নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে ফার্স্ট গার্ল বাংলা

নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে ফার্স্ট গার্ল বাংলা

Saturday January 13, 2018,

4 min Read

২০১৭ সালের শ্লোগান ছিল ride the growth, আর ২০১৮ সালের শ্লোগান Bengal means business ফি বছর কলকাতায় বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিন্দুকেরা মুচকি হাসে। তেলেভাজা শিল্পের টিপ্পনী দেয়। দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, সংশয় অতিক্রম করে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে প্রতিবছর এক ঝাঁক শিল্পপতি আসেন কলকাতায়। আসেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরাও। নিন্দুকের মুখে লেগেই থাকে সমালোচনার বুলি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এই সব শিল্পপতিদের পরিযায়ী পাখি বলে ঠাট্টা করা হয়। নিন্দুকদের মোদ্দা কথা বাংলায় ব্যবসার সম্ভাবনা নেই। এই মতকে নস্যাৎ করে দিল খোদ ডিআইপিপির রিপোর্ট। নরেন্দ্র মোদি সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীন ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি অ্যান্ড প্রোমোশন সম্প্রতি EDB বা বাণিজ্য বান্ধব রাজ্যগুলির যে রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করেছে তাতে ফার্স্ট গার্ল হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এবং থার্ড গার্ল গুজরাট। এই রিপোর্ট কার্ডে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বাংলায় ব্যবসা করাটা সোজা। ২০১৭ সালের তালিকায় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ গোটা দেশের মধ্যে শীর্ষ স্থান অধিকার করায় নিন্দুকদের মুখ চুন।

image


আরও গুরুত্বপূর্ণ এই জন্যে কারণ ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক যে রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করেছিল সেখানে ১৮ টি শহরের মধ্যে বাণিজ্য বান্ধব হওয়ার তালিকায় কলকাতার ব়্যাঙ্কিং ছিল ১৭। বিশ্ব ব্যাঙ্কের তদারকিতে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শুরু করেন রিপোর্ট কার্ড প্রকাশের কাজ। ২০১৪ সালে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল রাজ্য। মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। EDB-র জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বেঁধে দেওয়া শর্ত পূরণ করার তোর জোড় লেগে যায়। প্রতিবছরই শর্তে রদ বদল করতে থাকে কেন্দ্র। এবং এবার ৪০৫টি শর্ত মেনে গোটা দেশে শীর্ষ স্থান পেয়েছে বাংলা। ফলে তথ্য প্রমাণ দিয়ে বলাই যায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ এই আট বছরে পশ্চিমবঙ্গে বাণিজ্যের রাস্তা অতি সুগম আর মনোরম হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কলকাতায় বিকশিত কয়েক হাজার নবোদ্যোগীদের সাফল্য।

বাংলার এগিয়ে যাওয়া কিংবা পিছিয়ে থাকার প্রশ্নে কলকাতার স্টার্টআপ ওয়াও মোমোর কর্ণধার সাগর দরিয়ানি বলছিলেন, কলকাতা নিয়ে তিনি বেশ খুশি। তার মতে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোগপতিদের মনে কলকাতার সম্পর্কে এক অকারণ অনীহা আছে। এই পারসেপশন বা ধারণা আসলে মরীচিকার মত মিথ্যে। পজিটিভ ধারণাই রাজ্যের জন্যে পজিটিভ পরিবেশ নিয়ে আসতে পারে। ব্যবসার সূত্রে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁকে যেতে হয়, তাই অন্যান্য শহরের উদাহরণ দিয়ে দরিয়ানি বলেন, কলকাতা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম দুর্নীতিপরায়ণের শহর। এখানে কাজ করতে গিয়ে কোথাও তাকে সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু মানুষের ধারণার অকারণ শিকার হয়ে পিছিয়ে থাকছে কলকাতা। কনজিউমার মার্কেট এবং রিটেল মার্কেটের বিশেষজ্ঞরাও এক মত। তাদের মতে কলকাতার বাজার সম্পর্কে বিক্রেতা এবং বড় ব্র্যান্ডগুলোর ধারণাতে ফাঁক আছে। অধিকাংশ সংস্থার মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্টরা মনে করেন কলকাতার বাজার কস্ট সেনসিটিভ। দামি সামগ্রী গুণগত মানে ভালো হলেও কলকাতার মানুষ কিনতে আগ্রহী নন। দাম বেশি এই কারণে পিছিয়ে যাওয়ার একটি প্রবণতা দেখা যায়। কথাটা একেবারে উড়িয়ে না দিলেও তাঁরা বলছেন ধারণায় কিছু গলদও আছে। কেননা, কলকাতার বেশ ধনী মানুষেরা এই শহরে গুণগত মানের সামগ্রী না পেয়ে অন্য শহরে বাজার করতে ছোটেন। বেঙ্গালুরু, কিংবা মুম্বাইয়ের শপিং মলে যারা ভিড় করেন তাদের ৬০ শতাংশই কলকাতার বাসিন্দা। কিন্তু এই শহরের মলগুলিতে ওইসব বড় বিদেশি ব্র্যান্ডগুলি যে দোকান খুলেছে সেখানে তাদের সেরা প্রোডাক্ট পাওয়া যায় না। এর কারণ আসলে ওই ধারণা। কিন্তু কলকাতাতেও পোরশে, মার্সিডিজ, লোম্বার্গিনি বিক্রি হয়। এই শহরেই মানুষ কেনেন। এখানেই বাস করেন দেশের তিরিশ শতাংশ ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট। ফলে সম্পদ এবং সুযোগের বৈপরীত্য এই শহরে চোখে পড়ার মত।

দারিদ্র আছে। লড়াই আছে। চাকরি পাওয়ার সুযোগ কম। পাশাপাশি দক্ষ কর্মীর অভাব নেই। আর ব্যবসা করতে চাইলে সেই সুযোগ এই শহরে অঢেল। সম্প্রতি ডিআইপিপির রিপোর্ট কার্ড সে কথাই বলছে। সেরা পশ্চিমবঙ্গ স্কোর ৮৬ দশমিক এক আট শতাংশ। প্রায় একই স্কোর পেয়ে দ্বিতীয় ঝাড়খণ্ড। আর সপ্তমে কর্ণাটক। স্কোর ৭৮.০৫ শতাংশ। ফলে কলকাতা লেটার পেলেও বেঙ্গালুরু লেটার পায়নি।

ডিআইপিপির মতে ওড়িশা ভালো করেছে। ৭১ দশমিক ৫৪ শতাংশ পেয়ে দ্বাদশে উঠে এসেছে ওড়িশা। তামিলনাড়ু এবং মহারাষ্ট্রের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। আর ডাহা ফেল করেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দিল্লি। ব্যবসায়ী বান্ধব হওয়ার শর্ত অনুযায়ী দিল্লির স্কোর মাত্র ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। দিল্লির চেয়ে এগিয়ে আছে ত্রিপুরা। তার পয়েন্ট ২২ দশমিক ১৩ শতাংশ।

বলা হচ্ছে রাজ্যের এগিয়ে যাওয়ার পিছনে যে টোটকা গুলি কাজে লেগেছে।

১. শিল্পের উপযুক্ত জমি পাওয়া

২. নির্মাণ ছাড়পত্র ও পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা

৩. বিনিয়োগের জন্যে একটি নির্দিষ্ট সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম তৈরি করা

৪. সহজে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে লগ্নি সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়