কলকাতাকে ফলের রসের স্বাদ দিতে-দ্য ইয়েলো স্ট্র

কলকাতাকে ফলের রসের স্বাদ দিতে-দ্য ইয়েলো স্ট্র

Monday December 21, 2015,

3 min Read

ফলের রসের উপকারিতা আমরা সবাই জানি, কিন্তু আজকের ব্যস্ত সময়ে ফল থেকে রস বের করে খাওয়ার ঝক্কি নিতে চায় না কেউই। এদিকে রাস্তার ধারে যে সব ফলের রস পাওয়া যায়, তা তৈরি হয় বেশ অস্বাস্থ্যকর অপরিচ্ছন্ন ভাবেই, খেয়ে হতে পারে উল্টো বিপত্তি। তাই ফলের রস খাওয়ার জন্য ভরসা প্যাকেজড জ্যুসই। কিন্তু তাতে থাকে কৃত্রিম রঙ আর প্রিজারভেটিভ, ফলে তরতাজা ফলের রসের গুণাগুণ অনেকাংশেই পাওয়া যায় না। অতঃ কিম!

image


এই সব সমস্যার সমাধান করে, ক্রেতাকে পরিচ্ছন্ন উপায়, টাটকা ফলের রসের স্বাদ দিতেই কলকাতার নতুন স্টার্টআপ দ্য ইয়েলো স্ট্র। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা পীযুস কাঙ্কারিয়া ও বিক্রম খিন্বাসারা।

“আমরা দুজনই খাদ্য রসিক ও স্বাস্থ্যসচেতন। সুস্বাস্থ্যের জন্য ফলের রসের জুড়ি নেই কিন্তু আমাদের শহরে ভাল উন্নতমানের ফলের রস পাওয়া বেশ সমস্যাজনক, আর সেই কারণেই অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও খেতে পারেন না। সেখান থেকেই ভাবনাটা মাথায় আসে”, জানালেন দ্য ইয়েলো স্ট্রয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পীযুস।

দ্য ইয়েলো স্ট্র তাদের প্রথম দোকানটি খোলে ২০১৪ এর মে মাসে কলকাতা হাইকোর্টের কাছে। 

“এর আগে ১০ মাস আমরা গবেষণা চালাই। শুধু মাত্র বাজারের চাহিদা জানাই নয়, ফলের রস তৈরির সবথেকে উন্নত প্রযুক্তির ব্যাপারেও খোঁজ চালাই আমরা। রস তৈরির সব থেকে ভাল পদ্ধতি বেছে নেওয়ার পাশাপাশি নানা রকমের ফলের রস মিশিয়ে বিভিন্ন জ্যুসের রেসিপিও বানাই, আর এটা করার সময় শুধু স্বাস্থ্য নয় স্বাদের কথাও মাথায় রাখা হয়েছিল”, পীযুস বললেন।

প্রথম দোকানটি খোলার পর ৬ মাস বাজারের হাল হকিকৎ বুঝে নেন পীযুসরা। তারপর দ্বিতীয় দোকান, এরপর পরের তিনমাসে তিনটি দোকান। বর্তমানে সেক্টর ফাইভ, বিবাদিবাগ, ডালহাউসি সহ শহরের মোট পাঁচটি জায়গায় রয়েছে দ্য ইয়েলো স্ট্র। কর্মী সংখ্যা ২০।

“শুরুতে দিনে ৪০ গ্লাস জ্যুস বিক্রি করতাম, এখন সেই সংখ্যাটা ৫০০। শুরুর দিকের প্রতিটা দিনের সকালটা কাটত বাজারে, বিভিন্ন ফল, তাদের গুণমান, দাম ইত্যাদি বুঝতে, এরপর দোকান খোলা থাকার সময়, ক্রেতাদের পরিষেবা দেওয়া ও তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে। এভাবেই তাঁদের চাহিদা, পছন্দগুলি বুঝে নিতাম আমরা। তার ওপর ভিত্তি করে নতুন নতুন রেসিপি তৈরি করতাম। ফলে দ্বিতীয় দোকানটি খোলার সময় আমরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম”, বললেন পীযুস।

image


গত এক দশকে বহু অসংগঠিত ক্ষেত্রেই সংগঠিতভাবে ব্যবসার প্রচলন হচ্ছে। ফলের রসও সেরকমই একটি ক্ষেত্র ও এই বিষয় প্রথমদিকে থাকায় অনেকটাই সুবিধা পেয়েছে দ্য ইয়েলো স্ট্র।

“আমরা যখন বহুজাতিক সংস্থার মোটা বেতনের চাকরি ছেড়ে এই ব্যবসার কথা ভাবি অনেকেই বলেছিলেন শুধুমাত্র ফলের রস নিয়ে ব্যবসা সম্ভব নয়। বিশেষত বাংলায়, যেখানে ফলের রস খাওয়ার সংস্কৃতি চালু নয়, আমরা চ্যালেঞ্জটা নিয়ে ছিলাম, আর আজ আমরা সফল”, বললেন পীযুস।

image


তবে অন্যান্য শহরের তুলনায় এখনও এই শহরে ফলের রসের জনপ্রিয়তা কম, তা স্বীকার করলেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতারা, জানালেন সেই সংস্কৃতি গড়ে তোলাই তাদের মূল লক্ষ্য। বললেন, “নতুন প্রজন্ম অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন, তাই কলকাতায় ফলের রস পানের সংস্কৃতি গড়ে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী তাঁরা”।

আগামী এক বছরে আরও ১০ টি নতুন দোকান খোলার পরিকল্পনা রয়েছে দ্য ইয়েলো স্ট্রয়ের। শহরের সব বড় মল ও রাজপথে নিজেদের দোকান খুলতে চায় তারা। এতে ৫০ জন কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারবে তারা। এরপর ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের শেষে অন্যান্য শহরেও ব্যবসা করার ইচ্ছে রয়েছে তাদের এবং দোকান সংখ্যা হবে ৪০।

image


কোনোরকম জল না মিশিয়েই জ্যুস বিক্রি করে দ্য ইয়েলো স্ট্র, তাদের পদ্ধতিতে ফলের ৯০ শতাংশ পুষ্টিগুণ ও ভিটামিনই জ্যুসে বজায় থাকে বলে দাবি কোম্পানির। “আমরা এমন জ্যুস তৈরি করি যা সুস্বাদু, কিন্তু পুষ্টি গুণে ভরপুর”, বললেন পীযুস।

জোম্যাটোর স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের নিরীখে প্রথম নির্বাচিত হয়েছে দ্য ইয়েলো স্ট্র, এছাড়া আইআইএম-ক্যালকাটার ইনোভেশন পার্কে প্রথম ৫০ এ স্থান পেয়েছে তারা।

৪৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে ব্যবসা শুরু করেছিলেন পীযুসরা, যার মধ্যে ২০ লক্ষ টাকা এসেছিল পরিবার পরিজনদের কাছ থেকে। আগামী দিনে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ সংগ্রহ করার লক্ষ্য রয়েছে তাঁদের। দোকানের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় রান্নাঘর ও ক্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হবে সেই টাকায়। এছাড়াও দু’জন উচ্চস্তরের কর্মী নিয়োগ করা হবে ও প্রচারে জোর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পীযুস।