মহৎপুরে ফুটছে কৃত্রিম আলোয় চন্দ্রমল্লিকা

মহৎপুরে ফুটছে কৃত্রিম আলোয় চন্দ্রমল্লিকা

Tuesday January 12, 2016,

2 min Read

শুধু ধান-সবজি চাষের দিন অনেক আগেই চুকে গিয়েছে। লাভের আশায় বিকল্প চাষ নতুন কিছু নয়। সেই তালিকায় বহু আগে ঢুকে পড়েছে ফুলের চাষ। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়াতেই সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয়। ফুলের ফলন বাড়াতে নানা কারিকুরিরও জুড়ি নেই এখানকার চাষিদের। শীতের সময় বিশেষত পৌষমাসে গ্রামে ঢুকলেই এক অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়বে। বিঘার পর বিঘা জমি জুড়ে তার টেনে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতে মনে হয় ঠিক যেন দ্বীপান্বিতার উৎসব। ভুল ভাঙবে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে। আদতে ফুল ফোটা নিয়ন্ত্রণ করতেই নাকি কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা। আর এই অভিনব পদ্ধতিতে চন্দ্রমল্লিকার চাষ করে অনেক বেশি লাভ করছেন ফুলচাষিরা।

image


পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, সারা দেশের নানা রাজ্যে ফুলের একটা বড় অংশের যোগান দেন পূর্ব মেদিনীপুর ও হাওড়ার ফুলচাষিরা। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার ফুল রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে উঠছে। চাষিরা ধান, সবজির চাষ ছেড়ে ফুলচাষেই বেশি লাভ দেখছেন। ফলে সেদিকেই ঝুঁকছেন। বিঘার পর বিঘা জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। সাইজ ও চোখ ধাঁধাঁনো রঙে পাঁশকুড়ার মহৎপুরের চন্দ্রমল্লিকা ফুলের কদর বেশি এই রাজ্য, এমনকী ভিন রাজ্যেও। চাহিদাও বেশ। তবে চাহিদা থাকলে কী হবে, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় মার খাচ্ছে ফুলের চাষও। ফুলচাষি দেবেন্দ্রনাথ জানা বলেন, ‘শীতের সময় বড়দিন, ইংরেজি নববর্ষ, সরস্বতী পুজো ও মাঘ মাস জুড়ে বিয়ের মরশুমে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। এইসব অনুষ্ঠানের সাজসজ্জায় সাদা ও হলুদ রঙের চন্দ্রমল্লিকার কাটতি সবচেয়ে বেশি’।

চাষিদের পর্যবেক্ষণ, মরশুমের খামখেয়ালিপনায় অনেক ক্ষেত্রে সময়ের আগে ফুল ফুটে যায়। ফলে প্রয়োজনের সময় আর ফুল মিলছে না গাছে। পৌষমাসে বিয়ের অনুষ্ঠান থাকে না। ফুল ফুটলে জলের দামে বিকিয়ে দিতে হয়, নাহলে পড়ে থেকে গাছেই নষ্ট হয়। অথচ মাঘ-ফাল্গুনে বিয়ের সিজনে সেভাবে ফুল পাওয়া যায় না। ফুল যাতে পরে ফোটানো যায় এবার সেই উপায় বের করে ফেলেছেন চাষিরা। পাঁশকুড়া ব্লক কৃষি আধিকারিক বিবেকানন্দ মোহান্তি জানান, আলো বেশি পড়লে চন্দ্রমল্লিকা তেমন ফোটে না। তাই দিনে সূর্যের আলোয় নয়, রাতের অন্ধকারে ফোটে এই ফুল। দিনে যেমন সূর্যের আলো থাকে, রাতেও কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করে চন্দ্রমল্লিকার কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়া নিয়ন্ত্রণ করছেন চাষিরা। আর তাতে ফলও হচ্ছে। প্রয়োজনের সময় ফুল ফোটাতে পারছেন, ফুল নষ্ট হচ্ছ না, আবার পর্যাপ্ত যোগানও থাকছে। মহৎপুরের দু একজন ফুল চাষি প্রথমে এই পদ্ধতিতে ফুল চাষ করে লাভের টাকা ঘরে তোলেন। এবার গোটা গ্রাম জুড়ে এভাবেই চলছে চন্দ্রমল্লিকার চাষ। পথ দেখিয়েছে মহৎপুর। এবার শুধু ওই এলাকায় নয়, তার পাশাপাশি নারানদা, নস্করদিঘি এইসব এলাকার কয়েকশো চাষি একই পদ্ধতিতে চাষ করছেন। আর তাতেই হাসি ফুটেছে চাষির ঘরে ঘরে।