যোগচর্চাকে হাতিয়ার করেই রিংকু এখন যোগগুরু

যোগচর্চাকে হাতিয়ার করেই রিংকু এখন যোগগুরু

Thursday September 03, 2015,

3 min Read

আধুনিক জীবনের ইঁদুর দৌড়ে বিধ্বস্ত শহরবাসীর শরীর, মনকে সুন্দর করে তোলাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যপূরণ করতেই মুম্বই শহরের এক টুকরো সবুজ ঘেরা শান্ত পরিবেশে রিংকু সুরি গড়ে তোলেন তাঁর যোগচর্চা কেন্দ্র ‘যোগা ১০১’। এখানকার বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ আর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তুলে আনা বাছাই প্রশিক্ষকদের যত্নের প্রশিক্ষণ রিংকুকে সাফল্যের কাছে নিয়‌ে যেতে দেরি করেনি। বাছাই প্রশিক্ষকদের যোগা সম্বন্ধে অগাধ জ্ঞান ও বিভিন্ন ধরণের যোগা জানার সুবাদে তাঁর কেন্দ্রে প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগা শিখতে মানুষের ভিড় জমে। রিংকুর মতে, মানুষ প্রাথমিকভাবে নানা কারণকে সামনে রেখে যোগা শিখতে আসেন। প্রথমে তাদের কাছে এটা নিছকই একটা ব্যায়াম থাকে। কিন্তু ক্রমে তারা মানসিক দিক থেকে সুন্দর থাকার পথ খুঁজে পেতে শুরু করেন। এগিয়ে যান একটা আধ্যাত্মিক অপরূপ জীবনের দিকে।

২০১২ সালে রিংকু সুরি পাড়ি দেন কম্বোডিয়ায়। বেড়ানোর মাঝেও যোগা থেকে দূরে থাকতে প‌ারেননি তিনি। কম্বোডিয়ায় একটি মনোরম পরিবেশে একটি দারুণ যোগা কাফের খোঁজ পান রিংকু। এমন সবুজের মাঝে অপূর্ব একটি যোগা স্টুডিও তাঁকে ‘যোগা ১০১’ গড়ার উত্সাহ যোগায়।

image


কিন্তু ভাল থাকার জন্য যোগাই কেন? একজন অনুশীলনকারী তথা প্রশিক্ষক হিসাবে রিংকুর দাবি যোগা শুধুই শারীরিক কসরৎ নয়, মানসিক কসরতও। কুঁড়েমিকে জয় করার পাশাপাশি যোগা কর্মবিমুখ জীবনকে স্ফূর্তিতে ভরিয়ে তোলে। বিশ্বে এটাই এমন একটি ব্যায়াম যা সারা দেহের যত্ন নেয়। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সক্রিয় রাখে। সুন্দর রাখে মন ও আত্মাকে। যোগার কাছে বয়সও হার মানে। শুধু দেহের বাইরে থেকেই নয়, ভিতর থেকেও কমে যায় বয়স। এমনকি কেউ যদি ওজন কমাতে চান, উত্তেজনা কমাতে চান বা কোনও নেশার হাত থেকে মুক্তি পেতে চান তাঁদের জন্যও যোগার কোনও বিকল্প নেই বলে দাবি করেন রিংকু। নিয়মিত যোগা করলে জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও অনেক বেশি সদর্থক হয় বলে জানিছেন এই মহিলা যোগগুরু।

মুম্বইয়ের একটি রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে রিংকু প্রথম থেকেই শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু মায়ের ছিল প্রবল আপত্তি। ফলে স্কুল জীবন শেষ করে আর্টসের বদলে কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করতে বাধ্য হন রিংকু। কলেজ পাশ করে মার্কেটিংকে পেশা হিসাবে বেছে নেন। যোগ দেন সিএনবিসিতে। সেখানে ১২ বছর চাকরি করেন রিংকু। কাজ ছিল বিভিন্ন জায়গায় মার্কেটিংয়ের জন্য ঘোরা আর ছবি তোলা। যে দুটো কাজই ছিল তাঁর ভীষণ পছন্দের। এই সময়েই নিয়মিত যোগচর্চা শুরু করেন তিনি। দ্রুত যোগার প্রতি টান জন্মায় তাঁর। কম্বোডিয়ার যোগা সেন্টার তাঁকে নিজের একটি সেন্টার গড়ে তোলার উৎসাহ যোগায়।

image


প্রথমে মুম্বইয়েরই একটি যোগা স্টুডিওর ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে চেয়েছিলেন রিংকু সুরি। কিন্তু সংস্থাটি কোনও উৎসাহ না দেখানোয় নিজেরই একটি সেন্টার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাঁদের বাসস্থান পারিবারিক বাংলোতেই ২০১৩-র জুলাই থেকে শুরু হয় ‘যোগা ১০১’-র পথ চলা। নিজের এই স্টুডিওকে নিজের হাতে সাজান রিংকু। স্টুডিওর সামনে রয়েছে কমন এরিয়া। যেখানে রয়েছে লাইব্রেরি, বসার জায়গা। অন্য অংশে যোগচর্চার বিভিন্ন ঘর। তবে স্টুডিওর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মানুষের হাতে সময়ের অপ্রতুলতা। অনেকেই চান নিজের সুযোগ মত সময়ে বাড়িতেই যোগা করতে। কিন্তু রিংকু তাঁদের কিছুটা সময় বার করে স্টুডিওয় আসারই পরামর্শ দেন।যাতে প্রশিক্ষণে কোনও ভুলভ্রান্তি না থেকে যায়।

image


যোগার নানা ধরণ ও যোগা সম্বন্ধে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি এখন অনেক মানুষকেই যোগাচর্চায় উৎসাহী করে তুলছে বলে মনে করেন রিংকু। এমনকি এই দলে বহু বয়স্ক মানুষজন আছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। যোগার দর্শন পশ্চিমের দেশগুলিতেও যোগাকে ক্রমাগত জয়প্রিয় করে তুলেছে। সুন্দর সুরে মন ভরিয়ে যোগা ‘ভিনায়াসা’ দিয়েই যোগাচর্চা শুরুর পারমর্শ দিয়েছেন রিংকু। এখন প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বন্ধুদের ফোন, ইমেল পান তিনি। শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় সাহায্য চান তাঁরা। অনেকে নিজের স্টুডিও তৈরির পরামর্শ চেয়েও তাঁর দ্বারস্থ হন। তাঁর পরামর্শ ও উৎসাহে বন্ধুদের যোগগুরু হিসাবে এই পথচলা শুরুর ইচ্ছাকে এখন বেশ তারিয়েই উপভোগ করেন দেশের প্রথমসারির এই যোগগুরু।