সেচের সমাধান ‘ন্যানো গণেশ’

সেচের সমাধান ‘ন্যানো গণেশ’

Tuesday September 15, 2015,

3 min Read

সুইচ অন-অফ করে মোবাইল অপারেট করা যায়, কিন্তু জলের পাম্প চালু-বন্ধ করাও মোবাইলের সুইচে! অবাক হলেন তো? ঠিক এটাই সম্ভব করেছে ন্যানো গণেশ।

image


২০১২ সালে ২০ শতাংশ অনাবৃষ্টির কারণে সারা দেশে বিশেষ করে কৃষকদের জন্য জল পরিষেবা ব্যবস্থা (water management system )চালু করতে হয়েছিল। কৃষকদের উন্নত চাষ সম্পর্কে শিক্ষা এবং নানা তথ্য দিতে মোবাইন ফোন ব্যবহার করা হত। কিন্তু গত ২বছর ধরে চাষের জমিতে জল দিতেও মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হচ্ছে। কীভাবে? ন্যানো গণেশ হল একধরণের মোবাইল, Ossian নামে একটি সংস্থা এর ইনস্টলেশনের দায়িত্বে। ওই মোবাইলের মাধ্যমে চাষিরা রিমোট কন্ট্রোলে জমির সেচের পাম্প চালু-বন্ধ করতে পারবেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য চাষিদের প্রতিদিন প্রায় ৭ কিলোমিটার উজিয়ে গিয়ে পাম্প চালু এবং বন্ধ করতে হবে না।

image


শুধু ভারতে পাঁচটি রাজ্য-মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব, রাজস্থানের পনেরো হাজারের বেশি ফসলি জমিতে ন্যানো গণেশ ইনস্টল করা হয়েছে। তাছাড়া মিশর, তানজানিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং ভুটানেও এই প্রযুক্তি রয়েছে। একটা ন্যানো গণেশ ৮জনের ওপর সামাজিক এবং আর্থিকভাবে প্রভাব ফেলে। সাইকেলটা অনেকটা এই রকম-কৃষক, তার পরিবার, চাষির সহকারিরা এবং একজন এগরো ইলেকট্রনিক্স কমান্ডো (স্থানীয় টেকনিশিয়ান) যিনি ন্যানো গণেশের ইনস্টলেশন এবং সেই সংক্রান্ত অন্যান্য সাহায্য করবেন। অবশ্যই কী ধরনের সহযোগিতা দরকার সেটা বলবেন চাষিরাই। ‘শুরুর দিকে কিছু সারাতে বা সার্ভিসিং করতে হলে আমরা চাষিদের সরাসরি পুনের কারখানায় পাঠিয়ে দিতে বলতাম যতদিন পর্যন্ত তাদের এলাকায় ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক না বসছে। কিন্তু বহু চাষির শহরের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তাদের ন্যানো গণেশ সামলানোর প্রথামিক পাঠ দিয়ে দিই। কৃষকের লাভ হল এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পথ পেরোনর শ্রম এবং জ্বালানি বাঁচানো সম্ভব হয়’, বলেন সন্তোষ ওসটওয়াল, Ossian এর প্রতিষ্ঠাতা।

মডেলের ওপর নির্ভর করে ৫৬০ থেকে ২৮০০ টাকা পর্যন্ত ন্যানো গণেশের দাম। দুভাবে ক্রেতাদের কাছে ন্যানো গণেশ পৌঁছায়। কৃষকরা সংস্থা থেকে সরাসরি যোগাযোগ রেখে পরিষেবা নিতে পারে অথবা তিনশোর ওপরে ডিলার রয়েছেন যারা কৃষকদের কাছে ন্যানো গণেশ পৌঁছে দেয়। বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের নানা সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপণে প্রচারের মাধ্যমে ন্যনো গণেশের বাণিজ্যিকীরণ হয়।

এই মুহূর্তে ন্যানো গণেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা পুঁজির অভাব। ‘গত দুবছরে কোনও ভিসি ফান্ডিং পাইনি। অনেকগুলি ভিসির সঙ্গে কথাও বলেছি, কিন্তু সমস্যা হল প্রতি মাসে কত বিক্রি হল জানতে চাইছিল তারা। এই ফিল্ডে এটা একটা বড় সমস্যা। কারণ, চাষিদের প্রডাক্টের ব্যাপারে জানানো, পরীক্ষা করতে দেওয়া, তাদের মধ্যে আমাদের প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিশ্বাস জন্মানো-বিরাট সময় সাপেক্ষ ব্যাপার’,বলেন সন্তোষ। পুঁজির অভাব ছাড়াও সাম্প্রতিক কালের অনাবৃষ্টিও ব্যবসায় প্রভাব ফেলেছে। কারণ, চাষিরা ইতিমধ্যে খরায় বিপর্যস্ত। শুধুমাত্র অফ সিজনে এবং হর্টিকালচার বা উদ্যান পালনে ন্যানো গণেশের ব্যবহার সীমাবদ্ধ থাকায় বাজার আরও সংকীর্ণ হয়ে আসে বৃষ্টির মাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে। ‘জুলাইয়ের শেষদিক পর্যন্ত সব রাজ্যে সেচ চালু থাকে। এমনকী মে তেও জলের অভাব শুরু হয়ে যায়। জুন-জুলাইয়ে আর জলই পাওয়া যায় না। পাম্প করে তোলার মতো জল থাকে না ভূগর্ভে। পাম্প সংক্রান্ত ব্যবসায় সরাসরি প্রভাব ফেলে জলের এই অবস্থা। যখন কৃষকের এই দুরবস্থা তখন তাদের বলতে পারি না বাড়তি বিনিয়োগ করে আমাদের পরিষেবা নিতে। যদিও প্রযুক্তির মাধ্যমে জলের ব্যবস্থা করা গেলে তাতে ভালো ফলনের আশা থাকে’, ব্যাখ্যা সন্তোষ ওসটওয়ালের। এর ফলে বর্ষার মরশুম আসার আগে পর্ষন্ত বারে বারে মার খেতে হয় ব্যবসায়। তাতে অবশ্য লক্ষ্য থেকে সরার পাত্র নয় ন্যানো গণেশ। ব্যবসা আরও বাড়াতে দুটি বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে কথা চলছে।