বাসন ব্যবসার ব্র্যান্ডমেকার শান্তিলাল জৈন

বাসন ব্যবসার ব্র্যান্ডমেকার শান্তিলাল জৈন

Thursday December 24, 2015,

3 min Read

একজন সফল উদ্যোগপতি হতে গেলে কী লাগে? এই প্রশ্নের কোনও নির্দিষ্ট উত্তর নেই। তবে একটা জিনিস বোধহয় সমস্ত সফল মানুষের ক্ষেত্রেই কমন – হার না মানা মানসিকতা। স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে জেতার ক্ষমতাতে ভর করেই অনেকে সফল হন। তাদেরই একজন শান্তিলাল জৈন। ভারতে স্টেইনলেস স্টিলের বাসনের ব্যবসায় তিনি মহীরূহ। যিনি ৩ দশক ধরে এই ব্যবসার নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী। ডিজিটাল যুগে দাঁড়িয়ে এবার বাসন তৈরির এই শিল্পে তিনি বিপ্লব আনতে চাইছেন।

image


শুরুর দিনগুলি

চেন্নাইয়ের বাসিন্দা শান্তিলাল যখন ব্যবসায় নামেন, তখন তিনি ক্লাস টেনের গণ্ডিও পেরোননি। সালটা ছিল ১৯৮৭। পুঁজি ছিল মাত্র ১০ হাজার টাকা। পুরোটাই নিজের জমানো অর্থ। শুরুতে চারমিনার নামে একটি সংস্থা খুলে স্টেইনলেস স্টিলের গ্যাস লাইটার, জলের ফিল্টার – এইসব তৈরি করতেন। শান্তিলালের কঠোর পরিশ্রম অল্প দিনেই ব্র্যান্ডটিকে দক্ষিণ ভারতে জনপ্রিয় করে তোলে। বর্তমানে ৩০০টিরও বেশি সংস্থা তাঁরই দেখানো পথে ব্যবসা করছে।

আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যবসার প্রসার

চারমিনার ব্র্যান্ড নিয়ে সফল হওয়ার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি শান্তিলাল জৈনকে। তরতরিয়ে উন্নতি করেছে তাঁর ব্যবসা। ১৯৮৯ সালের তাঁর সংস্থার তৈরি বাসন প্রথম রফতানি শুরু হয় শ্রীলঙ্কায়। এক বছর যেতে না যেতেই বরাত আসে কানাডা থেকে। বরাতের পরিমান, তাঁর সংস্থার উৎপাদন ক্ষমতার থেকে ১০গুন বেশি। ব্যাপারটা ছিল, যেন হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো, তবে ঝুঁকিও ছিল। কিন্তু তিনি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন। কানাডায় বাসন রফতানির সুযোগকে কাজে লাগিয়েই তিনি Shine নামক ব্র্যান্ডটি চালু করেন। ২০টিরও বেশি দেশে জনপ্রিয় হয় এই ব্র্যান্ড। বছর পাঁচেকের মধ্যে ভারত থেকে স্টেইনলেস স্টিলের বাসন রফতানিকারীদের সবাইকে ছাপিয়ে যান শান্তিলাল। ১৯৯৭ সালে দুবাইয়ে তাঁর সংস্থার দফতর চালু হয়। ২০০১ সালে Shine পাড়ি দেয় পানামা-তে। এরপর একে একে নাইজেরিয়া সহ আফ্রিকার কিছু দেশ। প্রায় বিশ্বের সব মহাদেশেই ব্যবসা করছিলেন শান্তিলাল। ২০০৪ সালে ১০০০ কর্মচারী নিয়ে চেন্নাইয়ে স্টিলের বাসন তৈরির বিশাল কারখানা গড়েন তিনি। ব্যবসায় প্রসার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত মালিকানা থেকে পার্টনারশিপ ও পরে পাবলিক লিমিটেডে রূপান্তরিত হয় তাঁর সংস্থা। রফতানিও বাড়তে বাড়তে ৮০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শান্তিলাল যেন যাতেই হাত দিচ্ছিলেন তাই সোনা হয়ে যাচ্ছিল।

ব্যবসায় মন্দা

কিন্তু ওই যে কথায় বলে “nothing is permament”। দুর্বার গতিতে ছুটতে ছুটতে তাঁর ব্যবসা প্রথম হোঁচট খায় ২০০৬ সালে। শ্রমিক ধর্মঘট, পারিবারিক কলহ, বাজারে মন্দা – সব মিলিয়ে প্রভাব ফেলে তাঁর ব্যবসায়। সরকারের কিছু নীতিও শান্তিলালের ব্যবসার অগ্রগতি থামিয়ে দেয়।

সফল কামব্যাক

তবে হার না মানা মানসিকতায় ভর করেই ঘুরে দাঁড়ান তিনি। সংস্থার কিছু অফিস বন্ধ করে, কিছু অফিসে মিশিয়ে দিয়ে মন্দা ঠেকান শান্তিলাল। Shine-এর শাইন কমলেও ব্যবসা টিকে যায়।

তাঁর পরিচিতরা বলেন, নাম-যশ-খ্যাতি পেলেও শান্তিলাল জৈন বরাবরই বিনয়ী, মাটির মানুষ। বাবাকে নিয়ে একটি মজার ঘটনার কথা জানিয়েছেন শান্তিলাল জৈনের ছেলে প্রেমশ্রী। ‘স্টিলের বাসন রফতানির ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার বাবাকে পুরস্কৃত করার কথা বিবেচনা করে। কিন্তু বাড়িতে শিল্পমন্ত্রকের পাঠানো চিঠি দেখে বাবার মনে হয়েছিল কেউ বোধ তাঁর সঙ্গে ইয়া‌র্কি করছে’। সেই পুরস্কারের মাহাত্ম এমনই যে এখন তা পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন সকলে। অথচ সরল স্বভাবের শান্তিলাল প্রথমে পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি বিশ্বাসই করতে পারেননি।

স্টেইনলেস স্টিলের বাসনপত্রের ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের কাছে শান্তিলাল জৈন এক জাদুকর। ‘বাবা কাজ ছাড়া থাকার কথা ভাবতেই পারেন না’, বলেন প্রেমশ্রী। ৫০ পেরোনো শান্তিলাল এখন নিজের সংস্থার উন্নতির পাশাপাশি বাসন তৈরির অসংগঠিত ক্ষেত্রকে শৃঙ্খলায় বাঁধতে চান। এই লড়াইয়ে নিজের ছেলেকে পাশে পেয়েছেন তিনি। কমপক্ষে দেশের ৩০ কোটি হেঁশেলে তিনি নিজেদের ব্র্যান্ডকে পৌঁছে দিতে চান।

ডিজিট্যাল যুগের 'বারতনওয়ালে'

উদ্ভাবনী ক্ষমতা সব সময় শান্তিলাল জৈনকে বাকিদের এক কদম এগিয়ে রেখেছে। সেই উদ্ভাবনী ক্ষমতারই প্রতিফলন ঘটিয়ে তিনি তৈরি করেছেন Bartanwale। যেখানে রয়েছে স্টেইনলেস স্টিলের বাসনের অনলাইন পসরা। 

bartanwale.com

bartanwale.com


দেশের নতুন প্রজন্মকে নিজের ব্রান্ডের ক্রেতা করতে তাঁর এই উদ্যোগ। ‘বাকিদের টেক্কা দিতে Bartanwale-র পসরায় রয়েছে অনন্য ডিজাইনের বাসনপত্র’, জানিয়েছেন প্রেমশ্রী। তবে শান্তিলাল জৈনের অন্যান্য ব্রান্ড যেমন প্রতিষ্ঠিত, সেখানে Bartanwale এখনও শিক্ষানবীশ পর্যায়ে। অনলাইন ব্যবসার মারপ্যাচ শিখছেন প্রেমশ্রী। আর স্বপ্ন দেখছেন Bartanwale-কেও তাঁর বাবার তৈরি ব্র্যান্ডগুলির মতো জনপ্রিয় করে তুলতে।

লেখা - জুবিন মেহতা , অনুবাদ - ঋত্বিক দাস