গোলপার্কে ম্যালের আমেজ The Whistling Kettle

গোলপার্কে ম্যালের আমেজ The Whistling Kettle

Saturday May 27, 2017,

3 min Read

কনকনে ঠাণ্ডা, হালকা তুষারপাত আর ক্যাভেন্টার্সে বসে ধোঁয়া ওঠা দার্জিলিং টি-য়ে চুমুক। গরমের আগুনে কলকাতায় এই সুখস্মৃতি একটু হলেও আরাম দেবে। আর এই সুখস্মৃতি যদি কলকাতার বুকেই বাস্তব হয়ে ওঠে, তাহলে তো কথাই নেই। সেটাই করে দেখিয়েছেন শৈলেশ সারদা, দার্জিলিং চৌরাস্তার নাথমালের চতুর্থ পুরুষ, তরুণ উদ্যোগপতি।

image


কলকাতায় সেই শীতল দার্জিলিংয়ের উপভোগ্য ম্যাল অথবা চৌরাস্তা, কুয়াশা বা মেঘে ঢাকা পথ হয়ত পাওয়া যাবে না, কিন্তু শহরের গোলপার্কে বসেই ক্যাভেন্টার্সের আমেজ পেয়ে যেতে পারেন। সৌজন্যে শৈলেশের দ্য হুইসলিং ক্যাটেল। জিভে জল আনা মাংসের রকমারি পদ আর দার্জিলিং চা...মনে হবে একটুকরো শৈলশহর কলকাতার বুকে।

হুইসলিং ক্যাটেল হল ছিমছাম ছোট্ট ক্যাফে কাম স্টোর। মেনুতে দার্জিলিঙের ক্যাভেন্টার্সে যেমন ইংলিশ ব্রেকফাস্টের নানা আইটেম থাকে প্রায় সব পদই গোলপার্কে তুলে এনেছেন শৈলেশ। হেসে বললেন রাহুল ঝা, ক্যাভেন্টার্সের তৃতীয় প্রজন্মের তরুণ প্রতিনিধি। গোলপার্কের ল্যান্ডমার্ক মৌচাকের কাছে ৩০ সিটের ছিমছাম এই ক্যাফেতে প্রায় সারাদিনই ইটালিয়ান মেনুর ব্রেকফাস্ট, পিৎজা, পাস্তা পাওয়া যায়। তাছাড়া, যেমন ইচ্ছে ব্ল্যাক, হোয়াইট, গ্রিন এবং হারবাল চা, কফি, রকমারি মিল্কশেকে চুমুক দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে হুইসলিং ক্যাটেল।

ক্যাফের পাশাপাশি স্টোরও আছে, যেখানে টিসেট, কফি সেটে, কফি মাগের পাশাপাশি নাথমাল টি, ১০০ শতাংশ হারবাল, দার্জিলিঙে জৈব পদ্ধতিতে চাষের চা পাওয়া যাবে। ক্যাফে থেকে চা টেস্ট করে বাড়ির জন্য নিয়ে যেতে পারেন চায়ের প্যাকেট। দার্জিলিঙে ওরা যত কাস্টমার পান তাঁদের বেশিরভাগই কলকাতার পর্যটক। অনলাইনে তাদের কাছ থেকে সারা বছর অর্ডার পান ওরা। তাঁরাই অনুযোগ করেন কেন সমতলে কোনও আউটলেট রাখেননি। তার জন্যই হুইসলিং ক্যাটেল টি বুটিক কাম ক্যাফে খোলার প্ল্যান, যেখানে শহরের মানুষ আসবেন, চা খেয়ে দার্জিলিং ঘোরার স্মৃতিচারণ করবেন, তার সঙ্গে পরের ট্যুরের প্ল্যানও করে ফেলতে পারবেন, কীভাবে কলকাতায় ক্যাফে খোলার চিন্তাভাবনা শুরু হল বলছিলেন শৈলেশ।

এবার একটু মেনুর ধারণা দিই। আগেই বলেছি দার্জিলিঙের ক্যাভেন্টার্সের বিখ্যাত মাংসের পদগুলির সবকটাই পাওয়া যাবে এখানে। প্লেট প্রতি ৩৯৫ টাকায় পর্ক সসেজ, বেকন, হ্যাম, সালামি এবং সঙ্গে ডবল ডিমের পোচ। চিকেন এবং ডিমের নানা পদও পাওয়া যাবে মেনুতে। ৩৮৫ টাকায় পিপারোনি পিৎজা যাতে থাকবে মোজারেলা চিজ এবং পিপারেনি চিকেন অথবা পর্ক। ২৭৫ টাকায় পর্ক জাম্বো স্যান্ডউইচ, লাসেন আল ফারনো, ২৭৫ টাকায় বেকড পাস্তার সঙ্গে ল্যাম্ব অথবা চিকেনের কিমা-জিভে জল আনা আরও হরেক পদ পাবেন হুইসলিং ক্যাটেলে।

শৈলেশের ক্যাফের আরেকটি আকর্ষণ হল ছোট্ট জায়গার একটি কোণে মিউজিকের ব্যবস্থা। আপনি যদি গিটার বাজিয়ে গান গাইতে বা শোনাতে চান, চা, কফি খেতে খেতে সেই সাধও মিটিয়ে নিতে পারেন। চায়ের চুমুকে গলা ছেড়ে গান, সময় কাটানোর জন্য এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে। অর্ডার করলেই টেবিলে চলে আসবে ‘শ্যাম্পেন অব দার্জিলিং’, নানা গ্লাস আর পেয়ালায় চা পরিবেশনের এমনই কায়দা দেখে আপনাকে মুগ্ধ হতেই হবে। অনেকে মিলে গেলে কেউ কেউ যদি কফি খেতে চান, চিন্তা নেই। ভিয়েতনাম কফির সঙ্গে কনডেন্স মিল্ক গ্লাসে ভরে এনে দেবেন ওয়েটার।

ক্যাফের সঙ্গে ছোট্ট স্টোরের কথা বলছিলাম। শৈলেশ সেখানে রেখেছেন টয়ট্রেনের মিনিয়েচার, আকর্ষণীয় রঙের বাহারে নানা টিপড, রুপোর টিপড, সুগার আর মিল্ক পডের সেট, চায়নিজ গ্রিন টি সেট, চা তৈরির নানারকম ফ্লাস্ক। উপহার এবং নিজের ব্যবহারের এমন কালেকশন বাজার ঘুরে পাওয়া মুশকিল, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বললেন তরুণ উদ্যোক্তা। জানালেন, এখানেই থেমে থাকতে চান না। কনসেপ্ট হিট হলে ব্যবসা ছড়িয়ে দেবেন সারা শহরে।