জিয়াগঞ্জে সবিতার হাত ধরে দাঁড়ালেন ১,২০০ মহিলা

জিয়াগঞ্জে সবিতার হাত ধরে দাঁড়ালেন ১,২০০ মহিলা

Saturday March 12, 2016,

2 min Read

মুক্তির স্বাদ পেয়েছেন ওরা। ওরা বলতে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের প্রায় বারোশো মহিলা। কেউ তাঁত বুনছেন। কেউ কাঁথা স্টিচের কাজ করছেন। আমুইপাড়ার সমাজ কল্যাণ মহিলা উন্নয়ন কেন্দ্রে এভাবেই কাজ করেন ওরা। ঘরের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরের পৃথিবীতে যারা নিজেদের কথা জানাচ্ছেন এভাবেই।

image


বিভাজন তো বরাবরই ছিল। ঘরের কাজ মেয়েদের আর বাইরের জগৎটা ছেলেদের। ফলে পরিবারের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুরোদ দেখাতো পুরুষরা। নারী নিপীড়নের অধিকারও আপসেই জন্মে যেত। আর ঘরের চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে কাজ করার কথা ভাবতেই পারতেন না জিয়াগঞ্জের আমুইপাড়ার মেয়েরা। জীবনটা বদলে গেল এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সমাজ কল্যাণ মহিলা উন্নয়ন কেন্দ্রের দৌলতে।

গ্রামের মহিলাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে পরিবারিক বাধা নিষেধের দেওয়াল টপকে নানা হাতের কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল ওই সংস্থা। প্রশিক্ষণ দিতে গিয়েই বোঝা গিয়েছিল কত সুপ্ত প্রতিভা বাড়ির চৌহদ্দিতে ঠোক্কর খাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাঁদের প্রায় সকলেই এখন স্বনির্ভর। সূঁচ-সুতোর শিল্পরেখায় খুঁজে পেয়েছেন দাঁড়াবার জমি। তাঁত, কাঁথার কারুকথায় যারা গার্হস্থ্যের গণ্ডি পেরোচ্ছেন রোজ। এখন এটাই তাঁদের দিশারি। এটাই তাঁদের জগৎ।

‘সংস্থার কর্মী সবাই মহিলা। তাঁদেরই ভাবনা, তাঁদেরই উদ্যোগ। হস্তশিল্পের বিভিন্ন মেলাতে সংস্থারই তৈরি কাজ যায়। চাহিদা আছে। তাই বিক্রিবাট্টাও বেশ লাভজনক’,বলছিলেন সংস্থার প্রধান সবিতা চক্রবর্তী, যার হাত ধরে এই সংস্থার উত্থান। পথটা অবশ্য খুব একটা সরল ছিল না। ‘ছোটবেলা থেকেই আশপাশের ভাবগতিক দেখে মনে হত সংসারের রান্নাবান্না, সন্তানদের দেখভালের অলিখিত দায় যেন শুধু মহিলাদের। তখন থেকই ভাবতাম এই নিয়ম বদলাতে হবে। পাশে যাদের পেয়েছিলাম তাদের নিয়ে আবার সমাজের নানা আপত্তি। ব্রাহ্মন পরিবারের মেয়ে হয়ে ওদের সঙ্গে ওঠাবসা মেনে নিতে পারতেন না পড়শিরা। দমে যাইনি। আমার সঙ্গিসাথীরাও আশা ছাড়েনি। আজ আমাদের সংস্থা সরকারি সাহায্য পায়। সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আমরা প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর এখানেও কাজ করতে পারে, অথবা বাড়ি বসে আয়ের পথ করে নিতে পারে। লোনের প্রয়োজন হলে তার জন্যও সাহায্য করি আমরা’, এক বুক আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছিলেন সবিতাদেবী।

আর যাদের জন্য এত কিছু সেই দুর্গা, নমিতা, পূর্ণিমারা কী বলছেন? ‘হাতে পয়সা আসছে। ছোটখাটো প্রয়োজনে স্বামীর কাছে তো আর হাত পাততেই হয় না, বরং বাড়তি রোজগারে সংসারে সুরাহা হয়েছে’। গোটা গ্রামটার চেহারাই যেন পালটে গিয়েছে। স্বামীর রোজগারের আশায় প্রতিদিন বসে থেকে থেকে যে বাড়িতে উনুন জ্বলত না, কোনও দিন আধপেটা, কোনও দিন না খেয়েই দিন কাটত সেই সব বাড়িতে এখন নিশ্চিন্ত দিনযাপন। নুন আনতে যেখানে পান্তা ফুরোত সেখানে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো বিলাসিতা ছিল। ইচ্ছে থাকলেও সান্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারতেন না অনেক বাবা মা। স্বপ্নগুলো ভাঙা ঘরের কোণে মরতে বসেছিল। সেই সব দিন এখন অতীত। স্বামীর সঙ্গে সমান তালে সংসারের জোয়াল টেনে চলেছেন স্বনির্ভর এই মহিলারা। পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বলছেন .... অসম্মান করে আর পায়ের তলায় নয়। অতি সম্মান দেখিয়ে মাথায় তুলে নয়। বরং 'পার্শে রাখো মোরে সম্পদে বিপদে...।'