সুযোগ পেয়ে যান। প্রথমে গ্রামগুলিতে ঘুরে চাষের অযোগ্য জলা জমি চিহ্নিত করা হয়। বছরে ৪০০-৫০০ টাকার বিনিময়ে জমির মালিক সেই জমি শোলা চাষের জন্য দিতেন। এমন প্রায় পাঁচ বিঘে জমি নিয়ে শোলার চাষ শুরু করে এই সমিতি।
শোলা চাষের ক্ষেত্র ধানের মতো বীজ কিনে চারা তৈরি করা হয়। এরপর জমিতে সেটি রোঁয়া হয়। ৩ মাস পর শোলা গাছ কেটে সেটি রোদে শুকোতে হয়। কারিগররা সমিতির ঘরে বসে তৈরি করেন ফুলের ঝারি, গোলাপ, জুঁই, জিনিয়া। অনেক সময় ব্লিচিং করে তাতে রং করে ফল, পাতা, ঘাস তৈরি করা হয় ঝারির জন্য। বাড়ির কাজকর্ম সেরে সমিতির হলঘরে মহিলারা কাজ করতে যান নিয়মিত। বেলা ১১টা থেকে ৪ টে পর্যন্ত কাজ করেন তাঁরা। এরপর আবার রাত নটা থেকে বারোটা পর্যন্ত চলে কাজ।
শুধু শোলার কারিগরীকেই নয়, সচেতনতা প্রসারে একাধিক পদক্ষেপ করে এই সমিতি। যার অন্যতম হল বাড়িতে শৌচালয়ের ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য সচেতনতা শিবির এবং বাড়িতেই সিমেন্টের চারিতে জৈব সার তৈরিতে উৎসাহ দেওয়া। “মাসে দেড় লক্ষ টাকার মতো বরাত পাওয়া যায়। পুজোর সময় আর সবলা, হস্তশিল্প মেলা কিংবা দিল্লি হাটে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেলে বরাতের পরিমাণ তিন লক্ষ ছাড়ায়।”, বললেন কল্পনা।
বর্তমানে সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩২০। কল্পনাদেবীর আক্ষেপ, সকলকে সারা বছর কাজ দেওয়া সম্ভব হয় না। সমিতি কোঅপারেটিভ অ্যাক্টের আওতায় এলে স্কুল, কলেজ কিংবা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজের বরাত আরও বেশি পাওয়া যাবে।নয়নয় করে সমিতির পুঁজি দাঁড়িয়েছে ষাট লক্ষে। নিজেদেক একটি ওয়েবসাইট খুলে সমিতির কাজকে ভিনরাজ্যে পৌঁছে দিতে চান কল্পনা দেবী।
Related Stories
March 14, 2017
March 14, 2017
Stories by Shilpi ChakrabortyBhattacharya