শুধু শিল্প নয়, অভিনয় চিকিৎসাও প্রমাণ দিলেন চৈতী

শুধু শিল্প নয়, অভিনয় চিকিৎসাও প্রমাণ দিলেন চৈতী

Saturday April 22, 2017,

3 min Read

কখনও মন খুলে নিজের সঙ্গে কথা বলেছেন? মন খারাপ হলে কী করেন? কান্না পেলে চিৎকার করে কেঁদেছেন কখনও? পারেননি তো? কখনও ভেবে দেখেছেন কেন পারলেন না, নিজের ভাবটুকুকে সবার সামনে এনে আছড়ে ফেলতে? কেন পারলেন না আর কীভাবেই বা পারবেন তার উত্তর দিতে পারে এক ধরনের থেরাপি। অভিনেত্রী চৈতী ঘোষাল যাকে বলছেন থিয়েটার থেরাপি। মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশে এই থেরাপি নাকি অব্যর্থ ওষুধ। মিলেনিয়াম মামস নামে একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে থিয়েটার থেরাপিতে নিজেকে মেলে ধরার পাঠ দিচ্ছেন চৈতী।

image


কেউ এখন ঠাম্মা বনে গিয়েছেন। কেউ অফিসের বিগ বস। কেউ সবে মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছেন। কারও সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত, যে যার মতো ব্যস্ত...আর মায়ের অখণ্ড অবসর। এইসব চরিত্রের দেখা মিলল চৈতী ঘোষালের থিয়েটার থেরাপির ক্লাসে। কী এই থিয়েটার থেরাপি? মিউজিক থেরাপি, ডান্স থেরাপির কথা তো শুনেছেন। তেমনই থিয়েটার থেরাপি। থিয়েটারের বিন্দু বিসর্গও জানেন না কেউ। দাঁড়ানোর কায়দা, মানানসই গলা- কোথায় সেসব? এটাইতো থিয়েটার থেরাপির ইউএসপি।

কেউ কিছু জানেন না, তাঁদের মধ্যে থেকে এক অজানা পৃথিবীকে বের করে আনা। সেই কঠিন কাজটাই করে চলেছেন চৈতী ঘোষাল। থিয়েটার থেরাপি ওর কাছে অল্টারনেটিভ লিভিং। নিজের জীবনটা আরও সুন্দর করে বাঁচাই সেখানে মূল লক্ষ্য। অভিনয় শেখানোটা লক্ষ্য নয়। থিয়েটার থেরাপির মধ্যে দিয়ে কেউ ভালো অভিনেতা হয়ে উঠতেই পারেন। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য সেটা নয়। বরং মনের দরজাটাকে হাট করে খুলে দেওয়ার কাজটাই করেন চৈতী। আরও সুন্দর করে বাঁচার সুলুক দেন।

মিলেনিয়াম মামস মূলত মহিলাদের জন্য আর্থিক শিক্ষার পাঠ দিয়ে আসছে গত ২৫ বছর ধরে। মুক্ত চিন্তার বিকাশ আর শিক্ষার অগ্রগতিই মূল লক্ষ্য। বিষ্ণু ধানুকা এবং সঞ্জয় ভোকানিয়া এই উদ্যোগের প্রাণ পুরুষ। ধানুকাই প্রথম ব্যক্তিত্ব বিকাশে থিয়েটারের গুরুত্ব বুঝতে পারেন। মিলেনিয়াম মামস যোগাযোগ করে চৈতী ঘোষালের সঙ্গে। এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি অভিনেত্রী। নানান ক্ষেত্রের নানান বয়সের একদল মহিলাকে নিয়ে শুরু করে দেন থিয়েটার থেরাপির ক্লাস। আবেগ, অনুভূতিকে শরীর থেকে নিংড়ে বের করে আনে থিয়েটার থেরাপি। যারা ওদের এই থেরাপির ক্লাস করেছেন সবার জীবন পাল্টে গিয়েছে। প্রাণ খুলে হাসছেন, কাঁদছেন। মন-মেজাজ ফুরফুরে। যে ভাব প্রকাশ্যে আসত না কিছুতেই, অনায়াসে সেটাই করে ফেলছেন কেউ কেউ। সবাই যেন অন্য মানুষ, উত্তেজনায় আবেগ আটকাতে পারছিলেন না মিলেনিয়াম মামসের আধিকারিক রচনা প্রসাদ।

একটা সময় সব চেপে রাখাটাই ছিল সুতপার ব্যক্তিত্ব। নিজের ভেতরের ঝড়ের আঁচ পেতে দিতেন না। সুতপা থিয়েটার থেরাপির ক্লাস করেছেন। তাই বলছিলেন, একটা সময় ছিল কাঁদলে মনে হত, ও হেরে গেল। আর কান্না চেপে মনে হত নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন। থিয়েটার থেরাপিতে আসার পর থেকে নিজের ভেতরকার পরিবর্তন বুঝতে পারেন। রাগ, দুঃখ, অভিমান, আনন্দ এখন আর লুকোতে ইচ্ছে করে না।

ফেডেরিকো লরকার দ্য হাউস অব বেরনারডা আলবা থেকে অনুপ্রাণিত ভার্জিন মেরি নাটক মঞ্চস্থ করতে চলেছেন থিয়েটার থেরাপির শিক্ষানবিশরা। নাটক মঞ্চস্থ করা যদি একটা মাইলস্টোন হয়, তাহলে চূড়ান্ত সাফল্য প্রাণ খুলে বেঁচে থাকায়। আর সেটাই তো চেয়েছিলেন চৈতী ঘোষাল এবং তাঁর দলবল। আলাদা করে বলতেই হয় মিলেনিয়াম মামসের কথাও।