অসাধ্য সাধন করেছেন আত্রেয়ী নিহারচন্দ্রা

অসাধ্য সাধন করেছেন আত্রেয়ী নিহারচন্দ্রা

Monday August 24, 2015,

3 min Read

জীবনে যেকোনও প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে ইচ্ছাশক্তির ভূমিকা যে কতটা তার জ্বলন্ত উদাহরণ আত্রেয়ী নিহারচন্দ্রা। পরপর দুবার দুর্ঘটনার শিকার আত্রেয়ী অবস পা নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কাহিনি নেহাতই রূপকথার সামিল। ইচ্ছাশক্তির জোরে শুধু সুস্থই নয়, আত্রেয়ী এখন একজন সফল ব্যবসায়ী। রিভাইস ডায়েটের প্রতিষ্ঠাতা এবং একটি রিহাব সেন্টারের মালিক। কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে ওজন কমানো চেষ্টা ছাড়াও যে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন সম্ভব, সেই পাঠই এখন মানুষকে দিয়ে থাকেন বহু কঠিন লড়াই অতিক্রম করে আসা আত্রেয়ী।

আত্রেয়ী নিহারচন্দ্রা

আত্রেয়ী নিহারচন্দ্রা


তখন ২৩ বছর বয়স। যুবতী আত্রেয়ীর জীবনে আচমকাই নেমে এল অন্ধকার। একটা পথ দুর্ঘটনায় পায়ের একটা লিগামেন্ট গেল ছিঁড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী হয়ে দিন কাটতে লাগল আত্রেয়ীর। সে দিনগুলোয় ওঠা বসার জন্যও অন্য কারও সাহায্য নিতে হত তাকে। এক আধদিন নয়, টানা ১৪ মাস শয্যাশায়ী থাকার পর হাঁটার ক্ষমতা ফিরে পেল আত্রেয়ী। এই সময়ে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য বাড়ির কাছের একটি নেচারোপ্যাথি সেন্টারে যোগ দেয় সে। সেখানেই নেচারোপ্যাথি বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় হয় আত্রেয়ীর।

সুস্থ হয়ে ওঠার পর আত্রেয়ী পাড়ি দেয় বেঙ্গালুরুতে। বেঙ্গালুরু আইআইএমের এনএসআর সেলে পড়া শুরু করে সে। কোর্স সম্পূর্ণ করার পর আত্রেয়ী উঠে পড়ে লাগে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র একটা চাকরি যোগাড় করতে। কিন্তু সে সময়ে বাবার বন্ধুদের আইটি ফার্মেও চাকরি হয়নি তার। ফলে একসময়ে চাকরির আসা ছেড়ে আত্রেয়ী ফিরে যায় বেঙ্গালুরু আইআইএমে। শুরু করে গবেষণা। এই সময়েই তার সঙ্গে পরিচয় হয় এক যুবকের। যাকে পরবর্তীকালে স্বামী হিসাবে পায় আত্রেয়ী।

বিয়ের পর বেঙ্গালুরুতেই স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে তারা। ভারতের বিভিন্ন মশলাদার খাবারকে স্বাস্থ্যকর করে তোলার উপায় নিয়ে একটি ফুড ব্লগও শুরু করে আত্রেয়ী। যা খুব অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে যায়। সেইসঙ্গে বেঙ্গালুরু আইআইএমের চাকরিটা ভালই চলছিল। আপাত দৃষ্টিতে সুন্দর কেটে যাচ্ছিল আত্রেয়ীর দিনগুলোগ। কিন্তু বছর পঁচিশের যুবতীটির জানা ছিল না কী কঠিন সময় তার জন্য অপেক্ষা করে আছে।

image


একদিন রাস্তায় ফের দুর্ঘটনার কবলে পড়ল আত্রেয়ী। গুরুতর আঘাত লাগল ঠিক ওই পায়েই যে পায়ে এর আগের দুর্ঘটনায় সে চোট পেয়েছিল। দুর্ঘটনার কিছুদিন পর গোটা পা অবস হয়ে গেল আত্রেয়ীর। তবে গতবারের অভিজ্ঞতার কারণে আত্রেয়ী এবার অনেকটাই তৈরি। চাকরিতে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে সে ফিরে গেল তার গুজরাটের বাড়িতে। হাজির হল সেই চিকিৎসকের কাছে যিনি আগের বার তার চিকিৎসা করেছিলেন। গত দুর্ঘটনায় যে নেচারোথেরাপির গুণে অনেকটা সুস্থ হয়েছিল আত্রেয়ী, সেই থেরাপিও ফের শুরুর সিদ্ধান্ত নিল সে। গুজরাটের রিহ্যাব সেন্টার তাকে অস্ত্রোপচার না করে বরং ওজন কমিয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার পরামর্শ দিল।

লিগামেন্ট ছেঁড়া অবস্থায় ওজন কমানোর সব পদক্ষেপ করা সম্ভব না হলেও আত্রেয়ী শুরু করল কিছু হাল্কা ব্যায়াম দিয়ে। আর জোর দিল সঠিক খাওয়া দাওয়ায়। কিন্তু চাকরিতে বেশিদিন ছুটি হয়না। ফলে কিছুটা সুস্থ হয়ে বেঙ্গালুরু ফিরল আত্রেয়ী। বেঙ্গালুরুতে রিহ্যাব সেন্টারের খরচ ভয়ংকর। আত্রেয়ীর বন্ধুরা তাকে নিজের একটা রিহ্যাব সেন্টার খোলার পরামর্শ দিল।নেচারোপ্যাথিতে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা আর রিভাইস ডায়েট সম্বন্ধে বিষদ জ্ঞান তাঁকে দ্রুত সাফল্যের সোনালী পথের সন্ধান দিল।

image


আত্রেয়ীর মতে, সুস্থ থাকার জন্য ওজন কমানো কাজের কথা নয়। বরং সঠিক খাবার, কী খাচ্ছি সে সম্বন্ধে সম্যক ধারণা, ধৈয্য আর মনকে যে কোনও পরিস্থিতিতে শান্ত রাখা একজনকে অনেক বেশি সুস্থ রাখে। আর এই স্বাস্থ্য সচেতনতাই সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার লড়াই শুরু করল আত্রেয়ী।

নিজের সেন্টার খোলার পর তাঁর প্রথম ক্লায়েন্টের ওজন মাত্র দুমাসে প্রায় ১২ কেজি কমিয়ে দেয় আত্রেয়ী। তাঁর এই সাফল্য মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি। মাত্র এক বছরের মধ্যে আত্রেয়ীর ক্লায়েন্ট সংখ্যা একশো ছাড়িয়ে যায়। যাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন মহিলা। বর্তমানে পুরুষ, মহিলা নির্বিশেষে রিভাইস ডায়েটের ক্লায়েন্ট সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। মাসে এক হাজার দুশো টাকায় আত্রেয়ীর এই পরিষেবা দ্রুত জনপ্রিয়তার শিখর ছুঁয়েছে মাত্র কয়েক বছরেই। শুধু ওজন কমানোই নয়, আত্রেয়ী এখন দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসাও শুরু করেছে। অদূর ভবিষ্যতে ক্লায়েন্ট সংখ্যা আশি হাজার ছোঁয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে আত্রেয়ী। দুবার একই পায়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে একসময়ে চলাফেরার ক্ষমতা হারানো একটি মেয়ে শুধু মনোবল, সৃজনশীল ভাবনা আর ইচ্ছাশক্তির জোরে যে সাফল্যের শিখর ছুঁতে পারে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হয়ে রইল আত্রেয়ী নিহারচন্দ্রা।