রাহুলের ক্যাফে প্রাণা এবার হাজরায়

রাহুলের ক্যাফে প্রাণা এবার হাজরায়

Saturday April 22, 2017,

4 min Read

মাত্র ৯ বছরে ৩টি রেস্তোরাঁ খুলে ফেলেছেন তরুণ উদ্যোগপতি রাহুল আরোরা। রাহুল কলকাতার ছেলে। বাবা ব্যবসায়ী। পরিবারের লোকজন ভেবেছিলেন বড় হয়ে ছেলে বাবার ব্যবসাতেই যোগ দেবেন। কিন্তু স্বাধীনচেতা রাহুল ভাবতেন অন্য কিছু। ভাবতেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা। লড়াই করে নিজের মত একটা স্বাধীন ব্যবসা দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন রাহুল। ২০০১ সালে পকেট মানির টাকায় বাবাকে না জানিয়েই অ্যাপ্লাই করে বসলেন আই এইচ এম অওরঙ্গাবাদে। পেয়েও গেলেন হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার সুযোগ। চার বছরের কোর্সের পর কাজের সুযোগ পেলেন আইটিসি হোটেলসে। ২০০৪ থেকে ২০০৭ তিন বছরেই চোখের সামনে ভেসে উঠল কোথায় পৌঁছতে হবে তার সুলুক। 

image


বছর খানেকের প্রস্তুতি নিয়ে সল্টলেকের বাড়ির গ্যারাজেই শুরু হয় তার বাণিজ্য তরী ভাসানোর পালা। নাম দেওয়া হয় বন অ্যাপেটিট। মে মাস ২০০৮ সাল। আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগে প্রথম কলকাতা পেল স্ট্রিট ফুডে পাস্তা। একেবারে ইউরোপীয় ডিশ। মূলত ইটালিয়ান। ৩ টে টেবিল ৬ টা চেয়ার আর একজন হেল্পার নিয়ে শুরু করেছিলেন এই ব্যবসা। বিনিয়োগ ছিল মাত্র ৫০ হাজার টাকা। তখন কফি ব্রিউ করার মেশিন ছিল না বন অ্যাপেটিটের। হাতে বানানো কফিই দেওয়া হত। একেবারে সস্তায় পাঁচ তারার টেস্ট পেতে ভিড় পড়ে যেত। ওর কাজের সুখ্যাতিই ওকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। বছর দুয়েকের মধ্যেই বন অ্যাপেটিটের শাখা খুললেন হাজরায়। ছড়িয়ে পড়ল খ্যাতি। কিন্তু রাহুলের মনে আরও কিছু করার খিদে চনমন করছিল। নতুন কিছু করার ভাবনা সব সময় ওকে উস্কে যেত। ২০১৪ সালে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে খুলেছিলেন ক্যাফে প্রাণা নামে একটা বিস্ট্রো। চা কফি আর স্ন্যাকস। বন অ্যাপেটিটের মেনুর সঙ্গে ক্যাফে প্রাণার মেনুর কোনও সাযুজ্য নেই। একদমই ভিন্ন স্বাদের বিস্ট্রো বানিয়ে ফেললেন রাহুল। ২০১৬ সালে উঁকি দিল ভারতীয় খানার রেস্তরাঁ বানানোর প্ল্যান। ২০১৬ সালের নভেম্বরে খোলা হল পরাঁঠেওয়ালি গলি। হরেক কিসিমের পরটা পাওয়া যায় এখানে। একবার যারা চেখে দেখেছেন তারা বারবার ঘুরে ঘুরে আসেন। শুধু স্বাদের জন্যেই নয় ইন্টেরিয়রের জন্যেও। দোকানে ঝুলছে নানান শাইরি। যেমন লায়লা নে কঁহা মজনু কি কান মে, পরাঁঠা খানা হ্যঁয় ইস দুকান মে। কিংবা ধরুন লেখা ভগবান বাচায়ে তিনো সে, পুলিশ ডক্টর হাসিনো সে। ইন্টেরিয়রের ডিজাইন থেকে নিখুঁত ভারতীয় থিম এই রেস্তরাঁর প্রধান ইউএসপি। আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল এই রেস্তরাঁর পরাঁঠা। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ তাঁদের নিজের মায়ের হাতের স্বাদ পাবেন ওদের বানানো পরটায়। কারণ রান্নায় ওরা শুধু মশলা মেশান না, গার্নিশ করতে ভালোবাসাও ছড়িয়ে দেন ওপর থেকে।

৩টে তিন রকম। বন অ্যাপেটিট, পরাঁঠেওয়ালি গলি আর ক্যাফে প্রানা। তিনটের মধ্যে শহরে এক্কেবারে হাটকে ক্যাফে প্রানা। জিভে জল আনা হরেক পদের সঙ্গে নানারকম কফি, চা এবং ঠাণ্ডা পানীয়- ভাববেন না এখানেই শেষ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর অথবা খোলা বাগানে বসে চা বা কফিতে চুমুক, মুচমুচে খাবার আর তার সঙ্গে যদি প্রিয় বইটি সঙ্গী হয়, তাহলে তো কথাই নেই। রাহুলের ক্যাফে প্রানা আপনার জন্য তৈরি এইসমস্ত ব্যবস্থা নিয়ে।

২০১৪ সালে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির ক্রসিংয়ে কফি প্রানা জমিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু জায়গাটা ছাড়তে হয়। এবার এই পয়লা বৈশাখ থেকে ওরা চলে এসেছেন হাজরার কাছে একটু নিরিবিলিতে। ছোট্ট জায়গা। কিন্তু ওই টুকুনিতে শেওলা রঙা দেওয়াল, ইন্টিরিয়রে মাটির ছোঁয়া রেস্তোরাঁয় ঢুকলেই মনে হবে কোলাহল থেকে একটু নিভৃতে কাটানো যাবে কিছুক্ষণ। ভেতরে অথবা ওপেন এয়ার যেখানে খুশি বসতে পারেন। সঙ্গে নিয়ে নিন গরম অথবা ঠাণ্ডা পানীয়, হতে পারে চিয়া মোজিতো অথবা মধু মেশানো অসম চা বা তুলসি গন্ধরাজ চা আর সঙ্গে মাশরুম চিল্লা অথবা রাজমা ব্রাউন রাইস, বাসিল চিকেন অ্যান্ড রাইস। আর ফ্যাট এবং হেল্থ কনশাস হলে থ্রি বিন অ্যান্ড ফিটা স্যালাড তৈরি আপনার জন্যে। রাহুল অবশ্য দাবি করছেন ওর এই ক্যাফের সব খাবার স্বাস্থ্যকর। আরও আছে চমক। যদি ঘরের ভিতর খাবার, পানীয় নিয়ে বসেন তবে চোখের সামনে হাট হয়ে যাবে খোলা জানলায় পছন্দের বইগুলি। যেকোনও একটা নিয়ে বসে পড়ুন, সময় কোথা থেকে চলে যাবে টেরও পাবেন না। দেওয়ালে সাঁটানো ফটোগ্রাফ দেখে নিন এক ফাঁকে। রাহুল নিজে ছুটিতে বেড়াতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে কালেকশন করে এনেছেন ওই ফটোগ্রাফগুলি। বলে রাখা ভালো ওর সব রেস্তরাঁর ইন্টেরিওর ওর নিজের হাতে বানানো।

যখন বন অ্যাপেটিট খোলেন তখন অনেকেই বলেছিলেন শুধু চিজ আর চকোলেট ঠাসা খাবারে কাটতি হওয়ার নয়। রোল, চাইনিজ খাবার, চপ না হলে টিকে থাকা মুশকিল। কিন্তু সে পথ মাড়াননি রাহুল। তৈরি করেছেন আলাদা আলাদা স্বাদের খাবারের জন্যে আলাদা আলাদা ক্যাফে। এবং সবগুলোই চলছে রমরম করে।

এবার মাথায় আরও একটি ব্ৰ্যান্ড ঘুরপাক খাচ্ছে। বছর দেড়েকের মধ্যে চতুর্থ ব্র্যান্ড নিয়ে আসার ছক কষছেন রাহুল। বলছিলেন এই নয় বছরে তিনটে ব্র্যান্ডের পাশাপাশি এখন ৪০ জনের কর্মসংস্থান করেছেন এই তরুণ উদ্যোগপতি।