প্রগতিশীল পাঠাগারের সাক্ষরতা আন্দোলন

প্রগতিশীল পাঠাগারের সাক্ষরতা আন্দোলন

Wednesday March 02, 2016,

2 min Read

অক্ষর জ্ঞান নেই। তাই টিপসই দিয়ে কাজের টাকা বুঝে নিতে হয়। মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটারের যুগে এখনও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, ভাবা যায় না। খুব বেশি দূর নয়। হাওড়ার বাগনানের কথা বলছি। এখানকারই বাঁটুল গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগাবেড়িয়া গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় তিন হাজার। গ্রামে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প আছে। সেখানেই অনেকে এখনও টিপসই দিয়ে টাকা তোলেন।কারন লিখতে জানেন না ওরা। নিরক্ষর এই মানুষগুলিকে সাক্ষর করার দায়িত্ব নিয়েছে গ্রামেরই প্রগতিশীল পাঠাগার।

image


উদ্যোগটা নিয়েছিলেন মূলত লাইব্রেরি পরিচালন সমিতির সদস্য দীপঙ্কর সামন্ত, রূপালি সামন্ত, অতনু মান্নারা। বাগবেড়িয়া গ্রামের লেখাপড়া না জানা রাম-রহিমদের একসুতোয় বেঁধে সাক্ষর করে তোলাই ছিল লক্ষ্য। লাইব্রেরিয়ান শাশ্বত পাড়ুইকে বিষয়টি জানানোর পর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনিও। লাইব্রেরিয়ানের অনুমতি মেলা মাত্রই মাঠে নেমে পড়েন দীপঙ্কর-রূপালিরা। সাক্ষর জ্ঞান নেই এমন বেশ কয়েকজন মহিলা এবং পুরুষদের জোগাড় করে তাদের খাতা পেন্সিল দিয়ে নাম সই করা শেখানো দিয়ে শুরু হয় প্রগতিশীলের স্বাক্ষর অভিযান।

এতো গেল প্রাথমিক উদ্যোগ। সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে টাকার প্রয়োজন। ঠিক হল এই কাজের সঙ্গে ধাপে ধাপে লাইব্রেরির পাঠকদেরও যুক্ত করা হবে। লাইব্রেরির সম্পাদক দীপঙ্কর সামন্ত বলেন, ‘টিপ সই দিতে গিয়ে নিজেদের অজান্তে যে কত ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তার হিসেব থাকে না সরল মানুষগুলির কাছে। অক্ষরজ্ঞানটুকু থাকলে সেই সমস্যা হয় না। আমরা সেটাই করতে চেয়েছি। আর্থিক সমস্যাও আছে। লাইব্রেরির পাঠকরা প্রত্যেকে এগিয়ে এলে সেটাও মিটে যায়’।

দিন বদলেছে। সব কিছু বুঝতে পারলেও নুন্যতম অক্ষর জ্ঞানহীন লোকগুলির পক্ষে কিছু করা সম্ভব ছিল না। না ছিল তেমন স্কুল, না কেউ কখনও এগিয়ে এসেছে। প্রগতিশীল লাইব্রেরির এই উদ্যোগ নতুন জীবনের সন্ধান দিয়েছে ওদের। অনেকে সাহায্যের হাতও বাড়িয়েছেন। লাইব্রেরিয়ান শাশ্বত পাড়ুই বলেন, রাজ্যের গ্রন্থাগারগুলিতে লোক কম। নিজে দুটি গ্রন্থাগারের দায়িত্ব নিয়ে রেখেছি। কাজের ফাঁকে সাধ্যমতো সময় দিয়ে সাক্ষর করার উদ্যোগে সামিল হই’। শাশ্বতবাবুদের কাছে এটাই এখন বড় চ্যালে়ঞ্জ। যেমন করে হোক অক্ষরজ্ঞানটুকু শেখাতে হবে নিরক্ষরদের। তার জন্য সচেতনাও তৈরি করছেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বয়স্করা তো বটেই কম বয়েসীদের উৎসাহও কম নয়। তাই প্রতিদিন যেন একটু একটু করে ভিড় বাড়ছে প্রগতিশীলের সাক্ষর করার উদ্যোগে।